মো: আবদুল আলীম: ঢাকার যাত্রাবাড়িতে অবস্থিত শহীদ জিয়া গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফাতেমা রশিদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন যাবত একের পর এক অভিযোগ থাকা সত্বেও তিনি বহাল তবিয়তে আছেন। তার বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জেলা শিক্ষা অফিসার, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, ঢাকা এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা), ঢাকা বরাবর অসংখ্য অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ভুক্তভোগী, একাধিক শিক্ষক, অভিভাবক এবং এলাকার ক্ষুদ্ধ ব্যক্তিদের কাছ থেকে জানা গেছে অধ্যক্ষ ফাতেমা রশিদ সকল তদন্ত কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে বড় ধরনের অপরাধ ও অনিয়ম করে বর্তমান পদে বহাল রয়েছেন এবং সকলের ওপর অন্যায়ভাবে ছড়ি ঘুড়াচ্ছেন। তার অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে এ পর্যন্ত অনেকগুলো দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে দায়ের করা ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায় তিনি নিন্ম বর্ণিত অপরাধগুলো অবাধে করে যাচ্ছেন:
১। তার নিয়োগ প্রক্রিয়াটি ছিল অবৈধ। তিনি অধ্যক্ষ হিসেবে ২৫-১১-২০১৬ ইং যোগদান করেন মর্মে নথি থেকে জানা গেছে। উক্ত তারিখটি ছিল শুক্রবার। একটি বন্ধের দিনে তিনি বিভাবে এতবড় একটি পদে যোগদান করলেন তা রহস্যময়। এই ব্যপারে সঠিক তদন্ত করলে সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যাবে।
২। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির জন্য ৫ লাখ টাকা দিয়ে গাড়ি কিনে ১৬ লাখ টাকা স্কুল কাম কলেজ ফান্ড থেকে তুলে নিয়েছেন অথচ গাড়ি ক্রয়ের ভাউচার অদ্য পর্যন্ত জমা দেন নাই। গাড়িটি কিছুদিন ব্যবহার করার পর তা শিক্ষা প্রতিষ্টানের ভেতরে পড়ে থাকে। এরপর তিনি আরও একটি গাড়ি ক্রয় করেন একই পরিমান টাকা দিয়ে। গাড়িতে শিক্ষা প্রতিষ্টানের স্টিকার ব্যবহার করেন। এব্যপারে সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন শিক্ষক, অভিভাবক, এলাকাবাসী সকলেই।
৩। শিক্ষা প্রতিষ্ঠনটির গা ঘেঁষে চারটি দোকান নির্মান করেছেন অনিয়মিতভাবে। নির্মানের খরচ নিয়েও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ৪। সিনিয়র শিক্ষকের নাম ফ্লুয়িড দিয়ে মুছে জুনিয়র শিক্ষককে টাকার বিনিময়ে এমপিওভুক্ত করেছেন। ৫। তিনি একাধারে অধ্যক্ষ হিসেবে এবং ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে বেতন তুলছেন দীর্ঘদিন যাবত। অথচ তিনি ধর্মীয় বিষয়ে কোনদিন ক্লাস নেন না।
৬। তিনি শিক্ষা প্রতিষ্টানটির অনেক কাগজে বুলবুল মির্জা নামক ব্যক্তিকে অধ্যক্ষ বানিয়ে স্বাক্ষর করে উদ্দেশ্য হাসিল করেছেন। অথচ বুলবুল মির্জা এক দিনের জন্যও অধ্যক্ষ বা সহকারী অধ্যক্ষ পদে ছিলেন না। তার প্রমাণ হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সকল কাগজপত্রে ফাতেমা রশিদের স্বাক্ষর রয়েছে যা তদন্ত করলে প্রমাণিত হবে।
৭। কোন ছাত্রী একদিন অনুপস্থিত থাকলে ৫০ টাকা জরিমানা নেয়া হয়। এভাবে দীর্ঘ আট বছর জরিমানার টাকা আদায় করে তা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে অর্থাৎ ব্যাংক একাউন্টে জমা না করে ফাতেমা রশিদ আত্মসাৎ করেছেন। এভাবে প্রায় আট লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ থেকে জানা গেছে।
৮। শিক্ষা প্রতিষ্টানের ছাদের ওপর মোবাইল ফোনের বিশাল আকারের টাওয়ার ছিল। উক্ত টাওয়ার দোলাইরপাড়ে অবস্থিত মহানগর রি-রোলিং মিল এর কাছে ফাতেমা রশিদ বিক্রি করে সকল টাকা আত্মসাৎ করেন। ৯। শিক্ষা প্রতিষ্টানের নির্মান কাজে আনা ইট, বালু, টিন ও সিমেন্ট তিনি যাত্রাবাড়িতে তার নিজ বাড়িতে নিয়ে বাড়ি নির্মান করেছেন।
১০। তার অপরাধের প্রতিবাদ করতে গিয়ে এ পর্যন্ত অনেক শিক্ষক তার রোষানলে পড়ে বরখাস্ত অবস্থায় আছেন এবং প্রায় দুই বছর যাবত বেতন পাচ্ছেন না। শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে অনেক বরখাস্তকৃত শিক্ষককে পূনর্বহাল করার আদেশ দিলেও সেই আদেশ মানছেন না ফাতেমা রশিদ।
১১। সপ্তাহে দুই দিনের বেশি তিনি শিক্ষা প্রতিষ্টনে আসেন না। শিক্ষক, অভিভাবক, ছাত্রী ও এলাকাবাসী সকলের সাথে তিনি অসৌজন্যমূলক আচরন করেন।
১২। ফাতেমা রশিদ সর্বপ্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির স্কুল শাখায় যোগদানের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে গলা টিপে হত্যা করছেন। ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে এক সময় ছাত্রী সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ছিল। অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের কারণে ছাত্রী সংখ্যা দিনের পর দিন কমে আসছে।
১৩। তার মর্জি ও নির্দেশমত কাজ না করলে উক্ত শিক্ষককে হয়রানি করার একটি কায়দা অবলম্বন করেন। কায়দাটি হচ্ছে একজন শিক্ষার্থীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ও চাপ দিয়ে উক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি ঠুনকো লিখিত অভিযোগ ফাতেমা রশিদের কাছে দায়ের করতে বাধ্য করেন। তারপর উক্ত ঠুনকো অভিযোগের ভিত্তিতে উক্ত শিক্ষককে বরখাস্ত করেন যা তদন্ত করলে প্রমাণিত হবে।
১৪। শিক্ষা জীবনে একটি তৃতীয় বিভাগ থাকলে কোন শিক্ষক অধ্যক্ষ পদে থাকতে পারেন না। অথচ ফাতেমা রশিদ ১৯৮৩ সনে এসএসসি পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগ পেয়ে অবাধে অধ্যক্ষ পদ দখল করে আছেন। এলাকা সূত্রে জানা গেছে তার সকল অপরাধ ও অপকর্মে সহযোগিতা করেছেন শিক্ষা প্রতিষ্টানটির গভর্ণিং বডির সভাপতি নজরূল।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সূত্রে জানা গেছে সভাপতি নজরুল ২০০৮ সন থেকে সভাপতির পদ দখল করে বহাল তবিয়তে আছেন। অথচ তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অবহিত করেন ২০১০ সাল থেকে তিনি এই পদে আছেন।
১৫। অধ্যক্ষ ফাতেমা রশিদ বিশাল সম্পদের মালিক যা তার আয়ের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। যাত্রাবাড়িতে বাড়ি, পুরনো ঢাকার দয়াগঞ্জে ফ্ল্যাট, বেইলি রোডে ফ্ল্যাট, গুলিস্তান আন্ডারগ্রাউন্ডে বেশ কয়েকটি দোকান, যাত্রাবাড়ি হতে মিরপুর রুটে চলাচলকারী ট্রান্স সিলভা পরিবহনে তার শেয়ার আছে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করলে তার বিশালকারের সম্পদের সন্ধান পাওয়া যাবে বলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এই ব্যপারে অপরাধ বিচিত্রার তদন্ত অব্যহত আছে। আগামি সংখ্যায় আরও বিস্তারিত থাকছে। (চলবে)