মোহাম্মদ মোশাররাফ হোছাইন খানঃ আইন-বিধি বহির্ভূতভাবে বছরের পর বছর বাকীতে বেসরকারি নন লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোকে রি-ইন্সুরেন্স সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে শতভাগ রাস্ট্রায়ত্ত্ব বীমা কোম্পানি সাধারণ বীমা কর্পোরেশন। প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্হার দূর্বলতার কারনে দেশীয় বেসরকারী ৪১টি নন-লাইফ বীমা কোম্পানির কাছে পাওনা রয়েছে প্রায় ৮৮৩ কোটি টাকা। সিএজি কতৃক প্রকাশিত অডিট আপত্তি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। “রাস্ট্রীয় একমাত্র রি-ইন্সুরেন্সকারী প্রতিষ্ঠান সাবীকের এ ধরনের বিধি বহির্ভূত কর্মকান্ড ও অনিয়মের কারনে একদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব অপরদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পুরো বীমা খাত”, এমন মন্তব্য করেছেন বীমাখাত বিশেষজ্ঞরা।
সম্প্রতি বাংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) কতৃক সাধারন বীমা কর্পোরেশন এর উপর করা একটি কমপ্লায়েন্স অডিট রিপোর্ট প্রকাশিত হয় । এই রিপোর্টে সাধারন বীমা কর্পোরেশনের বিগত দুই বছরের (২০২০-২০২১) আর্থিক হিসাব সংক্রান্ত গুরুতর আর্থিক অনিয়মগুলো তুলে ধরা হয়েছে। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ থেকে ২৮ এপ্রিল ২০২২ ইং পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অডিট কার্যাক্রম সম্পাদন করা হয়। সাবীকের অনিয়ম সংক্রান্ত অডিট আপত্তির আইনানুগ অফিসিয়াল সকল ফর্মালিটিজ শেষে ৩১ মার্চ ২০২৪ ইং বাংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল কতৃক স্বাক্ষরিত হয়। এ অডিট আপত্তি সমূহে সাতটি অনুচ্ছেদে দুই বছরে (২০২০ ও ২০২১) ২২৬ টাকার গুরুতর আর্থিক অনিয়ম হিসেবে জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের জন্য মহামান্য রাস্ট্রপতির নিকট পেশ করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সাবীকের অনিয়মের এ তথ্য ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে বাজেট অধিবেশন জাতীয় সংসদে গুরুতর অর্থিক অনিয়ম হিসেবেও উপস্থাপন করেন।
অডিট রিপোর্ট সূত্রে জানা যায়, বিগত দুই বছর (২০২০ ও ২০২১) এ ৪০টি নন-লাইফ বীমা কোম্পানির কাছে সাবিক রি-ইন্সুরেন্স প্রিমিয়াম বাবদ বকেয়া পাওনা হয়েছে ২৩৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। তবে পূর্ব বকেয়া সহ মোট ৪১টি কোম্পানি থেকে রি-ইন্সুরেন্স প্রিমিয়াম বাবদ বকেয়া পাওনা রয়েছে ৮৮৩ টাকা ।
সংশ্লিষ্ট অপর একটি সূত্রে আরো জানিয়েছে, ২০২২ ও ২০২৩ সালের বকেয়া হিসাব নগদায়ন করা হলে রি-ইন্সুরেন্স প্রিমিয়াম বাবদ বকেয়ার পরিমাণ আরও অনেক বেশি হবে।
অডিট আপত্তি তে বলা হয়েছে, ৪১ টি নন লাইফ বীমা কোম্পানির কাছে এ বিশাল অংকের টাকা বকেয়া থাকার পরও আইন ও বিধি লংঘন করে সাবিক এ সকল কোম্পানির রি-ইন্সুরেন্স কার্য়ক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এতে প্রতিষ্ঠানটি যেমন আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে,
সংশ্লিষ্ট আরেকটি একটি সূত্র জানিয়েছে-বছরের পর বছর এ ধরনের বিধি বহির্ভূত সুবিধা দিয়ে সাবিক, সরকার, বীমা গ্রাহক, সর্বোপরি বীমা খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপর্যস্ত করলেও প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট কিছু কর্মকর্তা লাভবান হচ্ছে। তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে জ্যামিতিক ও গাণিতিক উভয় হারে।
সুত্রটি আরো জানিয়েছে, “তারা প্রতিষ্ঠানের আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে সরকারের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, নিয়ন্ত্রক সংস্হাকে বৃদ্ধাংগুলি প্রদর্শন করে অদৃশ্য শক্তির বলে বছরের পর বছরে এ কাজ চালিয়ে যেতে পারছে । আর এ কারনে বেসরকারী নন লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো একদিকে বকেয়া ব্যবসার সুযোগ পাচ্ছে, অপরদিকে প্রতিযোগীতা মূলকভাবে অবৈধভাবে কমিশন প্রথা চালিয়ে যেতে পারছে”।
“বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠানটির উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এ জাতীয় পুন্জিভূত সমস্যা সমূহ সমাধানে উদ্যোগী হলেও অনিয়মে লিপ্ত কতিপয় কর্মকর্তা ও অদৃশ্য শক্তির হস্তক্ষেপের বলে বেশীদূর অগ্রসর হতে পারেন না” বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।
বীমা খাতকে ব্যাপকভাবে সংস্কারে যখন কেউ উদ্যোগী হয়েছে তখন তাকে এ খাত থেকে চলে যেতে হয়েছে বলেও একটি সূত্র জানিয়েছে।সূত্র টি আরো জানিয়েছে, এ খাতে কাউকে টিকে থাকতে হলে এখানকার প্রভাবশালীদের মর্জি মাফিকই পরিচালিত হয়েই টিকে থাকতে হয়।
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) কতৃক সাধারন বীমা কর্পোরেশন এর উপর করা কমপ্লায়েন্স এক অডিট প্রতিবেদন সাধারন বীমা কর্পোরেশনের ২৬২ কোটি টাকার আর্থিক অনিয়মের আপত্তি তোলা হয়েছে । অডিট রিপোর্ট সূত্রে জানা যায়, শুধুমাত্র ২০২০ ও ২০২১ সালের সাধারন বীমা কর্পোরেশনে বিভিন্ন খাতে অনিয়ম হয়েছে ২৬২ কোটি টাকা। এর মধ্যে রি-ইন্সুরেন্স সংক্রান্ত অনুচ্ছেদে সবচেয়ে বেশী পরিমাণের অনিয়ম নির্ধারণ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ২০২০ ও ২০২১ সালে (২ বছরে) ৪১ টি বীমা কোম্পানি থেকে সাবিকের পাওনা রয়েছে ২৩৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এছাড়া পূর্ব বকেয়া সহ ৪১ টি বেসরকারী নন লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি থেকে সর্বমোট প্রায় ৮৮৩ কোটি টাকা রি-ইন্সুরেন্স প্রিমিয়াম বাবদ পাওনা রয়েছে। তবে ২০২২ ও ২০২৩ এর হিসাব নগদায়ন করা হলে রি-ইন্সুরেন্স বাবদ টাকার অংক আরো অনেক বেশী হবে বলেও জানা গেছে।
সিএজি প্রদত্ত অডিট আপত্তিতে বলা হয়েছে, ২০২১ সাল পর্যন্ত রি-ইন্সুরেন্স প্রিমিয়াম বাবদ সবচেয়ে বেশী অংকের টাকা পাওনা রয়েছ গ্রীন ডেল্টা ইন্সুরেন্স কোম্পানির কাছ থেকে (এ কোম্পানিটি দেশের সর্ব বৃহৎ ও বেসরকারি খাতের প্রাচীন কোম্পানি হিসেবে পরিচিত) । অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে অগ্রণী ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটেড থেকে পাওনা রয়েছে ২,২৯,০৭,০৪৮ এশিয়া ইন্স্যুরেন্স কোঃ লিমিটেড থেকে ২৭,৮৭,৯৮,৮৭ টাকা, এশিয়া প্যাসেফিক জেনা, ইন্স্যুরেন্স কোঃ লিমিটেড থেকে ১৩,৯০,২১,৬২০ টাকা, বি.ডি কোম্পানি ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটেড থেকে ২১,৫২,০০৮ টাকা,বিজিআইসি ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটেড থেকে ২৬,৬৩,৩৭,১৩৬ টাকা, বিডি ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটেড থেকে ১৮,০৪,০৮,৬০৬ টাকা, সেন্ট্রাল ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটে ৯,৩২,৯৬,০৮৪ টাকা, সিটি ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটেড থেকে ৯,৪৪, ৪৪,৬৬,৩৪২ টাকা, কন্টিনেন্টাল ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটেড থেকে ৪৯,৯৮,৮২,৫৬৭ টাকা, ক্রাইস্টেল ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটেড থেকে ৫,৪৮,৬৪,৮৪৫ টাকা, দেশ ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটেড থেকে ১৬,৬৮,৪৭,১০৯ টাকা , ঢাকা ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটেড থেকে ৯,৯৭,৮৫,৪৫১ টাকা, ইস্টার্ণ ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটেড থেকে ১৭,২২,৬৭,৮৯৮ টাকা, ইস্টল্যান্ড ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটেড থেকে ৩১,৫৭,৪৪,১৪৩ টাকা, ফেডারেল ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটেড থেকে ১৯,৯২,৮৬,৬৯৭ টাকা, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স থেকে ১৯,৯২,৮৬,৬৯০ টাকা, গ্লোবাল ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটেড থেকে ৮,০৬,৪৬,৭২৪ টাকা, গ্রীণ ডেল্টা ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটেড থেকে ১১৮,৪৬,৮৯,৮২৮ টাকা, ইসলামী ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটেড ৩৬,৬৪,২৮,৬০৬ টাকা, জনতা ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটেড,৩১,৭৩,২১,০৭৪ টাকা, কর্ণফুলী ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটেড ৬,৫৮,০১,৩৯২ টাকা, মেঘনা ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটেড ৩০,৮৪,৪৯,৪৪০ টাকা, মার্কেন্টাইল ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটেড ২৬,৭২,৫৫,১১২ টাকা, নিটল ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটেড ৮,২৭,৮২,৬৪৪, নর্দার্ণ ইন্দুরেন্স কোঃ লিমিটেড ২৯,২০,২৬,৯০২ টাকা, প্যারামাউন্ট ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটেড ৪,৬৫,৮০,৩৪৪ টাকা, পিপলস ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটেড ৪৫,০৪,৫৩,৮০০ টাকা, ফিনিক্স ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটেড ১,১৫,৩৩,৬৭৮ টাকা, পাইওনিয়ার ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটেড ৩৪,১৬,৮৫,০৭৮ টাকা প্রগতি ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটেড ৫১,৯৭,০২,৩৭২ প্রাইম ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটেড ১৩,৮৩,৭৫,১০০ টাকা, প্রভাতী ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটেড ১৯,৯৬,১৪,৬৫৪ রিলায়েন্স ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটেড ৩১,৬৫,৩৫,৭১১ টাকা, রিপাবলিক ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটেড ২৩,৪১,৫০,৫৯২ টাকা, রূপালী ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটেড ২৫,৬৮,০৮,২০৯ টাকা, সেনা কল্যাণ ইন্সুরেন্স কোঃলিমিটেড, ৫৫,৬৭,৫০৭ টাকা, সাউথ এশিয়া ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটেড ৯৯,২২,৮৮৯ টাকা, স্টান্ডার্ড ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটেড ১০,১৮,৪২,৩৩৩ টাকা, তাকাফুল ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটেড ৮,৭৮,৪৫,৪০৪ টাকা ইউনিয়ন ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটেড ২৯,৪৭,৩১,৮৬৬ টাকা, ইউনাইটড ইন্সুরেন্স কোঃ লিমিটেড ১১,১৫,৩৪,৭২২ টাকা। ৪১ টি কোম্পানি থেকে সর্বমোট পাওনা অংক ৮৮২,৬৩,৫৪,৪১০ টাকা। ২০১৮ ও ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৪০টি কোম্পানির নিকট বকেয়ার পরিমাণ ছিল ৬৪৪,০৪,৫৫,১২১ টাকা। শুধু ২০২০ ও ২০২১ সালে ৪১টি নন লাইফ বীমা কোম্পানির বকেয়ার পরিমাণ ছিলো ২৩৮,৫৮,৯৯,২৮৯ টাকা।
বাংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) নিয়ন্ত্রণাধীন বানিজ্যিক অডিট অধিদপ্তর প্রণীত সাবিকের রি-ইন্সুরেন্স সংক্রান্ত অডিট অনুচ্ছেদের বিবরনে বলা হয়েছে , সাধারণ বীমা কর্পোরেশন, প্রধান কার্যালয় এর পুনঃবীমা শাখার প্রিমিয়াম আদায় ও বেসরকারি কোম্পানির নিকট পাওনা নথি পর্যালোচনা করেন। এতে তারা দেখতে পান বছরের ১ম কোয়ার্টার (মার্চ হতে জুন) শুরুর পূর্বে ৩০ মার্চ এর মধ্যে বিগত বছরদ্বয়ের ব্যবসায়িক পারফরমেন্স/পরিসংখ্যান যাচাই করে বীমা কোম্পানির সাথে উক্ত ব্যবসা সংক্রান্ত ভিন্ন ভিন্ন পুনঃবীমা চুক্তি সম্পাদন করা হয়। পুনঃবীমার চুক্তির শর্ত মোতাবেক পাওনা প্রিমিয়াম আদায় চুক্তির মেয়াদের মধ্যে আদায়যোগ্য। কিন্তু চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও উক্ত মেয়াদের প্রিমিয়াম আদায় না করে সংশ্লিষ্ট ইন্সুরেন্স কোম্পানির সাথে নতুন করে চুক্তি সম্পাদন করা হয়। এ বিষয়ে ২০১৮ ও ২০১৯ পঞ্জিকা বছরে ৪০টি কোম্পানির নিকট বকেয়ার পরিমাণ ছিল ৬৪৪,০৪,৫৫,১২১ টাকা। যা বাণিজ্যিক অডিট কর্তৃক ২০১৯ পঞ্জিকা বছরে আপত্তি উত্থাপন করা হয়। ৩১ডিসেম্ব ২০২১ খ্রি. তারিখে ৪১টি কোম্পানির নিকট চুক্তি মোতাবেক বকেয়া প্রিমিয়ামসহ আদায়যোগ্য টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৮২,৬৩,৫৪,৪১০ টাকা। যা ২০১৮ ও ২০১৯ পঞ্জিকা বছরে উত্থাপিত আপত্তি হতে (৮৮২,৬৩,৫৪,৪১০-৬৪৪,০৪,৫৫,১২১) বা ২৩৮,৫৮,৯৯,২৮৯ টাকা বেশী।
এ অনিয়মের কারন হিসেব অডিট অনুচ্ছেদটিতে বলা হয়েছে, “বীমা আইন ২০১০ এর ক্রমিক ১৮(১) লঙ্ঘন। উক্ত ধারা মোতাবেক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বীমা প্রিমিয়াম নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে আদায় করতে হবে। আলোচ্যক্ষেত্রে উক্ত বকেয়া প্রিমিয়াম আদায় না করায় ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা উক্ত ধারার পরিপন্থী”।
এছাড়া চুক্তির শর্ত নং “C” এর লঙ্ঘন। Treaty Warranty “C” তে উল্লেখ রয়েছে “Any risk written above limit shall have to be notified to SBC prior to its acceptance and Facultative coverer obtained on terms and conditions to be mutually agreed upon”। ট্রিটি অনুযায়ী বেসরকারি কোম্পানিসমূহের সাথে Surplus Coverage বাধ্যতামূলক এবং উহার প্রেক্ষিতে প্রিমিয়াম আদায়যোগ্য।
অডিট কমিটি নিরিক্ষাকালীন সময়ে এ অনিয়মের বিষয়ে সাবীকের কাছে লিখিতভাবে জানতে চান। সাবীক কতৃক প্রদত্ত বক্তব্য আপত্তি নিস্পত্তির জন্য সহায়ক নয় বলে নিরীক্ষা মন্তব্য প্রদান করে। কারন হিসেবে অডিট কমিটি উল্লেখ করেন, প্রিমিয়াম বকেয়া রেখে পুনঃবীমা পলিসি ইস্যু করা যায় না বিধায় বেসরকারি কোম্পানিসমূহের নিকট হতে পাওনা প্রিমিয়াম আদায় না হওয়ায় কর্পোরেশন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বিষয়টিকে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম (SFI) হিসেবে উল্লেখ করে ০৬ জুলাই ২০২২ খ্রি. তারিখে নিরীক্ষিত (সাবীক) প্রতিষ্ঠান প্রধান বরাবর AIR জারি করেন এবং একই সাথে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবকে অবহিত করা হয়। নির্দিষ্ট সময়ে জবাব না পেয়ে অডিট প্রতিষ্ঠান পরবর্তীতে ০১ আগষ্ট ২০২২ খ্রি. তারিখে তাগিদপত্র দেয় । জবাব না পাওয়ায় ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ খ্রি. তারিখে প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী বরাবর আধা সরকারি পত্র দেয়া হলেও কোনো জবাব দেয় নি। অডিট প্রতিষ্ঠান (সিএজি) নিরীক্ষিত প্রতিষ্ঠানের জবাব না পেয়ে রি-ইন্সুরেন্স সংক্রান্তসহ অন্যান্য অনুচ্ছেদগুলোকে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম হিসেবে চিহ্নিত করে মহামান্য রাস্ট্রপতি বরাবরে পেশ করতে ফাইনালাইজ করে। ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী প্রতিবেদটি গুরুতর আর্থিক অনিয়ম হিসেবে পেশ করেন।
এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে কয়েকজন প্রবীণ বীমাবিদ জানিয়েছেন, বীমা খাতটি বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে একটি ব্যপক সম্ভাবনাময় আর্থিক খাত।এ খাতকে কঠোর মনিটরিং ব্যবস্হার মধ্যে আনা গেলে দেশের অর্থনীতিতে ব্যপক ভূমিকা রাখতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সাবীকের ক্লেইম ও রি-ইন্সুরেন্স এ দুইটি বিষয় যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে বীমা খাতে এখন যে প্রতিযোগীতা মূলক অবৈধ কমিশন বানিজ্য চলমান রয়েছে তা স্হায়ীভাবে বন্ধ করা সম্ভব হবে। তারা আরো বলেন, বাধ ছেড়ে দিয়ে জলাধার ভর্তি যেমন অসম্ভব, তেমনি এ দুইটি বিষয় নিয়ন্ত্রণ না করে বীমা খাতে স্বচ্ছতায় নিয়ে আসাও অসম্ভব।