এস এম পান্না- আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আর্থিক লেনদেন ও অর্থের নিরাপত্তা হিসাবে ব্যাংক, বীমা অফিস ও ইন্সুরেন্স, সমবায় সমিতি এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর নির্ভর করে থাকি। আর সেই নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠানই যদি সাধারণ মানুষের জমানো টাকা পয়সা আত্মসাৎ করে, তাহলে কি আর বলার থাকে। বিশেষ করে আমাদের আশে পাশে ব্যাঙ এর ছাতার মত বিভিন্ন নামে ইন্সুরেন্স ও সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আর এই সকল ইন্সুরেন্স ও সমবায় প্রতিষ্ঠান গুলো সাধারণ মানুষকে সরলতার ফাঁদে ফেলে বোকা বানিয়ে বিভিন্ন কৌশলে মানুষের কাছ থেকে নগদ টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
আমাদের দেশে ইন্স্যুরেন্স ও সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠানগুলো কোন রকমে একবার লাইসেন্স ও নিবন্ধন করতে পারলেই হলো। আর এ লাইসেন্স নং ব্যবহার করে সাধারন মানুষকে বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে নগদ টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কেননা ইতোমধ্যে উদাহরণ স্বরূপ- প্রান্তিক সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ, যাহার রেজি. নং- ৭৯৯/১২। ইহা আজমপুর কাঁচাবাজার জামতলা, দক্ষিণখান, ঢাকা তে অবস্থিত। আর এই প্রতিষ্ঠানটিকে সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে সঞ্চয় এর উদ্দেশ্যে নগদ টাকা রেখেছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের মালিকগন সাধারণ মানুষের গচ্ছিত লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে পালিয়ে যায়। এমন অনেক অসৎ ও দুর্নীতির সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ রয়েছে। বিশেষ করে সাধারণ মানুষ আজ নিরুপায়, কেননা ইন্স্যুরেন্স ও সমবায় প্রতিষ্ঠানগুলো নানা কৌশল করে জনগনের নগদ টাকা আত্মসাৎ করে থাকে। এরপর আবার কোনো কারনে কেউ যদি কোন প্রতিষ্ঠান এর কাছ থেকে প্রতারিত হয়, আর প্রতারিত হওয়ার পরে প্রতিষ্ঠানের কারো সাথে যোগাযোগের কোনো উপায় থাকে না। কারণ ইন্স্যুরেন্স ও সমিতি প্রতিষ্ঠান গুলো সাধারণ মানুষ থেকে নগদ আর্থিক লেনদেন এর জন্য যে বই ব্যবহার করে থাকে এবং বইয়ের আর্থিক লেনদেন এর জন্য যে টাকার পরিমান লেখা হয় সাধারণ গ্রাহক বইয়ের ভিতর টাকার পরিমান দেখে সান্তনা পায়/নেয়। আসলে এই ধরনের বই এর ব্যবহারে কোন প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্রতারিত হলে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নিতে গেলে তেমন কোনো সহযোগীতা পায় না। কেননা আইনগতভাবে লেনদেন এর জন্য সরকারী ষ্ট্যাম্প ও চেক নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তিবর্গ এর মাধ্যমে লেনদেন হলে, ইহা দ্বারা আইনগত ভাবে নগদ টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়। আর ইন্স্যুরেন্স ও সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠান যারা পরিচালনা করে তারা সব কিছু জেনেশুনে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে সরকার ও দেশকে আর্থিকভাবে ঠকিয়ে এবং সমবায় অধিদপ্তরের কিছু অসৎ লোকের সহযোগীতায় ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে। কেননা এইসব ইন্স্যুরেন্স ও সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠান গুলোকে সমবায় অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও প্রশাসন ঠিকমত নজরদারী করলে হয়তো তারা এই সকল অনয়িম ও দুর্নীতি করতে পারতো না। ইন্স্যুরেন্স ও সমবায় প্রতিষ্ঠানগুলোর যে অনিয়মগুলো চোখে পড়ে যেমন- * সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠানের অডিট সংক্রান্ত বিষয় * প্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক আয়-ব্যয় এর পরিমান * প্রতিষ্ঠানের মূল মালিক/মালিকগণের জামানতের পরিমান * বাৎসরিক মূলধন এর পরিমান * মাঠ পর্যায়ে টাকার পরিমান * ঋণ এর হিসাব পরিমান * প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড ব্যবহার হচ্ছে কিনা * কার্যকরী কমিটি পরিচালনা সঠিক কিনা এমন অনেক রকমের বিষয়গুলো যদি সমবায় অধিদপ্তর ও প্রশাসন খেয়াল রাখতো তাহলে সাধারণ মানুষের এই ভোগান্তি হতো না। আর কিছু অসৎ ইন্স্যুরেন্স ও সমবায় প্রতিষ্ঠান তারা শুধু নাম ব্যবহার করে, আড়ালে লক্ষ লক্ষ টাকা অসৎ উপায়ে মোটা অঙ্কের সুদের ব্যবসা পচিালনা করে আসছে। এই ধরনের অপকর্মের কারণে দেশে ও জনগনের ক্ষতি হচ্ছে। আরো কিছু বিষয় দেখা যায় যে, ইন্স্যুরেন্স প্রতিষ্ঠানগুলো যখন কাউকে ঋণ প্রদান করে তখন তারা শক্তভাবে ডকুমেন্ট বা প্রমাণাদীর মাধ্যমে যেমন- ষ্ট্যাম্প ও খালি চেক ও নানা শর্তসাপেক্ষে ঋণ প্রদান করে থাকে। আর এর বিপরীতে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সঞ্চয় এর টাকা উত্তোলণ এর জন্য জমাকৃত একটি সাধারণ বই ব্যবহার করে থাকে। আর ইন্স্যুরেন্স ও সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠানগুলো যে সকল ডকুমেন্টস বা প্রমাণাদী হিসেবে যে বই বা তাদের মনগড়া মানুষকে সান্তনা দেওয়ার জন্য যে সকল চেক বা অন্যান্য কাগজপত্র তৈরী করে তা শুধু নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানেই কাজে লাগে।
ইহা দ্বারা ব্যাংক, বীমা বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে বা আইনগতভাবে কোন ব্যবস্থা নিতে গেলে ইহা দ্বারা কোন ফল পাওয়া যায় না। আর এইসব বিষয়ে জেনেশুনে প্রতিষ্ঠানগুলো নানা ফাঁক জোক বের করে মানুষকে বোকা বানিয়ে যাচ্ছে। আর এই সকল অনিয়মকারী প্রতিষ্ঠানের ফাঁদে পড়ে সাধারণ মানুষ আইনের আশ্রয় নিতে গেলে অনিয়মকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নানা অযুহাত দেখিয়ে পার পেয়ে যায়। যেমন- কমিটি পরিচালনা বিষয়ে উত্তর পাওয়া যায় না, সভাপতি→ সেক্রেটারী→ কোষাধ্যক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করে, আবার কেউ কেউ বলে আমি চাকুরী করি, এই ভাবে নানা উপায়ে অযুহাত দেখিয়ে পার পেয়ে যায়। ইন্স্যুরেন্স ও সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠান গুলো যে প্রমাণাদী দিয়ে থাকে, তা দ্বারা সাধারণ মানুষ টাকা উদ্ধার করতে পারেনা। সমবায় সমিতির অধিদপ্তরের কার্যক্রমে যারা নিয়োজিত তারা যদি সকল ইন্সুরেন্স ও সমবায় প্রতিষ্ঠান গুলো সঠিক নিয়ন নীতি অনুযায়ী অডিট ও অন্যান্য বিষয়ে যদি খেয়াল রাখে এবং সেইসাথে প্রশাসন ঠিকমত নজরদারী করে, এবং সরকার যদি এই বিষয়ে খেয়াল রাখে তাহলে এই ধরনের অনিয়ম হতো না। আর সাধারণ মানুষ এই সকল প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতারিতও হতো না। আর এর ফলে সঠিকভাবে ও ভ্যাট ও কর আদায় হতো এবং দেশ ও সরকার লাভবান হতো।
আশা রাখি আমাদের এই বিষয়গুলো দেখার পর হয়তো কোন ইন্স্যুরেন্স বা সমবায় প্রতিষ্ঠানগুলো এই ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িত হবে না এবং সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারে। তাই এই বিষয়ের উপর আমাদের সকলের সচেতন হতে হবে। এবং সেই সাথে সমবায় সমিতির অধিদপ্তরের পরিচালনায় যারা নিয়োজিত তাদের সহযোগীতা আমাদের খুবই প্রয়োজন। সেই সাথে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী র্যাব-পুলিশ ও দুর্নীতি দমন কমিশন অধিদপ্তর ও মিডিয়ার সকল শ্রেণির এবং এলাকার বিশেষ প্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষের সহযোগীতা প্রয়োজন। আর সকলের সহযোগীতা পেলে এই সকল ইন্স্যুরেন্স ও সমবায় প্রতিষ্ঠানগুলো নানা অনিয়মন থেকে বের হয়ে আসবে। এবং সাধারণ মানুষের এই সকল প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর আস্থা ফিরে আসবে। এটাই সাধারণ মানুষের একমাত্র ভরসা।