অসুস্থ মেয়রের সামনেই দুই স্ত্রীর ধস্তাধস্তি বিরোধ মেটালেন হাসপাতালের চিকিৎসক

0
666

জামালপুর সরিষাবাড়ির অসুস্থ মেয়র রুকুনুজ্জামান রুকনের পাশে কে থাকবেন- তা নিয়ে হাসপাতালের ভেতর দুই স্ত্রীর মধ্যে হাতাহাতি-ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে রুকনের হাতের স্যালাইন খুলে যায়। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ সময় রুকনের বড় ভাই সাইফুল ইসলাম টুকন এবং অন্য আত্মীয়-স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। কেউ পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেননি। পরে কর্তব্যরত ডাক্তারের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বভাবিক হয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত একাধিক সূত্র শনিবার যুগান্তরকে এসব তথ্য জানিয়েছে। ২৫ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টার দিকে উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের ৬০ নম্বর বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন মেয়র রুকন। ২৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে মৌলবীবাজার থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। ওইদিন রাতে তাকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে নেয়া হয়। পরদিন সকালে অসুস্থ অবস্থায় তাকে নেয়া হয় ঢামেক হাসপাতালে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ওই দিনই বিকালে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এখন তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন আছেন। সূত্র জানায়, মেয়রকে ঢামেক হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়ার সময় ঘটনার সূত্রপাত। কার কাছে ছাড়পত্র দেয়া হবে- এ নিয়ে দুই স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। পরে প্রথম স্ত্রীর জিম্মায় মেয়রকে হস্তান্তর করে ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেখান থেকে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালের ৬ষ্ঠ তলার কেবিনে নেয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তার স্বজনদের কাছে জানতে চান রোগীর সঙ্গে কে থাকবেন? এ সময় প্রথম স্ত্রী কামরুন্নাহার হ্যাপী বলেন, ‘আমি থাকবো।’ তখন দ্বিতীয় স্ত্রী উম্মে হাবিবা মৌসুমী বলেন, ‘আমার স্বামীর সঙ্গে হাসপাতালে আমি থাকবো। অন্য কারও থাকার দরকার নেই।’ এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে কথাকাটাকটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে অসুস্থ মেয়রের সামনেই তা ধস্তাধস্তি ও হাতাহাতিতে রূপ নেয়। এ সময় একজনের হাতের ঝাটকায় মেয়রের শরীরে লাগানো স্যালাইন খুলে যায়। বিষয়টি দেখে কর্তব্যরত ডাক্তার খুব বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। এক পর্যায়ে ডাক্তার সব স্বজনকে কেবিন থেকে বের করে দেন। পরে ওই ডাক্তার মেয়রের কাছে জানতে চান, তার সঙ্গে হাসপাতালে কে থাকলে তিনি স্বস্তি বোধ করবেন? তখন ডাক্তারকে হ্যাপীর নাম বলেন মেয়র। এরপর বাইরে এসে ডাক্তার স্বজনদের জিজ্ঞাসা করেন, আপনাদের মধ্যে হ্যাপী কে? হ্যাপীর পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর ডাক্তার তাকে জানান, রোগী আপনাকে তার সঙ্গে থাকতে বলেছেন। আপনার সঙ্গে আর কে থাকবে তা ঠিক করুন? তখন প্রথম স্ত্রী হ্যাপী জানান, তার সঙ্গে তার ছেলে স্বপ্নীল (১৪) এবং মেয়ে স্মরণী (৭) থাকবে। এরপর পরিস্থিতি শান্ত হলেও বিষয়টি দ্বিতীয় স্ত্রী মৌসুমী (মেয়রের বড় ভাই টুকনের শ্যালিকা) ও তার বড় ভাই টুকন ভালো চোখে দেখেননি বলে সূত্র জানিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে শনিবার মেয়রের বড় স্ত্রী কামরুন্নাহার হ্যাপীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। সন্ধ্যায় তার ফোন রিসিভ করেন একজন পুরুষ। তিনি জানান, তার নাম ইমতিয়াজ। তিনি নিজেকে হ্যাপীর বোনজামাই পরিচয় দিয়ে বলেন, আমি তুলনামূলক দূরের আত্মীয়। তাই এ নিয়ে কিছু বলতে চান না। তিনি আরও জানান, হ্যাপী তার ফোনটি হাসপাতালে রেখে বাসায় চলে গেছেন। তাই তার সঙ্গে এ মুহূর্তে কথা বলা যাচ্ছে না। জানতে চাইলে দ্বিতীয় স্ত্রী উম্মে হাবিবা কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘আপনারা প্রতিদিনই লিখছেন। আরও লিখুন। আমরা কিছু বলতে চাই না। মেয়র সুস্থ হওয়ার পর তিনিই সব বলবেন।’
সূত্র আরও জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই মেয়রের পরিবারে বিরোধ চলছিল। মেয়র রুকনের বড় ভাই টুকনের সঙ্গে হ্যাপীর (বর্তমানে মেয়রের স্ত্রী) প্রেম ছিল। অন্যদিকে রুকনও হ্যাপীকে ভালো বাসতেন। একদিন গভীর রাতে অনেকটা জোর করে হ্যাপীকে বিয়ে করেন রুকন। এ নিয়ে রুকন ও টুকনের মধ্যে চরম বিরোধ দেখা দেয়। প্রায় পাঁচ বছর এক ভাই আরেক ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলতেন না। তাদের মুখ দেখাদেখি অনেকটা বন্ধ ছিল। পরে রুকন ঢাকায় এসে ব্যবসায় সফলতার মুখ দেখলে দুই ভাইয়ের মধ্যে সমঝোতা হয়। তবে ছয় মাস আগে কোটি টাকার কাবিনে মৌসুমীকে বিয়ে করার পেছনে টুকন এবং তার স্ত্রী কলকাঠি নেড়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। অন্যদিকে দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকেই মেয়রের পরিবারে কলহ বাড়তে থাকে। এ কলহের জের ধরেই মেয়র অপহরণ হয়ে থাকতে পারে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

Advertisement
Advertisement

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here