আলুর প্রতি কেজি তিন টাকা, মিলছে না ক্রেতা!

0
757

আলুর কেজি – বাজারে ব্যাপক ধস নামায় ৮৪ কেজি ওজনের এক বস্তা আলু বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৮০ টাকা। সঙ্গে ফ্রি দেওয়া বস্টাটিও। এক কেজি আলুর দাম তিন বা সাড়ে তিন টাকা হলেও কেনার মানুষ মিলছে না বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায়। তাই করা হচ্ছে মাইকিং।

Advertisement

 

আলু বিক্রির জন্য গতকাল শুক্রবার শিবগঞ্জের অভিরামপুর গ্রামে মাইকে প্রচারণা চালান ব্যবসায়ী আজিজার রহমান (৩৮)। তিনি বলেন, ‘আমি ২২০ টাকা দরে গ্র্যানুলা জাতের আলু কিনে তা এভাবে ফেরি করে বিক্রির কৌশল নিয়েছি। এতে করে আমার সব খরচ মিটিয়ে দিন শেষে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা লাভ থাকছে।’মাইকিং শুনে আলু কিনতে আসা কাশিপুর গ্রামের মোতালেব হোসেন (৩৮) বলেন, ‘দাম কম হওয়ায় একটু বেশি পরিমাণে কিনব বলে ভাবছি। বাড়িতে তিনটি গরু আছে। আলুগুলো সেদ্ধ করে গরুকে খাওয়াব।’শিবগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হিমাগারে রাখা আলু এখন আর কেউ কিনতে চাইছে না। তাই মাইকিং করে সেই আলু বিক্রি করা হচ্ছে। এভাবে কম টাকায় আলু পেয়ে অনেকে গরুর ও মাছের খাদ্যের জন্য কিনছেন। শিবগঞ্জের দোপাড়া গ্রামে কৃষক আবদুল আজিজ এই মৌসুমে এক হাজার ৫০০ বস্তা আলু ব্যবসার উদ্দেশে সংরক্ষণ করেন। যার আনুমানিক মূল্য ২২ লাখ ৬৬টি হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু আলু বিক্রি করেছে মাত্র দুই লাখ ৫৬ হাজার টাকা। ওই কৃষকের তহবিল থেকে ২০ লাখ টাকা লাপাত্তা হয়ে গেছে। এই রকম হাজার হাজার কৃষকের একই দশা। বগুড়া কৃষি আঞ্চলিক অফিসের তথ্যে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ কৃষি মৌসুমে উত্তরের চার জেলা বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা, সিরাজগঞ্জে আলুর চাষ হয়েছিল এক লাখ ১৪ হাজার ১৬ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ২৩ লাখ ৫০ হাজার ‍দুই টন। অপরদিকে চলতি মৌসুমে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে ১ লাখ ১০ হাজার ৪১০ হেক্টর জমি। ইতিমধ্যেই চাষ হয়েছে ৪৭ হাজার ৩২৩ হেক্টর জমিতে। আগাম জাতের আলু উত্তোলন হয়েছে ১০০ হেক্টর। উৎপাদন প্রতি হেক্টরে ১৪ টন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৩ মৌসুমে উত্তরাঞ্চলে আলুর ভালো ফলনের পাশাপাশি বছর জুড়েই ভালো দামও ছিল। মৌসুমের শুরুতে তুলনামূলক কম দামে আলু কিনে পরে বেশি দামে বিক্রি করেছে মজুতদাররা। ভালো লাভের ধারাবাহিকতায় গেল মৌসুমেও উৎপাদিত আলুর বেশির ভাগ জমা পড়ে হিমাগারে। এতে আগের মৌসুম শেষ হয়ে নতুন মৌসুম শুরুর আগেই সবাই একযোগে বাজারজাত করতে গিয়ে বিপাকে পড়ে যায়। হঠাৎ করেই আলুর দাম তলানিতে পড়ে যায়। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহম্মদ হাদিউজ্জামান বলেন, ‘গরুকে আলু খাওয়ানোতে কোনো সমস্যা নেই। তবে আলু নির্দিষ্ট পরিমাণে খাওয়াতে হবে।’ বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রতুল চন্দ্র সরকার বলেন, গত মৌসুমে বগুড়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় এক লাখ টন আলু বেশি উৎপাদন হয়েছিল। ফলে বর্তমানে পুরাতন আলুর দাম কমেছে। বর্তমানে নতুন মৌসুমে কৃষকরা আলু লাগাতে শুরু করেছে। হিমাগার থেকে কিছু আলু বীজ হিসেবে বের হয়ে আসবে। তখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হবে বলে তিনি মনে করেন।

Advertisement

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here