জামাল উদ্দিন স্বপন
ঃ- বর্তমান সময়ে দেশের সবচেয়ে বড় সংসদীয় আসন নাঙ্গলকোট ও সদর দক্ষিণ উপজেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-১০ । যার সীমানা কুমিল্লা বার্ড থেকে শুরু করে কুমিল্লা শহর ছুঁড়ে পূর্বে ফেনী জেলার দাগন ভূঁইয়া উপজেলা দক্ষিণে নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত । সীমানার দৈর্ঘ প্রায় ৯০ কিঃমিঃ এর উর্ধে। ১৯৭৯ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চৌদ্দগ্রামের ৬ ও লাকসামের ৫ সহ মোট ১১ অবহেলিত ইউনিয়ন নিয়ে নাঙ্গলকোট থানা প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী সময়ে এটি উপজেলায় রুপান্তরিত হয়। উপজেলা প্রতিষ্ঠা লাভের পর এলাকাটি একটি সংসদীয় নির্বাচনী আসন লাভ করে। যাহা কুমিল্লা-১১ নামে পরিচিত। এ আসন থেকে ১৯৮৬ সনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন ওমর আহমেদ মজুমদার, রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচার সরকার হিসেবে পরিচিত এরশাদ পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেন। ৯০ দিনের মধ্যে বাধ্যগত নির্বাচন দিলে সে নির্বাচনে বৃহৎ কোন রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ না করার ১৯৮৮ নির্বাচনেও ওমর আহমেদ মজুমদার আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন । রাজপথের গনঅভ’্যর্ত্থানে এরশাদের পতন হলে ১৯৯১ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে নির্বাচনে বিএনপি’র মনোনীত প্রার্থী ডা. একেএম কামরুজ্জান এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সনের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া এমপি নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবদুল গফুর ভূঁইয়া এমপি নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের সময় আসন পুনর্বিন্যাসে নাঙ্গলকোটের উপর কালোছায়া নেমে আসে। সেই সময় নাঙ্গলকোটের সাথে কুমিল্লা সদর দক্ষিণের আংশিক যোগ হয়ে কুমিল্লা -১০ নামে পরিচিতি পায়। নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থী মনোনয়নের রশি টানাটানিতে সুযোগ লুফে নেয় আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী কুমিল্লা সদর দক্ষিণ আংশিকের বাগমারা ইউনিয়নের লোটাস কামাল। এখানেই শেষ নহে, ভবিষ্যৎ নির্বাচনে আংশিক নিয়ে ঝুঁকি আছে মনে করে নির্বাচন কমিশনকে ভুল তথ্য দিয়ে আসনটি আবার পুনর্বিন্যাস করে কুমিল্লা সদর দক্ষিনের পুরো উপজেলায়ই নাঙ্গলকোটের সাথে সংযুক্ত করে। ফলে ২০১৪ সালের নির্বাচনে আসনটি হয়ে যায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আসন ! বিতর্কিত নির্বাচনে দেশের কোন রাজনৈতিক দল অংশ গ্রহণ না করার বিনা ভোটে এমপি নির্বাচিত হন আহম মুস্তফা কামাল ওরফে লোটাস কামাল। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ডাঃ আলী আহমেদ মোল্লা প্রার্থী হয়ে পরে বিশেষ (?) দফারফায় প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন।
গত ১০ বৎসর নাঙ্গলকোটের আমজনতা এমপি হারিয়ে এখন হাঁড়ে হাঁড়ে টের পাচ্ছে। জনসাধারণের কষ্ট উপলদ্ধি করে নাঙ্গলকোটের গনমানুষের আস্থার ঠিকানা বিএনপি নেতা সাবেক এমপি আবদুল গফুর ভূঁইয়া নাঙ্গলকোটের সংসদীয় আসন ফিরে পেতে ২০১৩ সালে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। যাহার নং ৭১৩২। মাননীয় হাইকোর্ট গত ২০মার্চর্ মামলার রায়ে নাঙ্গলকোটকে স্বতন্ত্র সংসদীয় আসন ঘোষণা করেন। রায়ের কপি নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হয়েছে। রায়ের খবর পেয়ে নাঙ্গলকোটের আমজনতার মাঝে ফুরফুরে মেজাজ দেখা যাচ্ছে। এবং এ কৃতিত্বের জন্য তারা নাঙ্গলকোটের মুকুটহীন সম্্রাট আবদুল গফুর ভূঁইয়ার ভূয়সীপ্রশংসা করে তার দীর্ঘায়ু কামনা করছেন।
আবার অনেকের মাঝে কিছুটা শঙ্কাও দেখা যাচ্ছে। কারণ রাজনীতির মাফিয়ারা আসন পুনর্বিন্যাসের ফঁন্দিফিকির আঁটছে। মাফিয়ারা চা্েচ্ছ নাঙ্গলকোটের সাথে নবগঠিত উপজেলা লালমাইকে সংযুক্ত করতে। ভৌগলিক সীমানার কারনে নাঙ্গলকোটের নীরিহ আমজনতার উপর ছড়ি ঘুরিয়ে সহজে শাসন এবং শোষণ করতে পারে। তবে আসন রক্ষার্থে নাঙ্গলকোটের জনগণ গফুর ভূঁইয়ার নেতৃত্বে আত্মাহুতি দিতেও প্রস্তুত আছে , এমন আওয়াজও শুনা যাচ্ছে।
এর আগেও গফুর ভূঁইয়া নাঙ্গলকোটের গনমানুষের আস্থার ঠিকানা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি ২০০১ সালে বিএনপি মনোনীত চারদলীয় জোটপ্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পর অনুন্নত এলাকা হিসেবে পরিচিত নাঙ্গলকোটের উন্নয়নকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেন। সংসদ সদস্য দায়িত্বকালে তিনি নাঙ্গলকোট সদরকে পৌরসভা উন্নীত করেন। এককোটি টাকা ব্যয়ে পৌরভবন নির্মিত হয়। প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে অডিটরিয়াম কাম কমিউনিটি সেন্টার নির্মিত হয়। রাস্তাঘাট, পুল কালভার্ট তৈরির পাশাপাশি স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসা, মুক্তব-মসজিদ উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। এছাড়াও কিছু দৃশ্যমান উন্নয়ন এখনও মানুষের মুখে মুখে। যেমন, নাঙ্গলকোট-দৌলখাঁড়- বক্সগঞ্জ সড়ক, ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল। তার পরিকল্পনা ও প্রস্তাবে প্রকল্প ছিল নাঙ্গলকোটে একটি বাস স্টেশন স্থাপন, নাথের পেটুয়া-মানিকমুড়া-বটতলী সড়ক ২৫ফুট চওড়াকরন। বলা যায়, ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত দৃশ্যমান অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু ২০০৯-২০১৭ সাল দৃশমান কোন উন্নয়ন হয়নি। বরং টিআর, কাবিখা, কাবিটা,এডিবি’র অর্থ, খয়রাতি চাউল ও ১%এর টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অহরহ ! তিনি কোন পিএসকে এমপি’র ভূমিকায় ক্ষমতা দেখানোর সুযোগ দেননি। তিনি নাঙ্গলকোটে মদ,জুয়া ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে শক্ত হাতে দমন করে বিশাল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। তার ক্ষমতামলে কোথাও কৃষি মেলার নামে জুয়ার মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। ছাত্রদল এবং যুবদলের কোন নেতাকে মাদক সেবন বা বেচা-কেনা করতে দেখা যায়নি। যাহা বর্তমান সময়ে অহরহ দেখা যাচ্ছে ? সার্বিক বিষয় বিচার বিশ্লেষণ করে নাঙ্গলকোটের জনগণ গফুর ভূঁইয়াকে এখনও তাদের প্রকৃত অভিভাবক মনে করেন।