নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে ১১ দফা প্রস্তাব পেশ করেছে আওয়ামী লীগ। প্রস্তাবে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তায় সেনাবাহিনীকে রাখার পক্ষে মত দেয়া হয়। ইভিএম ব্যবহারে সায় দিলেও সীমানা পুনঃনির্ধারণ না করার বিষয়েও সুপারিশ করা হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে। এছাড়া কোনো মীমাংসিত বিষয়ে কথা বলে অহেতুক বিতর্ক তৈরি না করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এর আগে বিএনপির সঙ্গে সংলাপে সিইসি’র দেয়া প্রশংসাসূচক বক্তব্যের বিষয়ে ব্যাখ্যা পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তবে সিইসি কি ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা গণমাধ্যমের সামনে খোলাসা করেননি তিনি। সোয়া দুই ঘণ্টাব্যাপী সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের বিস্তারিত তুলে ধরেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি জানান, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন এবং ইসি নির্ধারিত ভোটের পরবর্তী সময়ের জন্য প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পুলিশসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর ন্যস্ত থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে কোনো পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ করা যাবে ১৮৯৮ সালের প্রণীত ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৯ থেকে ১৩১ ধারায় এবং সেনা বিধিমালা ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ শিরোনামে সুস্পষ্টভাবে তার উল্লেখ রয়েছে। এর আগে ইসি’র সংলাপে অংশ নিয়ে বিএনপি সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার বা বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে ভোটের মাঠে মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে। সেই সঙ্গে ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে নির্ধারণ করা সীমানায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। সীমানা ইস্যুতে আওয়ামী লীগের প্রস্তাব হচ্ছে- দশম জাতীয় সংসদের সীমানা বহাল রেখেই পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। নতুন করে সীমানা পুনঃনির্ধারণ করা নিয়ে জটিলতার শঙ্কাও করছে ক্ষমতাসীন দল। ওবায়দুল কাদের জানান, সীমানা পুনঃনির্ধারণের বিষয়টি বিশেষ করে আদমশুমারির সঙ্গে সম্পর্কিত। সর্বশেষ ২০১১ সালে আদমশুমারির উপর ভিত্তি করে (যা ২০১৩ সালে প্রকাশিত) ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনের আগে সীমানা পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, নতুন আদমশুমারি ছাড়া পুনরায় সীমানা পুনঃনির্ধারণ কার্যক্রম নিলে বিভিন্ন আইনগত জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। এ অবস্থায় ৩০০ আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণের মতো জটিল কাজ শেষ করতে সময় স্বল্পতার কারণে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে কিনা বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া অত্যাবশ্যক।
২০১৮ সালের শেষদিকে একাদশ সংসদ নির্বাচন ছাড়াও স্থানীয় সরকারের অনেকগুলো নির্বাচনের কথা বিবেচনায় নিয়ে সবদিক ভেবে সিদ্ধান্ত নেয়ার অনুরোধ জানায় আওয়ামী লীগ। এদিকে ইংরেজিতে প্রণীত ‘দ্য রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপল অর্ডার, ১৯৭২’ ও ‘দ্য ডিলিমিটেশন অব কন্সটিটিউয়েন্সিস অর্ডিনেন্স, ১৯৭৬’ এর বাংলা সংস্করণের যে উদ্যোগ নিয়েছে ইসি আওয়ামী লীগ তাদের লিখিত প্রস্তাবে তার প্রশংসা করেছে। আওয়ামী লীগের লিখিত প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, নির্বাচনে অবৈধ অর্থ ও পেশিশক্তির ব্যবহার রোধে নির্বাচনী আইন-বিধির কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিতদের দায়িত্বে অবহেলা ও অপেশাদার আচরণের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার নিয়োগ করতে হবে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে আগ্রহীদের বাছাই করতে হবে। প্রস্তাবে আরো বলা হয়, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা বিধান করতে হবে। ভোটের দিন গণমাধ্যম কর্মীদের নির্বাচনী আইন-বিধি অনুসরণ এবং উপযুক্ত পরিচয়পত্র প্রদান করতে হবে। দলের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের ভোটের তিনদিন আগে এনআইডি ও ছবিসহ ভোটার তালিকা দিতে হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে অন্য চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব সংলাপে উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ২১ সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, এইচ টি ইমাম, ড. মসিউর রহমান, ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, রমেশ চন্দ্র সেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. জমির, মো. রশিদুল আলম. মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপুমনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, এইচ এন আশিকুর রহমান, ড. হাছান মাহমুদ, ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ ও অ্যাডভোকেট এবিএম রিয়াজুল কবির কাওছার।
সিইসি’র সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগের প্রশংসা
আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের উদ্বোধনী বক্তব্যে দলটির ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরেন সিইসি কেএম নূরুল হুদা। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, ইয়ার মোহাম্মদ খান, শামসুল হক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানের কথা তুলে ধরেন সিইসি। কেএম নূরুল হুদা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বর্তমান সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো নিবেদিত নেতার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। ৫২ ভাষা আন্দোলন, ৬৬ ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণ-আন্দোলন, যা ছাত্র আন্দোলন হিসেবে আমরা জানি। তখনকার সফল নেতারা এখানে রয়েছেন। ৭০- এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বহু অর্জন, বহুমুখী, গণমুখী সকল আন্দোলন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের ফসল। ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’, বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশের মানচিত্র অঙ্কন করে দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর হুকুমে এবং এখানে যারা উপস্থিত হয়েছেন তাদের অনেকের অনুপ্রেরণায়, নির্দেশে, পরিচালনায় আমরা তরুণ সন্তান বুকে গ্রেনেড ও কাঁধে অস্ত্র নিয়ে জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। সিইসি আরো বলেন, ঐতিহাসিক সব সফল আন্দোলন আওয়ামী লীগের হাত ধরে এসেছে। ১০ই জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে বঙ্গবন্ধু সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি দেশ গঠনের দায়িত্ব কাঁধে নেন। এক বছরের কম সময়ের মধ্যে দেশকে একটি সংবিধান উপহার দেন; কূটনৈতিক সাফল্যে বহুদেশের আনকূল্য, সমর্থন অর্জন করেন। নির্বাচন কমিশন গঠন করেন, ১৯৭৩ সালে জাতিকে প্রথম সংসদ নির্বাচন উপহার দেন এবং স্বাধীন দেশে প্রথম সংসদীয় সরকার গঠন করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করা হয়। ১৯৭৪ সালের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেন। ১৯৭৫-এর ১৫ই আগস্ট কালো রাতে জাতির জনকের সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে জাতির কালো অধ্যায়ের সূচনা হয়। বঙ্গবন্ধুর শাহাদত বরণের পর দলটির কঠিন পরিস্থিতির কথাও তুলে ধরেন সিইসি। জাতীয় চার নেতা হত্যার প্রসঙ্গ টেনে সিইসি বলেন, জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ১৯৮১ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো দলটির সভাপতি নির্বাচিত হন। একই বছর তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। বহু বাধা বিপত্তি, প্রতিকূলতা, ভয়ঙ্কর সব পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দলকে সুদৃঢ় অবস্থানে নিয়ে আসেন তিনি। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ছয় বছরের মাথায় ১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদে নির্বাচনে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এক পর্যায়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে সিইসি বলেন, শেখ হাসিনা মুসলিম বিশ্বের প্রথম মহিলা বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেন এবং রায় কার্যকর করেন। আওয়ামী লীগ দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলে দিয়েছে। উন্নয়নের প্রতিটি খাতে শিক্ষা, সামাজিক, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রসার, পরিবেশ সংরক্ষণ আজ বিশ্ব ধরিত্রীর মুকুট প্রধানমন্ত্রীর মাথায়। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ আজ মধ্যম আয়ে পরিণত হয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কূটনৈতিক সমাধান অর্জন বিশ্ব মাতৃকার আসনে সমাসীন প্রধানমন্ত্রী। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠনে আওয়ামী লীগের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে সিইসি আরো বলেন, ইসির আইন-বিধি বিধানের প্রায় সবগুলোই আওয়ামী লীগের আমলে তৈরি করা। বর্তমান ইসি আজ বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বেশি স্বাধীনতা ভোগ করে। যা আওয়ামী লীগ সরকারই প্রদান করেছে। এখানে উপস্থিত অনেকের কাছ থেকে আগের অনেক পর্যায়ে শিক্ষা, দীক্ষা, সাহস, অনুপ্রেরণা পেয়েছি। অনেকের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করেছি। আজ ভিন্ন পরিস্থিতিতে ইসির দায়িত্ব পালনে আপনাদের সহযোগিতা, পরামর্শ, সুপারিশ কীভাবে নেয়া যায়। সাহস পুঁজি করে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিচালনা করতে সে সহযোগিতা পেতেই আজকের এ সংলাপ আয়োজন ও প্রয়োজন।
সিইসিকে সতর্ক করলো আওয়ামী লীগ
জিয়াউর রহমান সংবিধান ও সব প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা ধ্বংস করেছে ইসির সংলাপে জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিএনপি’র গুণগান নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যের জের ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও সংলাপে জিয়ার প্রসঙ্গ টেনেছে। বুধবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে প্রতিনিধি দলের প্রধান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ইসি’র কাছে লিখিত প্রস্তাবে ‘গণতন্ত্র ও নির্বাচন’ বিষয় তুলে ধরেন। এতে বলা হয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের হোতা মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান ও সেনা আইন লঙ্ঘন করে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেন। বাংলাদেশের সংবিধান ও সকল প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ধ্বংস করে দেন, শুরু হয় স্বৈরশাসনের। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এ স্বৈরশাসক তার অবৈধ ক্ষমতা দখলকে বৈধতা দেয়ার অভিপ্রায়ে ১৯৭৭ সালের ৩০শে মে হ্যাঁ/না ভোটের আয়োজন করেন এবং তার পক্ষে হ্যাঁ ভোট প্রদানে সব আয়োজন সম্পন্ন করেন। প্রহসনের এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষ যেমন তাদের ভোটাধিকার হারিয়ে ফেলেন অপরদিকে সব গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিনষ্ট হয়ে যায়। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে ১৯৯০ সালের ৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত। জিয়াউর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ক্ষমতা দখলকারী অপর স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনকালের অবসান ঘটে। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নয় পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন। জিয়াউর রহমানের গুণগান করার প্রসঙ্গ ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের একজন নেতা ইসিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ইতিহাসের স্যাটেলড বিষয় নিয়ে অযথা বিতর্ক সৃষ্টি করবেন না। বৈঠক থেকে বের হয়ে সাংগঠনিক সম্পাদক পর্যায়ের একজন নেতা সাংবাদিকদের বলেছেন, সিইসি’র বক্তব্য ভুলভাবে ব্যাখ্যার অবকাশ থাকায় বিতর্ক এড়ানোর জন্য কমিশনকে সতর্কতার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন সিনিয়র এক নেতা। দুই ঘণ্টার বেশি বৈঠক শেষে জিয়ার গুণগান নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের অবস্থান পরিষ্কার, পড়ে সবকিছু পাবেন। আমি এখানে আর কোনো কথা বলতে চাই না। ইসি থেকে আওয়ামী লীগ ব্যাখ্যা পেয়েছে জানালেও বিস্তারিত বলতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। ব্যাখ্যা আমরা পেয়েছি, এটা বলতে চাই না। যদি কোনো ব্যাখ্যা দিতে হয় নির্বাচন কমিশন দেবে। তবে তাদের সঙ্গে যে আলোচনা, নির্বাচন কমিশনার থেকে সচিব প্রত্যেকের যে বক্তব্য-তাতে পজিটিভ ডায়ালগ আমরা করেছি, কনস্ট্রাকটিভ আলোচনা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ব্যাখ্যা পেয়েছে বলে দাবি করলেও ইসি’র ভারপ্রাপ্ত সচিব জানান, সিইসি’র সূচনা বক্তব্যের পর সংলাপে এ নিয়ে আর কোনো কথা হয় নি। বেলা ১১টায় সূচনা বক্তব্যে সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলেন, প্রতিটি দলের সঙ্গে সংলাপে সংশ্লিষ্ট দলের প্রোফাইল তুলে ধরা হয়। ৯ মিনিটের বক্তব্যে সিইসি বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের উন্নয়নের ‘ফিরিস্তি’ তুলে ধরেন। পরে ইসি’র ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদও ক্ষমতাসীন দলের ভূয়সী প্রশংসা করেন। সংলাপের পরে ইসি’র ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। খুবই সাকসেসফুল, উনারাও খুশি। বৃহস্পতিবার আরো দুটি দলের সঙ্গে সফলভাবে সংলাপ শেষ করব। জিয়ার গুণগান নিয়ে আওয়ামী লীগের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, সংলাপে এ নিয়ে আর কথা হয় নি। দুই ঘণ্টাব্যাপী আলোচনায় আর কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করেনি কেউই। ইসি’র ভারপ্রাপ্ত সচিব জানান, এ পর্যন্ত সব দলের সঙ্গে সংলাপ খুব সুন্দরভাবে এগোলেও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সবচেয়ে বেশি সময় সংলাপ করেও গণমাধ্যমের দৃষ্টি কাড়তেই বয়কট ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ৩৬টি দলের মধ্যে সব থেকে বেশি সময় (তিন ঘণ্টার মতো) আলোচনা করেছে ওই দলটি। খাওয়া-দাওয়াও করেছে। সুন্দরভাবে আলোচনাও করেছে। আর বাইরে গিয়ে বর্জনের ঘোষণা দিলো। উনারা আসলে গণমাধ্যমের হেডলাইন পেতেই এ ধরনের কথা বলেছেন। সোমবার কাদের সিদ্দিকী বিএনপি’র গুণগান গাওয়ার অজুহাতে সিইসির পদত্যাগ দাবি করেন। উল্লেখ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপের অংশ হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছে ইসি। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপে বসে ইসি। এর আগে গত ১৫ই অক্টোবর বিএনপি’র সঙ্গে সংলাপে বসে ইসি। আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় পার্টি-জেপি ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি’র সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসি’র আলোচনা শেষ হবে। এরপর নারী নেত্রী, নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সংলাপ করবে নির্বাচন আয়োজনকারী এই সাংবিধানিক সংস্থাটি।