সঞ্চিতি ঘাটতি সত্ত্বেও লভ্যাংশ ঘোষণার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে একজন শেয়ারহোল্ডারের দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ জুন অনুষ্ঠিতব্য ফার্স্ট ফিন্যান্সের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ৬ মাসের জন্য স্থগিত করেছিলেন হাইকোর্ট। পরবর্তীতে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। শুনানি শেষে গত ১০ আগস্ট হাইকোর্টের দেয়া আদেশ বাতিল করে দেন আপিল বিভাগ। এর মধ্য দিয়ে ফার্স্ট ফিন্যান্সের এজিএম অনুষ্ঠানে বাধা দূর হয়েছে। গতকাল দুই স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের এ তথ্য দেয় ফার্স্ট ফিন্যান্স।এ বিষয়ে ফার্স্ট ফিন্যান্সের কোম্পানি সচিব সরওয়ার শফিক বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে এজিএম অনুষ্ঠানে এর আগে হাইকোর্টের দেয়া ৬ মাসের স্থগিতাদেশ বাতিল করে রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ফলে এখন এজিএম অনুষ্ঠানে আর কোনো বাধা নেই। শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থরক্ষায় শিগগিরই পর্ষদ সভা করে এজিএমের নতুন তারিখ ঘোষণা করা হবে। তবে পূর্ববর্তী রেকর্ড ডেট অপরিবর্তিত থাকবে বলেও জানান তিনি।গত ২৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভায় ২০১৬ হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ সুপারিশ করে ফার্স্ট ফিন্যান্স। এ সময় শেয়ারপ্রতি ৪৩ পয়সা আয় (ইপিএস) দেখায় কোম্পানিটি, আগের বছর যা ছিল মাত্র
৮ পয়সা। ৩১ ডিসেম্বর কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়ায় ১৩ টাকা ৫০ পয়সা।
উল্লেখ্য, এর আগে আনোয়ারুল ইসলাম নামের একজন সাধারণ শেয়ারহোল্ডার সঞ্চিতি ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও লভ্যাংশ ঘোষণার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ জুন বুধবার ৬ মাসের জন্য কোম্পানির এজিএম স্থগিত করেন উচ্চ আদালত।
এ বিষয়ে কোম্পানি সচিব জানান, সঞ্চিতি ঘাটতি থাকলে নগদ লভ্যাংশ প্রদানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিনিষেধ রয়েছে। বর্ধিত সময়ের মধ্যে সঞ্চিতি ঘাটতি পূরণের শর্তে আমরা স্টক লভ্যাংশের পরিকল্পনায়ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নেই। কারণ এ লভ্যাংশটুকু না দিলে স্টক এক্সচেঞ্জে কোম্পানির শেয়ার ‘জেড’ ক্যাটাগরিতেই পড়ে থাকবে, যা সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতির কারণ হতে পারত। আমরা আদালতকে বিষয়টি বোঝাতে সক্ষম হয়েছি।
সর্বশেষ হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদনে ফার্স্ট ফিন্যান্সের নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান জি কিবরিয়া অ্যান্ড কোম্পানি তাদের মন্তব্যে জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে ঋণ-অগ্রিমের বিপরীতে গত বছর কোম্পানিটিকে ৪৫ কোটি ৮৪ লাখ ২৩ হাজার ৩৯ টাকা সঞ্চিতি রাখতে হতো। তবে এ বাবদ তারা ৩৯ কোটি ১৩ লাখ ৩৫ হাজার ১৭৬ টাকা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করেছে। এক্ষেত্রে সঞ্চিতি ঘাটতি ৬ কোটি ৭০ লাখ ৮৭ হাজার ৮৬৪ টাকা। একই হিসাব বছরে ফার্স্ট ফিন্যান্সের আয়কর সঞ্চিতিতেও ঘাটতি ছিল ২ কোটি ১৯ লাখ ৬১ হাজার ৯২ টাকা। এ দুই খাত মিলিয়ে ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০১৬ হিসাব বছরে কোম্পানিটির সঞ্চিতি ঘাটতি ছিল ৮ কোটি ৯০ লাখ ৪৮ হাজার ৯৫৬ টাকা। যথানিয়মে সঞ্চিতি সংরক্ষণ করা হলে গেল হিসাব বছরের মুনাফা থেকে এ পরিমাণ অর্থ কমে যেত বলে মনে করে নিরীক্ষক। এদিকে চলতি হিসাব বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) শেয়ারপ্রতি ৪৭ পয়সা লোকসান দেখিয়েছে ফার্স্ট ফিন্যান্স। অবশ্য আগের বছর একই সময়ে শেয়ারপ্রতি লোকসান আরো
বেশি ছিল; ১ টাকা ৫৫ পয়সা। তাছাড়া, এপ্রিল-জুন (দ্বিতীয়) প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি ৩৫ পয়সা মুনাফা দেখিয়েছে কোম্পানিটি, যেখানে ২০১৬ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি ৫০ পয়সা লোকসান হয়েছিল। ২০০৩ সালে শেয়ারবাজারে আসা প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান পরিশোধিত মূলধন ১১৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। ২০১৫ সাল শেষে রিজার্ভ ছিল ৩৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। বর্তমানে কোম্পানির মোট শেয়ারের ৪২ দশমিক ৪১ শতাংশ শেয়ার এর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের কাছে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ১৯ দশমিক ৫১ এবং বাকি ৩৮ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সর্বশেষ ১৪ টাকা ৩০ পয়সায় ফার্স্ট ফিন্যান্স শেয়ারের লেনদেন হয়। গত এক বছরে সর্বোচ্চ দর ছিল ১৫ টাকা ৩০ পয়সা ও সর্বনিম্ন ৬ টাকা ২০ পয়সা।