একটি লাউঞ্জ চেয়ারের দাম প্রস্তাব করা হয়েছে দুই লাখ ৬৫ হাজার টাকা

0
596
সৌদির ধরপাকড়ে ২০০ বাংলাদেশি ফিরলেন একদিনেই

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দুটি প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল আধুনিকায়ন প্রকল্পের কেনাকাটা প্রস্তাবে অস্বাভাবিক ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিমানবন্দরকে বিশ্বমানে উন্নীত করতে নেওয়া ২৩৫ কোটি টাকার এ প্রকল্পে টার্মিনাল ভবনে যাত্রীর বসার সংযুক্ত তিন সিটের একটি লাউঞ্জ চেয়ারের দাম প্রস্তাব করা হয়েছে দুই লাখ ৬৫ হাজার টাকা। আর সংযুক্ত দুই সিটের অন্য একটির দাম প্রস্তাব করা হয়েছে এক লাখ ৮৫ হাজার টাকা।

Advertisement

এ ছাড়া প্রকল্প প্রস্তাবটিতে আরো নানা অসংগতি ধরা পড়েছে। তাই এটি চূড়ান্ত না করে সংশোধনের জন্য ফেরত পাঠানো হয়েছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রকল্পের এই অসংগতি প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী গতকাল বলেন, ‘বিমানবন্দর উন্নয়নে কারো বিরুদ্ধে গাফিলতি পাওয়া গেলে ছাড় দেওয়া হবে না। ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি আমাদের ঠিকাদারদের নিবিড় তদারকিতে রাখতে হবে। ঘন ঘন প্রকল্প পরিদর্শনে যেতে হবে। তার পরও কোনো সমস্যা পেলে আমরা তাত্ক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

বিমানের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ড. এম এ মোমেন বলেন, ‘এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে শাহজালাল বিমানবন্দরের সেবার মান বিশ্বের যেকোনো বিমানবন্দরের চেয়ে পিছিয়ে। এখানে অনিয়ম দুর্নীতি একটি বড় সমস্যা। আমি মনে করি, অন্য সব খাতের মতো এখানেও সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা দরকার।’

একটি বিশ্বমানের ‘স্টেট অব আর্ট’ বিমানবন্দর বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের চাহিদা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলেও আধুনিকতা, প্রযুক্তিবৈচিত্র্যে বলা যায় অনেক বিমানবন্দরের চেয়েই পিছিয়ে আছে। তাই উন্নত ও আধুনিক সেবানির্ভর একটি বিমানবন্দর করার দাবি সর্বমহলের।

তারই ধারাবাহিকতায় সরকার ২৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে দুটি আধুনিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল করার উদ্যোগ নেয়। এ জন্য একটি খসড়া প্রকল্প প্রস্তাব বা ডিপিপি তৈরি করা হয়। গত ১৪ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিবুল হকের সভাপতিত্বে ওই ডিপিপি চূড়ান্ত করতে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সচিবসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা প্রকল্প প্রস্তাবের নানা অসংগতি ও অস্বাভাবিক ব্যয়ের বিভিন্ন দিক নিয়ে মতামত দেন।

বৈঠকের পরে এ বিষয়ে তৈরি করা একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ওই ডিপিপিতে প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের জন্য বিভিন্ন উপকরণ কেনার জন্য যেসব দর প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে অস্বাভাবিক অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি সবার নজরে এসেছে। তাতে দেখা যায়, লাউঞ্জে তিন সিটের একটি সংযুক্ত চেয়ারের দাম প্রস্তাব করা হয়েছে দুই লাখ ৬৫ হাজার টাকা। আর দুই সিটের অন্য একটি সংযুক্ত চেয়ারের দাম প্রস্তাব করা হয়েছে এক লাখ ৮৫ হাজার টাকা।

কিউ বেল্টের দামও অস্বাভাবিক বেশি ধরা হয়েছে। টাইলসের বদলে গ্রানাইট পাথরের প্রস্তাব করা হয়েছে, যেখানে দাম ধরা হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। তাই গ্রানাইট পাথরের বদলে টাইলস দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ফলস সিলিংয়ের দাম নিয়েও মন্ত্রণালয় সন্দেহ পোষণ করে সেটা যাচাই করতে বলেছে। এ ছাড়া সাইট অফিস নির্মাণের জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তরের (পিডাব্লিউডি) মূল্য তালিকা প্রযোজ্য হলেও তা এ প্রকল্পে মানা হয়নি। বিভিন্ন বৈদ্যুতিক উপকরণের দামও পর্যালোচনা করা হয়নি। একইভাবে লাউঞ্জের অ্যালুমিনিয়ামের ফলস সিলিংয়ের উপকরণের মান ও দর এবং মাটি কাটা, মাটি সরানোর দর নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে বৈঠকে।

প্রকল্পে নানা অসংগতি এবং পণ্য ও সেবার দর প্রস্তাব অস্বাভাবিক হওয়ায় এটি চূড়ান্ত না করে ফেরত পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে দর পর্যালোচনা করে যেখানে যেখানে বেশি ধরা হয়েছে তা কমিয়ে নতুন করে প্রস্তাব তৈরি করে তা আগামী ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পের পুরো ব্যয় বহন করবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এটি আগামী বছরের জানুয়ারিতে শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা। এর আওতায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবন ১ ও ২-এর পূর্ত, বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক অবকাঠামোগত সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আধুনিকায়নের মাধ্যমে বিমানবন্দরের যাত্রীসেবার মান বাড়ানোই সরকারের লক্ষ্য। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বিমানবন্দরের শীতাতপ ব্যবস্থাও হবে বিশ্বমানের। এটি বাস্তবায়নের জন্য গেল ২৭ অক্টোবর আর্থিক ছাড়পত্র দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

Advertisement

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here