অপরাধ বিচিত্রা চট্রগ্রাম প্রতিনিধি ঃ
চট্টগ্রাম বন্দরে লস্কর পদে নিয়োগ নিয়ে জাসদ একাংশের কার্যকরী সভাপতি মঈনুদ্দিন খান বাদলের অভিযোগে চটেছেন নৌ–পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। তিনি গতকাল সংসদে বলেন, চট্টগ্রাম–৮ আসনের সংসদ সদস্য যে অভিযোগ করেছেন তা সম্পূর্ণ অসত্য ও বিভ্রান্তিকর। তাই তার বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি। প্রসঙ্গত, রোববার সংসদ অধিবেশনে চট্টগ্রাম বন্দরে লস্কর পদে নিয়োগে নিয়ে প্রশ্ন তুলে মঈনুদ্দিন খান বাদল বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর চট্টগ্রামের আত্মার মতো। এই বন্দরের সঙ্গে চট্টগ্রামবাসী নানাভাবে যুক্ত। অথচ সেই বন্দরে একটি ছোট চাকরি হবে লস্করের। সেখানে দেখা যায় লস্করের চাকরিতে ৯২জন নির্বাচন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২ জন মাত্র চট্টগ্রামের, আর বাকি ৯০ জন অন্য জেলার।’ জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুও ওইদিন সংসদে এ নিয়ে বক্তব্য দেন। তারা দুজনেই চট্টগ্রামের প্রার্থীরা ‘বঞ্চিত’ হয়েছেন বলে সংসদে অভিযোগ করেন। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের। বাদল ও বাবলুর বক্তব্যের পরদিন গতকাল সোমবার রাতে সংসদে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দেন মন্ত্রী শাজাহান খান। বাদলের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে নৌমন্ত্রী বলেন, ‘সংসদ সদস্য মঈনুদ্দিন খান বাদলের বক্তব্য সম্পূর্ণ অসত্য এবং বিভ্রান্তিকর। কারণ সেখানে ৯২ জন নয় চাকরি দেওয়া হয়েছে ৮৫ জনকে। চাকরির বিধান মোতাবেক তাদের চাকরি দেওয়া হয়েছে।’ মইন উদ্দিন খান বাদলের সুপারিশেও একজনের চাকরি হয়েছে বলেও দাবি করেছেন মন্ত্রী। নৌমন্ত্রী বলেন, ‘চাকরির বিধান অনুযায়ী চতুর্থ শ্রেণি ব্যতীত অন্যান্য শ্রেণিতে লিখিত পরীক্ষায় পাস করার পর একটি মৌখিক পরীক্ষা হয়। আর দুই পরীক্ষায় যে সর্বোচ্চ নম্বর পায়, সে অনুযায়ী তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। চতুর্থ শ্রেণির বেলায় শুধু মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। এখানে যারা ভালো করে এবং স্বাস্থ্যগতভাবে যোগ্য তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। কারণ লস্করের কাজটি কায়িক শ্রমের। আর সেই সঙ্গে সব ক্ষেত্রে কোটা অনুসরণ করা হয়েছে।’ তিনি জানান, ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩০ ভাগ, নারী কোটায় ১০ ভাগ, উপজাতি কোটায় ৫ ভাগ, আনসার–ভিডিপি কোটায় ৫ ভাগ, প্রতিবন্ধী কোটায় ৫ ভাগ এবং জেলা কোটায় ৪৫ ভাগ নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ৮৫ জনকে যদি জেলা কোটায় চাকরি দেওয়া হত, আর চট্টগ্রাম জেলা কোটার কথা যদি আসে, তবে আগামী ৩০ বছরের মধ্যেও কিন্তু চট্টগ্রামের কোনো কোটায় চাকরি পাওয়ার কথা নয়। তারপরও চট্টগ্রাম বন্দর যেহেতু চট্টগ্রামে অবস্থিত, এখানকার লোকজনের জমির উপর তৈরি হয়েছে এ বন্দর, স্বাভাবিকভাবে তাদের একটি দাবি থাকে বিধায় আমরা চট্টগ্রামের এ বিষয়টি আমরা কোনো জেলা কোটায় ফেলি না।’ বৃহত্তর চট্টগ্রামের ২৯ জনকে চাকরি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এর মধ্যে চট্টগ্রামের ২৩ জন, কক্সবাজারের ৪ জন, পাবর্ত্য চট্টগ্রামের দুজন নিয়োগ পেয়েছেন। নিয়োগ পাওয়া অন্যরা নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, চাঁদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, জামালপুর, পাবনা, বগুড়া, খুলনা, মাগুরা, ঝিনাইদহ, বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, হবিগঞ্জ, রংপুর, দিনাজপুর জেলার বলে জানান তিনি। নৌমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রাম বন্দরে এ পর্যন্ত ২ হাজার ১০০ জন লোকের চাকরি দেওয়া হয়েছে । কখনও কোনো কথা উঠল না। এ সময়ে কথাটি কেন উঠল?’ এর উত্তরে তিনি নিজেই বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ ঘটনা কিন্তু আমরা জানি। যিনি এ অভিযোগটি করলেন, তিনি হলেন চট্টগ্রাম–৮ আসনের সংসদ সদস্য মঈনুদ্দিন খান বাদল। তিনি সুপারিশ করেছিলেন মনসুর আলী, পিতা সিরাজুর রহমান। যার রোল নং –জে ০১৪৩২। এই ছেলেটির চাকরি তার অনুরোধে দেওয়া হয়েছে। এখানে যেহেতু শুধু মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয় তাই অন্য মন্ত্রী–এমপিরা অনুরোধ করলে সেটাও বিবেচনা করি। এখানে কারা কারা সুপারিশ করেছেন তালিকা আছে। তিনি কী করে এ অভিযোগটি করতে পারলেন, আমি জানি না।’ বাদলের উদ্দেশে শাজাহান খান আরও বলেন, ‘অনুগ্রহ করে অসত্য তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন না। আপনাদের এ বক্তব্য প্রত্যাহার করা উচিৎ।’ বাবলুর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বাবলু সাহেব চাকরির ব্যাপারে এ পর্যন্ত বলেননি। তার দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ অনুরোধ করেছিলেন, তারও একটা অনুরোধ রাখা হয়েছে। বাবলু সাহেব বলেছেন, কেন ঢাকায় পরীক্ষা হয়? ঢাকায় পরীক্ষা হওয়ার কারণটা হল, অনলাইনে এখন আবেদন নেওয়া হয়। সেখানে ৭৪ হাজার আবেদন পড়েছে। এ ৭৪ হাজারের পরীক্ষাটি কোথায় নেব? চট্টগ্রামের সে ধরনের সক্ষমতা নেই। সে কারণে ঢাকায় পরীক্ষা নেওয়া হয়।’