অপরাধ বিচিত্রা প্রতিবেদক আমার কিছুই নেই। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে দুই সন্তান নিহত হয়েছে। ছোট ছেলে গত দুই মাস আগে র্যাবের ক্রস ফায়ারে ও মেজ ছেলে সন্ত্রাসীদের হাতে একই জায়গায় নিহত হয়েছে। স্বামী আবুল হোসেন মন্টু একটি হেরোইন মামলায় গ্রেফতার হয়ে এখন জেলখানাতে রয়েছে। এক মাত্র মেয়ে লিপি বিবাহিত। জামাই জাহাঙ্গীর হোসেন। এ দুজনের বিরুদ্ধেও বিস্ফোরক আইনে মামলা দেয়া হয়েছে। বড় ছেলে দীর্ঘদিন ধরে এলাকা ছাড়া। তার স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে আত্মগোপনে রয়েছে। তার বিরুদ্ধে রয়েছে, ডাকাতি, চুরি, অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ কমপক্ষে ৮ মামলা। দীর্ঘদিন ধরে বড় ছেলের সাথে যোগাযোগ নেই। তার নিজের নামে রয়েছে একটি হেরোইন মামলা। দীর্ঘ দেড় মাস জেল খেটে জামিনে বের হন মাসুমা বেগম।
কদমতলী থানার পূর্ব কদমতলী এলাকার মাসুমা বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিন কাঠার ওপর সেমি পাকা ৬টি রুম। কোথাও কোন লোকজন নেই। শুধু পড়ে আছে ছড়ানো ছিটানো কিছু আসবাবপত্র। আর সন্ত্রাসীদের দেয়া আগুনে পুড়ে যাওয়া আসবাবপত্রের কিছু অংশবিশেষ। পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের ভয়ে বাড়িতে মাসুমা বা তার কোন পরিবারের সদস্যরা থাকতে পারে না। এমনকি ভাড়াটিয়ারাও থাকতে পারে না। প্রতি মুহূর্তে স্থানীয় তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী চারভাই খালেক, মালেক, আনোয়ার ও দেলোয়ার এবং এদের সহযোগী মিন্টু, সিজার, পিচ্চি খোকন, রফিক ও রব তাদের বাড়ি থেকে সবকিছু লুটপাট করে নিয়ে যায়। বৃদ্ধা মাসুমা বেগম জানান, দীর্ঘ ৩৫ বছর আগে তার স্বামী আবুল হোসেন মিন্টু শ্যামপুর ম্যাচ ফ্যাক্টরিতে কাজ করতো। তখন অত্র এলাকার তিন কাঠা জমি কিনে কাঁচা পাকা বাড়ি তৈরি করে তার এক মেয়ে তিন ছেলেকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন।
ম্যাচ ফ্যাক্টরিতে কাজ করার সময় সন্ত্রাসী খালেক-মালেক এরা তার স্বামীকে ব্যাপক মারধর করেন। আর তখন থেকেই শুরু হয় খালেক-মালেকের জমি দখলের ব্যাপক চেষ্টা এ কারণে তার সন্তানদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দেয়া হয়। পরিবারের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। সন্ত্রাসীরা এত শক্তিশালী যে, পুলিশ তাদের কথা মতো চলতে বাধ্য। এলাকার যত চাঁদাবাজি, বাড়ি দখল, মাদক বিক্রি, ছিনতাই এসব কিছুই করে খালেক-মালেক বাহিনী। এলাকায় কোন অপকর্ম করা মাত্র তার সন্তানদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। পুলিশের সহযোগিতায় এরা জমি দখল ও তার বাড়িতে ব্যাপক লুটপাট করে এই বাহিনীর সদস্যরা।
গত ৪ মাস আগে ৭টি গাভী গরু, যার প্রত্যেকটির দাম দেড় থেকে দুই লাখ টাকা, বাড়ি করার জন্য গচ্ছিত টাকা, ঘরের আসবাবপত্র, স্বর্ণালংকারসহ সবকিছু লুটপাট করে নিয়ে যায়। যে সময় তার বাড়িতে হামলা হয় তখন বিষয়টি থানায় জানানো হলেও পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে নাই। কদমতলী থানা পুলিশের সহযোগিতায় প্রায় এক কোটি টাকার সম্পদ লুটপাট করে নিয়ে যায়।
এ পর্যন্ত এ বিষয়ে থানায় কোন মামলা হয় নাই। যে মামলা করতে যাবে তার বিরুদ্ধেই থানায় মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়।
সবকিছু হারিয়েও মাসুমা তার সন্তানদের নিয়ে নিজ বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে বেঁচে থাকতে চেয়েছেন। কিন্তু খালেক-মালেকের যোগসাজশে ইতিমধ্যেই তার দুই সন্তান ইমরান হোসেন র্যারের ক্রসফায়ার ও বিল্লাল হোসেন সন্ত্রাসী দ্বারা নিমর্মভাবে নিহত হয়েছে।
গত ৮ আগস্ট তার ছোট ছেলে ইমরানকে কদমতলী ওয়াসা রোডে র্যাবের ক্রস ফায়ারে নিহত হয়। তারপর গত ৯ নভেম্বর একই জায়গায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে মেজ ছেলে বিল্লাল নিহত হয়। মাসুমা জানান, গত পাঁচ বছর আগে বিল্লাল কুষ্টিয়া এলাকায় স্ত্রী সোনিয়া ও এক সন্তানকে নিয়ে বসবাস করেন। এর মধ্যে আর বাড়িতে আসে নাই। পাঁচ বছর আগেই শেষ দেখা হয় বিল্লালের সাথে। সবশেষ কথা হয় গত ২৪ অক্টোবর মোবাইল ফোনে। ঐদিন সকাল ৯টার দিকে তিনি বিল্লালের সাথে শেষ কথা হয় যে, বিল্লাল অসুস্থ, কুষ্টিয়ার ঐ বাসাতেই আছে। এরপর রাত দেড়টার দিকে বিল্লালের স্ত্রী সোনিয়া তার শাশুড়ি মাসুমাকে ফোনে জানান, বিল্লালকে বাসা থেকে র্যাব-৬ ধরে নিয়ে গেছে। এরপর বাসার সবাই ও তিনি নিজেও বহু জায়গায় খুঁজে আর বিল্লালের কোনো খোঁজ পান নাই। এরপর ৯ নভেম্বর সকালে তিনি স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারেন, বিল্লাল সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছে। এলাকার লোকজন ভয়ে কেউ তাদের পাশে দাঁড়াতে পারেনি। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। পরে মাসুমা ঢামেক মর্গে গিয়ে সেখান থেকে ছেলের লাশ নিয়ে জুরাইন কবরস্থানে গিয়ে দাফন করেন।এখন পুরো পরিবার ঘর ছাড়া। পুলিশ এ পর্যন্ত কোনো মামলা নেয় নাই। তিনি নিজে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় থাকেন। এখন খালেক-মালেক গংরা বাড়িটি দখলে নিতে পুলিশের সহায়তা নিচ্ছে। যেকোনো সময় তাকেও মেরে ফেলবে সন্ত্রাসীরা। পুলিশ খালেক-মালেকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিচ্ছে। এলাকায় মাদক বিক্রি করছে এরা।
বিল্লাল তার স্ত্রীসহ কুষ্টিয়া এলাকায় থাকলেও তার বিরুদ্ধে কদমতলী থানায় মামলা হয়েছে ৩০টি। এ সব মামলা দেয়া হয়েছে বিল্লালকে মারার জন্য তার কোনো সন্তানরাই সন্ত্রাসী নয়। তবুও তাদের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার পরিবারটি রক্ষার জন্য দাবি জানান। তিনি সবার কাছে আইনি সহায়তা চান।