ভীষণ দামি সেই পাথর হাতে বো চুনলোউ। মেট্রোচীনের বো চুনলোউ ভাবতেই পারেননি এভাবে খুলে যাবে তাঁর কপাল। পেশায় কৃষক এই মানুষ শুধু সৌভাগ্যের পরশে এখন কোটিপতি! আর তাঁর সেই সৌভাগ্য এনে দিয়ে দিয়েছে একধরনের ‘পরশপাথর’! ভাবছেন, যাহ! পরশপাথর বলে আবার
কিছু আছে নাকি! না, তা নেই, আবার আছেও। সেটা প্রাণিদেহের পিত্তথলিতে সৃষ্ট একধরনের পাথর। ইংরেজিতে এর নাম ‘বেজোয়ার’—অনেকে বলেন ‘পিগ ট্রেজার’। প্রাণিদেহ যেমন শূকরের পাকস্থলী কিংবা শরীরের অন্য কোনো অংশে এই পাথর পাওয়া গেলে তার কোনো দাম নেই। শুধু পিত্তথলির পাথরই অমূল্য। কিন্তু সেই অমূল্য জিনিসের দর্শন পাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। এটা ভীষণ বিরল ব্যাপার। বো চুনলোউ তাঁর খামারের একটি শূকরীর পিত্তথলিতে সেই পাথরই খুঁজে পেয়েছেন!
৫১ বছর বয়সী এ কৃষকের বসবাস শানতুং প্রদেশের জু কাউন্টিতে। গত আগস্টে তিনি খামার থেকে ৫৫০ পাউন্ড ওজনের একটি শূকরী জবাই করেন। গোশত প্রক্রিয়াজাতের সময় সেই শূকরীর পিত্তথলিতে ‘বেজোয়ার’ খুঁজে পান বো চুনলোউ। পাথরটি লম্বায় ৪ এবং প্রস্থে ২ দশমিক ৭ ইঞ্চি। চুলসদৃশ বস্তু এবং আরও কিছু অপাচ্য জিনিসের সমন্বয়ে এই পাথরের সৃষ্টি হয়ে থাকে। শুরুতে বো চুনলোউ এবং তাঁর ছেলে ব্যাপারটি বুঝতে পারেননি। এক প্রতিবেশী তাঁদের বলেন, ‘তোমরা যা পেয়েছ, সেটা চিকিৎসাবিজ্ঞানে মহামূল্য জিনিস!’ এরপরই টনক নড়ে বাপ-ছেলের।
২৬ বছর বয়সী ছেলে বো মিনজু আর সেই পাথর সঙ্গে করে নিয়ে সাংহাই যান চুনলোউ। সেখানে সাড়ে চার হাজার পাউন্ড খরচ করে বাপ-ছেলে সেই পাথরের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেন। তাঁদের কাছ থেকে নিশ্চয়তা পাওয়ার পর চুনলোউ বাজারে পাথরটি দরদাম যাচাই করে বিস্ময়ে থ বনে যান—পাথরটির দাম ৬ লাখ ৫ হাজার ডলার! চায়নিজ মুদ্রায় ৪০ লাখ ইউয়ান এবং বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ কোটি ১ লাখ ৯ হাজার ৬৮৩ টাকা প্রায়!
১৬০০ শতকে ইংল্যান্ডে ‘বেজোয়ার’কে বলা হতো ‘জাদুকরি ওষুধ।’ শরীর থেকে যেকোনো ধরনের বিষ নিঃসরণে এই পাথর ভীষণ কাজে লাগে। চীনের ঐতিহ্যবাহী ওষুধের (টিসিএম) চর্চাকারীদেরও একই মত। চিকিৎসকদের মতে, বিষের বিপক্ষে এটা বৈশ্বিক ‘অ্যান্টিডোট’। ‘বেজোয়ার’ শব্দটি এসেছে পার্সি ‘পাদ-জেহর’ শব্দ থেকে, যার অর্থ ‘রোগ প্রতিষেধক’। আরবের চিকিৎসাবিদ ইবন জোহর এই পাথরকে চিকিৎসার বস্তু হিসেবে ব্যবহারের অগ্রপথিক।