গরু মোটা তাজা করার ওষধ খাচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ

0
1038

অপরাধ বিচিত্রা প্রতিবেদক

Advertisement

বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ কোনো না কোনো ব্যথার অসুখে ভুগছে। এদের মধ্যে অনেকেই আবার কোনো চিকিৎসকের কাছে না গিয়েই পাড়ার বা বাজারের ওষুধের দোকান থেকে নিজেই ওষুধ কিনে খাচ্ছেন। ওষুধের দোকান থেকে চাইলে যে কেউ প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ওষুধ কিনতে পারেন। এসব দোকান থেকে অনেক সময় ব্যথার যে ওষুধ দেওয়া হয়, তা সাধারণত গরু মোটা-তাজা করার কাজে ব্যবহার করা হয়। এ ওষুধের মধ্যে ক্ষতিকর স্টেরয়েড (steroid) জাতীয় ওষুধও রয়েছে।এসব ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করে মানুষ কিডনি রোগসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছে। এক একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য জানান গ্রিনরোড, ধানমণ্ডি ৭নং রোডের ঢাকা পেইন ম্যানেজমেন্ট সেন্টারের এমডি অধ্যাপক ডা. আখতারুজ্জামান।তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিউরো এনেস্থেশিয়ালজি অ্যান্ড পেইন মেডিসিন বিভাগেরও অধ্যাপক। কথা প্রসঙ্গে তিনি দু’ধরনের ব্যথানাশক ওষুধের কথা বলেন। এদের একটি স্টেরয়েড জাতীয় এবং অন্যটি নন-স্টেরয়েড। এই দুই ধরনের ব্যথানাশকই মানুষ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই সচরাচর ব্যবহার করে থাকে। এর ফলে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়।
এ দুটি ওষুধের একটি হচ্ছে, প্রেডনিসোলেন(prednisolone)। এটি সেবন করলে হাড়ের ক্ষয় তরান্বিত হয়, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে। অপর ওষুধটি হচ্ছে, ডাইক্লোফেবাক (diclofebac) বা করটোল্যাক (kotorolac) জাতীয়  নন-স্টেরয়েড ওষুধ। না বুঝে এটি সেবন করলে কিডনি নষ্ট বা বিকল হয়ে যেতে পারে, পেট ফুলে যেতে বা ফেঁপে যেতে পারে।  অধ্যাপক ডা. আখতারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে বেশিরভাগ রোগীই প্রথম ডাক্তারের কাছে আসেন ব্যথা নিয়ে।  এ ব্যথার অসুখ বাংলাদেশে মহামারী আকার ধারণ করেছে। শহরের চেয়ে গ্রামে এবং পরুষের চেয়ে নারীরা এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। তবে কোনো প্রকার অপারেশন ছাড়াই সঠিক চিকিতসা নিলে সহজেই নিরাময় সম্ভব। তিনি জানান, অন্যদেশের সঙ্গে ব্যথার অসুখে বাংলাদেশের ব্যাপক তফাত দেখা যায়। বাংলাদেশের মানুষ ব্যথার অসুখে ভোগেন অতিরিক্ত কায়িক পরিশ্রম করার কারণে। আর উন্নত দেশের মানুষ ভোগে ওভার ওয়েট বা বেশি ওজনের (ওবেসি হওয়ার) কারণে। তবে বাংলাদেশে সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হল শরীর  ব্যথা হলেই তারা পাশের ওষুধের দোকানে গিয়ে ডাক্তার না দেখিয়ে ওষুধ চায়। দোকানি প্রথমেই যে ওষুধ দেয় তা গরু মোটা তাজা করতে যে ওষুধ খাওয়ানো হয় তা।এর পরে তার ব্যথা হলেই রোগী নিজ উদ্যোগেই ওষুধ কিনে খেতে থাকে। এ প্রবণতা দেশে মারাত্মক স্বাস্থ্য হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে।
ব্যথা নিয়ে ডাক্তারের কাছে যায়নি এমন রোগীর সংখ্যা খুবই কম। সাধারণত কোমর ব্যথা, ঘাড় ব্যথা, নিউরোপ্যাথিক পেইন, কলার পেইন, ক্যান্সার পেইন এবং হাড়ের ক্ষয়জনিত ব্যথা নিয়ে রোগীরা আসেন। এ মধ্যে কোমর ব্যথাই সবচেয়ে বেশি। কারণ এখন অধিকাংশ মানুষ হাতেই সব কাজ সারেন। তার মধ্যে কৃষিকাজ অন্যতম। এখনও চাষাবাদের অনেক কাজ হাতেই করা হয়। মা-বোনেরা সারাদিন বাড়িতে কাজ করেন। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার ও ক্যালসিয়াম খান না। হাড়ের ক্ষয়ের আধিক্যও বেশি।  তিনি বলেন, ‘ক্যান্সার পেইন ও অন্যান্য পেইন বা ব্যথা নিরাময়ের কোনোও বিশেষায়িত সেন্টার বাংলাদেশে এর আগে ছিল না। তাই আমরা কয়েকজন ডাক্তার (যারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিউরো এনেস্থেশিয়ালজি অ্যান্ড পেইন মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক) মিলে গ্রিন রোডে এ সেন্টারটি খুলেছি। এটি চলতি বছর সেপ্টেম্বরে কাজ শুরু করেছে। নাম হল ব্যথা নিরাময়কেন্দ্র বা ঢাকা পেইন ম্যানেজমেন্ট সেন্টার । এটি একটি রিসার্চ সেন্টারও।এখানে চিকিৎসার পাশাপাশি গবেষণাও চলবে। একে জাপান, ভারত ও ইউরোপের দেশগুলোর এ জাতীয় চিকিৎসাকেন্দ্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।ক্যান্সারের জন্য আলাদা বিভাগ রয়েছে।  জটিল ব্যথ্যা নিরাময়ে ইনজেকশন দেওয়া ব্যবস্থা রয়েছে। এজন্য ৬০ লাখ খরচ করে মেশিন আনা হয়েছে। তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদী ব্যথার রোগীরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এখানে তাদের থেরাপির ব্যবস্থা থাকবে। কী খাবেন, কীভাবে ব্যায়াম করবেন এ নিয়ে মাসে একদিন তাদের বিনামূল্যে পরামর্শ ও চিকিৎসা  দেওয়া হবে। এ সেন্টারে সব ধরনের ব্যথা নিজে কাজ করা হবে।

Advertisement

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here