*বেতন পান তৃতীয় গ্রেডে মেয়ে পড়েন কানাডা,* ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প পরিচালক বনে গেলেও তাঁর পদায়ন ছিল অবৈধ
মোস্তাফিজুর রহমান ঃ সিনিয়র স্বেল পরীক্ষা ছাড়াই একাধিক পদন্নতির অভিযোগ উঠেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকোশলী তুষার মোহন সাধু খাঁ এর বিরুদ্ধে। তিনি বেতন পান তৃতীয় গ্রেডে কিন্তু মেয়ে পড়েন কানাডায়। তাঁর স্ত্রী চাকরি করেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজর ইংরেজি বিভাগে। প্রায়ই ছুটে যান কানাডায় মেয়ের কাছে। একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে কীভাবে এমন বিলাসী জীবন যাপন করেন তা নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে পুরো জনস্বাস্থ্য প্রশাসনের ভেতর। শিক্ষাজীবন থেকে কর্মজীবনে নানা অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একাধিক প্রকৌশলীদের মধ্যে অসন্তোষের বার্তা বহন করছে। কোনো গণমাধ্যম কর্মী দেখা করতে গেলেও নিরাপত্তাকর্মীদের বাধার মুখে পড়তে হয়। আাবার দেখা করার অনুমতি মিললেও ক্যামেরা মাইক্রোফোন নিযে তাঁর রুমে ঢোকা যাবেনা এমন শর্ত জুড়ে দেন প্রকেীশলী তুষার মোহন। তবে ভেতরে অনিয়মে ভরপুর সেটা প্রমাণ করে জুড়ে দেওয়া শর্তে।
সূত্র বলছে তুষার মোহনের বাবা মদন মোহন সাধু খাঁ এক সময় জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মরত ছিলেন একই অফিসে ক্যাশ সরকার হিসেবে। পরবর্তীতে পদন্নতি পেয়ে হিসাব সহকারী হয়ে ছিলেন। অভিযোগ উঠেছে ২৩ জানুয়ারী ১৯৮৬ সালে সরকারি আদেশের মাধ্যমে কর্মভিত্তিক নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়া সত্ত্বেও বাবার মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে ১৯৮৯ সালে চাকরিতে যোগদান করেন।
এর মাত্র দেড় বছর পরে তুষার মোহন সাধুখাঁসহ ১২ জন ১৮টি জেলা শহরে পানি নিষ্কাশন ও পয়নিষ্কাশন প্রকল্পে সহকারী প্রকৌশলী পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়েছেন। তবে অভিযোগ রযেছে ৭ জুলাই ১৯৯১ সালে এই নিযোগে সার্ভিস রুল অমান্য করেছেন তিনি।
পহেলা জুলাই ২০০০ সালে প্রকল্প থেকে রাজস্বখাতে আত্মিককরণ পূর্বক নিয়োগপ্রাপ্ত হন তুষার মোহন। এছাড়াও মাত্র ৯ বছরের মধ্যে নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সেখান থেকে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বর্তমানে প্রধান প্রক্যৌশলী হিসাবে কর্মরত রযেছেন।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস নিয়োগ বিধিমালা ১৯৮১(৫)বি অনুযায়ী সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে পদন্নতি সম্ভব নয়,অথচ তুষার মোহন সাধু খাঁ সিনিয়র স্খেল পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ না করে পদন্নতি পাওয়ায় অভিযোগ উঠেছে।
এ দিকে ১৩ জন কর্মকর্তার মধ্যে অবসরে যাওয়া তিনজন কর্মকর্তার পিআর এল সংক্রান্ত নথি জমা দিলে বর্তমান গ্রেড থেকে নিম্ন গ্রেডে নামিয়েছেন হিসাব বিভাগ। তিন কর্মকর্তার অবস্থা এমন হলে প্রধান প্রকৌশলী অবৈধ কিনা এমন প্রশ্ন ওঠা সময়ের ব্যাপার। তবে সব অভিযোগের বিষয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী তুষার মোহন সাধু খাঁর একটাই উত্তর ১৯৮৬ তে যে কর্মভিত্তিক নিয়োগ ছিল তা ১৯৮৬ বন্ধ করা হয়েছে। আমি নিয়োগ নিয়েছি ১৯৮৯ তে। এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিবেদককে বলেন,এটা মিনিস্টারি দিয়েছে আপনি মিনিস্টারিতে গিয়ে জানেন।
এসব বিষয় জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফিরোজ আলম সকালের সময়’কে বলেন, আমার চাকরির মেয়াদ আছে আড়াই বছর। আমি সিনিয়র হলেও প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার কথা থাকলেও রহস্যজনক কারণে হতে পারিনি। ফিরোজ আলম সাংবাদিকদের আরও বলেন,মরনোত্তর স্বপ্পটাও যেন হারিয়ে ফেলেছি,ওটাও পূরণ হলনা। ভাল একটি পোস্টিংও পেলামনা।
ল্যবরেটরিতে ওএসডি করে ফেলে রেখেছে বছরের পর বছর এটাই মনটাকে ভারাক্রান্ত করছে। প্রধান প্রকৌশলীর নিযোগ আর পদন্নতির বৈধতার বিষয় জানতে চাইলে চাপা ক্ষোভে ভোল পাল্টে ফেলেন। কথায় কথায় সাবেক আইজিপি বেনজির আহম্মেদের সাথে তুলনা করেন। ফিরোজ আলম আরও বলেন,ওদের ২৭ জনের একটি গ্রুপ আছে ওরা ক্যাডার চাকরিতে ঢুকেই প্রধান প্রকৌশলী হতে চায় ওদের বয়সের কোনো প্রয়োজন নাই। দেখবেন মিডিয়ায় এরকম হাজারো বেনজিরের আত্মপ্রকাশ পাবে।
উল্লেখ্য যে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে,তুষার মোহন সাধু খাঁ প্রকল্প পরিচালক থাকাকালীন অদ্যবধি মেসার্স রানা ট্রেডার্সের মালিক জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঠিকাদার দিলীপ সরকারের মাধ্যমে বড় অংকের টাকার লেনদেন করেন। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ প্রকল্প পানি সরবরাহ প্রকল্প ৮ হাজার কোটি টাকার জিওবি থাকাকালীন রানা ট্রেডার্সের দিলীপ সরকারের কাছ থেকে কমিশন বাগিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অবৈধ নিয়োগ নিয়ে যে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যা্্চছেন সত্যিই স্বেরশাসনের প্রমাণ বহন করে। তুষার মোহন সাধু খাঁ আবশ্যই আইনের আওতায় এনে তাঁর নিয়োগের যারা জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায এনে বিচারের মুখোমুখি দাড় করানো সমায়ের দাবি মাত্র।
একটি সূত্রের দাবি তুষার মোহন সাধু খাঁ ২০২৫ সালে জুন মাসে অবসারে যাবেন বলে জানা গেছে। তিনি অবসরে যাওয়ার পর এই পদে সিরিয়ালে রয়েছেন মীর আঃ সহিদ। তিনি বর্তমানে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্বে রয়েছেন। সে পূর্ত জেলা শহর চার জেলার পিইডিপির দায়িত্বে রযেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তিনি তুষার মোহন সাধু খাঁ এর মত সিনিয়র স্কেল পরীক্ষা না দিয়ে প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার জন্য তাঁর দেখানো পথে হাটছেন। বিষয়টি নিয়ে তাঁর সাথে কথা বলতে চাইলে পূর্ত কার্যালয়ে বড় বাবু হিসেবে পরিচিত অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পূর্ত আঃ সহিদ চার প্রকল্পে আছেন।
সাংবাদিকরা কথা বলতে চেয়েছে অবসরে যাওয়া তিন কর্মকর্তার নিম্ন গ্রেডে নামিয়ে দেওয়া সেই চিঠিতে স্বাক্ষর করা ফিন্যান্স অফিসার নাসির নওয়াজের সাথে। তবে এ বিষয় কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। পরে কথা হয় হিসাব রক্ষক কামরুন্নাহার এর সঙ্গে। তুষার মোহন সাধু খাঁসহ ৯ জনের বেতন ভাতার বিষয় কথা বলতে চাইলে তিনি মিটিংয়ের কথা বলে এরিয়ে।