জীবনের প্রথম ইন্টারভিউতে প্রশ্নকর্তা জিজ্ঞেস করেছিলেন, পিয়াজ কাটলে মানুষ কাঁদে কেন? কি উত্তর দিয়েছিলাম এতদিনে মনে নেই। তবে এখন হলে বলা যেতো, কাঁদার জন্য পিয়াজ কাটার দরকার হয় না, পিয়াজ কিনতে গেলেই এখন মানুষ কাঁদে। ছাত্রজীবনে খুব বেশি রান্নাবান্না করতে হয়নি বলে পিয়াজ কেটে কাঁদতে হয়নি। তবে ওই সময়ে আমার ম্যানিব্যাগের সঙ্গে
পিয়াজের একটা অদ্ভুত সাদৃশ্য ছিল; খুললেই চোখে পানি চলে আসতো।
পিয়াজের এ কান্না কিংবা পিয়াজ কাটতে গিয়ে কান্না আমাকে অনেকবারই ব্রিবতকর অবস্থায় ফেলেছে। আমার বউ, তিনি আবার কান্না বিশেষজ্ঞ। জগতের এমন কোনো বিষয় নেই যা নিয়ে তিনি কাঁদেন না।
টিভি সিরিয়ালে দেখে, সিনেমা দেখে, গল্প উপন্যাস পড়ে, মনের দুঃখে কিংবা সুখে তিনি কাঁদেন। কিছুদিন আগে বউয়ের নাকের পানি আর চোখের পানিতে একাকার। দেখে জিজ্ঞেস করলাম, আবার কে মারা গেল?
-কে মারা যাবে? পিয়াজ কাটলাম এতগুলো।
কয়েকদিন আগে আবার একই কাহিনী। জিজ্ঞেস করলাম, প্রতিদিন পিয়াজ কাটতে হয় নাকি, একবারে বেশি করে কেটে রাখলেই তো পারো।
-ঢং করবে না তো, আমি বাঁচি না মনের দুঃখে, উনি আসছেন পিয়াজ কাটতে।
পিয়াজের অত্যধিক দাম বৃদ্ধির কারণে গৃহিণীদের রান্নাভ্যাসে যেমন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়, তেমনি রেস্টুরেন্টগুলোর আইটেমেও এসেছে পরিবর্তন। আগে রেস্টুরেন্টগুলোতে সালাদ হিসেবে পিয়াজ দিতো এখন পিয়াজের জায়গা দখল করেছে কাঁচা পেঁপে। দোকানে এখন পিয়াজু নামে যা বিক্রি হয় তাকে আর যাই বলা যাক না কেন কোনোক্রমেই পিয়াজু বলা যায় না। ডাল এবং আটা দিয়ে বানানো এ বস্তুকে বড়জোর ডালাজু কিংবা আটাজু বলা যেতে পারে। অবশ্য বাঙালি এক্ষেতে বরাবরই ক্রিয়েটিভ। রোজার দিনে বেগুনের অত্যধিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে আমরা বেগুনির পরিবর্তে পেঁপেনি কিংবা লাউনি খেতে অভ্যস্ত।
পিয়াজের দাম যতই বাড়ুক না কেন পিয়াজের সঙ্গে বাঙালির সখ্য দীর্ঘদিনের। পিয়াজ রস যেমন আমাদের কাঁদায় তেমনি আমাদের হাসাতেও এ রসের ভূমিকা কম নয়। পিয়াজ নিয়ে বাঙালির সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত রসিকতা সম্ভবতÑ ‘ছেলের সবই ভালো, খালি একটু পিয়াজ খায়’। পিয়াজের চলমান মূল্যবৃদ্ধিরকালে পিয়াজ বিষয়ক একটা প্র্যাকটিকাল জোকÑ
স্ত্রী: কি ব্যাপার, বাজার থেকে পিয়াজ আনোনি কেন? দাম বেশি বলে পিয়াজ আনবে নাÑ এটা কেমন কথা?
স্বামী: দাম বেশি বলে আনিনি এটা ঠিক নয়।
স্ত্রী: তাহলে?
স্বামী: আসলে পিয়াজ কাটতে বসে তুমি প্রতিদিন চোখের জল ফেলবে, এটা আমি সহ্য করতে পারছি না।
পিয়াজ যে শুধু খাদ্য হিসেবে জনপ্রিয় তা নয়, প্রসাধনী হিসেবেও এর ব্যবহারও কম নয়। বিশেষত নারীদের ক্ষেত্রে এটা বেশ জনপ্রিয়। আমার বউকে দেখি প্রায়শই মাথা এবং মুখে পিয়াজ ঘষাঘষি করতে। বউকে বললাম, দুর্মূল্যের বাজারে ঘষাঘষি করে পিয়াজের দাম আর বাড়াইও না। আমার কথা শুনে বউ আর দেরি করেনি, বাসার ছাদের টবে পিয়াজ চাষ শুরু করে দিয়েছে। প্রয়োজনে চাষ করে পিয়াজ উৎপাদন করবে তবুও পিয়াজ দিয়ে রূপচর্চা বন্ধ হবে না।
পিয়াজ নিয়ে কিছু আজাইরা প্যাচাল
- পিয়াজ মানুষের প্রাচীন খাদ্যের একটি। সূত্রমতে মানুষ গত ৭০০০ বছর ধরে পিয়াজ খেয়ে আসছে।
- প্রাচীন মিশরীয়দের কাছে পিয়াজ অমরত্বের প্রতীক ছিল। প্রাচীন মিশরীয়রা পিয়াজকে উপাসনা করতো। পরকালে সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে পিয়াজ ফারাওদের সমাধিসৌধে রাখা হতো।
- ভুলেও আপনার কুকুরকে পিয়াজ খেতে দেবেন না। পিয়াজ কুকুরের রেড ব্লাড সেলকে দুর্বল করে দিয়ে কুকুরের মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
- মধ্যযুগে পিয়াজ মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হতো, মধ্যযুগে উপহার হিসেবেও পিয়াজের চল ছিল ব্যাপক। (মধ্যযুগ বুঝি আবার ফিরে এলো!)
- দ্য গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুসারে, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পিয়াজটি ফলিয়েছিলেন এক বৃটিশ কৃষক। ২০১১ সালে তার উৎপাদিত একটি পিয়াজের ওজন ছিল ১৮ পাউন্ড অর্থাৎ প্রায় সাড়ে আট কেজি।
- প্রাচীন অলিম্পিকে অ্যাথলেটদের শক্তিবর্ধক হিসেবে পিয়াজ খাওয়ানো হতো।
- পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি পিয়াজ খায় গাদ্দাফির দেশের লোক। তথ্যমতে লিবিয়ানরা অন্য দেশের লোকের তুলনায় পাঁচগুণ বেশি পিয়াজ খায়।
- পুরনো ইংরেজি লোককাহিনী অনুযায়ী, যদি পিয়াজের ত্বক পুরু হয়, তাহলে এর অর্থ হচ্ছে একটি কঠোর বা তীব্র শীত আসছে। অন্যদিকে পিয়াজের পাতলা ত্বক হালকা শীতকালের ইঙ্গিত দেয়।
- পিয়াজের প্রায় ৯৭ ভাগই পানি।
- তথ্যমতে পিয়াজ পৃথিবীর ৬ষ্ঠ জনপ্রিয় সবজি। (মনোযোগী পাঠকের জন্য কুইজ, পৃথিবীর সবচেয়ে (১ম) জনপ্রিয় সবজির নাম কি? অবশ্যই আগে উত্তর দিয়ে পরে গুগল করবেনÑ
পিয়াজ কাটার সময় কাঁদে না এমন মানুষ বিরল। পিয়াজ কাটার সময় কান্না প্রতিরোধে একটা ফ্রি টিপসÑ ‘পানি ছেড়ে দিয়ে ট্যাবের নিচে পিয়াজ কাটুন কিংবা ফ্রিজে রেখে ঠা-া অবস্থায় পিয়াজ কাটুন; আশাকরি কান্না ছাড়াই পিয়াজ কাটতে পারবেন। চুইংগাম চিবুতে চিবুতে পিয়াজ কাটলেও নাকি চোখে পানি আসে না, তবে এটা ঝুঁকিপূর্ণ; এতে চোখে পানি না আসলেও দাঁতে পোকা আসতে পারে।