নিখোঁজ জিডির পাঁচ দিন পর সন্ধান মিলল ‘মুরগি ব্যবসায়ী’ সামছুল আলমের। তার সঙ্গে নিখোঁজ সালাউদ্দিন এবং ফরিদ আহাম্মেদ স্বপনেরও হদিস মিলেছে। র্যাব জানিয়েছে, তারা পাসপোর্ট ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য। মালয়েশিয়াগামী শাহজালাল নামের একজনের কাছ থেকে পাসপোর্ট ছিনিয়ে নিয়েছে তারা। পরে পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেয়ার নামে টাকা দাবি করে। ফাঁদ পেতে শুক্রবার রাতে রাজধানীর ইত্তেফাক মোড় থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় আরও দু’জনকে। ওই দু’জন হল- জামাল হোসেন এবং নুর ইসলাম। এ সময় হানিফ, দুলাল এবং সেলিমসহ অজ্ঞাতনামা ২/৩ জন পালিয়ে যায়। এদিকে ১৭ অক্টোবর রাজধানীর মতিঝিল থানায় করা এক জিডিতে সামছুল আলমের স্বজন ফিরোজ মিয়া উল্লেখ করেন, ১৬ অক্টোবর বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীর ফকিরাপুলে হোটেল আল ইমামে খাবার খাচ্ছিলেন সামছুল। এ সময় কয়েকজন লোক এসে ডেকে নিয়ে যায় তাকে। এরপর থেকেই সামছুলকে পাওয়া যাচ্ছে না। এ সময় সামছুলের সঙ্গে সালাউদ্দিন এবং স্বপনও ছিলেন বলে ফিরোজ মিয়া জানান। তিনি বলেন, ‘এ তিনজনের নিখোঁজের বিষয়টি পরদিন র্যাব, পুলিশ এবং ডিবিকে জানানো হলেও এতদিন তাদের কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। রোববার জানতে পারলাম, র্যাব তাদের গ্রেফতার করেছে।’ শামছুল আলমের বোন নুরুন্নাহার জানান, সামছুল, সালাউদ্দিন এবং স্বপন যখন লাঞ্চ করছিলেন তখন কয়েকজন লোক শামছুলের সামনে এসে প্রশ্ন করেন ‘আপনার নাম কি সামছুল?’ সামছুল হ্যাঁসূচক জবাব দেয়ার পর তারা বলেন, এদিকে আসুন। এরপর শামছুল ও স্বপনকে হোটেলের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাদের মোবাইল নম্বরগুলো বন্ধ হয়ে যায়। শনিবার বিকালে জিডির তদন্ত কর্মকর্তা মতিঝিল থানার এসআই গোলাপ উদ্দিন জানান, মিলনের সবশেষ মোবাইল লোকেশন ছিল যাত্রাবাড়ীর ধলপুর এলাকায়। তার মোবাইলটি বন্ধ থাকায় তাকে উদ্ধার করা কঠিন হচ্ছিল। সালাউদ্দিন নিখোঁজের ঘটনায় পৃথক কোনো জিডি হয়নি উল্লেখ করে এসআই বলেন, ‘ঘটনার দিন পল্টন এলাকায় র্যাবের একটি গাড়িতে সালাউদ্দিনকে দেখেছি। তবে র্যাব কত তা খেয়াল করিনি। যেহেতু আমার তদন্তের বিষয় ছিল মিলন, তাই সালাউদ্দিনের বিষয়ে খোঁজ নিইনি। তবে র্যাবের যে গাড়িতে মিলন ছিলেন সেই গাড়ির চালক এবং মিলনের স্বজনদের দেয়া বর্ণনা অনুযায়ী সালাউদ্দিনের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি।’ এ বিষয়ে শনিবার র্যাব-১০ এর পরিচালক শাহাব উদ্দিন খান জানান, তাদের গাড়ি সাধারণত মতিঝিল-পল্টন এলাকায় যায় না। তবে বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে বলতে হবে। এর কিছুক্ষণ পর র্যাব-১০ এর অতিরিক্ত এসপি মহিউদ্দিন ফারুকী টেলিফোনে জানান, পাসপোর্ট ছিনতাই চক্রের অন্যতম হোতা হল মিলন। সালাউদ্দিন, হানিফ এবং স্বপনসহ তার কয়েকজন সহযোগী রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের বেশ কয়েকটি মামলা আছে। দু-তিন দিন আগেও ওয়ারী থানায় একটি ছিনতাই মামলা হয়েছে। ওই মামলায় জড়িত সন্দেহে র্যাব তাদের খুঁজছে। তিনি জানান, এ চক্রের সদস্যরা সাধারণ ও বিদেশগামী যাত্রীদের কাছ থেকে পাসপোর্ট ছিনিয়ে নেয়। পরে টাকার বিনিময়ে তা ফেরত দেয়। ওইদিন র্যাবের অতিরিক্ত এসপি মহিউদ্দিন ফারুকী জানান, ১৪ সেপ্টেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওয়ারীর রাজধানী সুপার মার্কেটের সামনে থেকে কুমিল্লার লাকসাম থানার ইসলামপুর এলাকার চাঁন মিয়ার কাছ থেকে পাসপোর্ট ছিনিয়ে নেয় মিলনের নেতৃত্বাধীন চক্রটি। চান মিয়া মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য তার পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়াতে ঢাকায় এসেছিলেন। পরে ৮৩ হাজার টাকার বিনিময়ে ওই চক্রের কাছ থেকে পাসপোর্টটি ফেরত পান চান মিয়া। এ ক্ষেত্রে চান মিয়ার কাছ থেকে টাকা নেন স্বপন। অতিরিক্ত এসপি মহিউদ্দিন ফারুকী আরও বলেন, ‘এ চক্রের সদস্যদের ধরতে ৭ অক্টোবর আমরা তাদের অনুসরণ করছি। ওইদিন তাদের গ্রেফতার করতে পারিনি।’ রোববার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১০ এর পরিচালক শাহাব উদ্দিন খান জানান, ১৯ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানার মশুলদি গ্রামের শাহ আলী র্যাবের কাছে একটি অভিযোগ করেন। এতে বলা হয়, ওইদিন সকালে শাহ আলী ও তার ভাই মালয়েশিয়াগামী যাত্রী শাহ জালাল সিএনজিযোগে ওয়ারীর রাজধানী সুপার মার্কেটের সামনে দিয়ে টিকাটুলি-মতিঝিল অভিমুখে যাওয়ার সময় চারজন লোক সিএনজির গতিরোধ করে। দু’জন পিস্তল ও দু’জন ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মালয়েশিয়ার ভিসাযুক্ত শাহ জালালের পাসপোর্ট, নগদ ৩৫ হাজার টাকা ও ১টি মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। এ নিয়ে ওইদিনই ওয়ারী থানায় একটি মামলা হয়। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় মামলার বাদী র্যাবকে জানান, এক লাখ টাকা দিলে তার ভাইয়ের পাসপোর্ট ফেরত দেবে ছিনতাইকারীরা। র্যাব ছিনতাইকারীদের ধরতে ফাঁদ পাতে। অভিযান চালিয়ে শাহজালালের পাসপোর্টসহ অপর ৬য় ব্যক্তির ছয়টি পাসপোর্ট, অগ্রিম চেকসহ পাঁচ লাখ ১৩ হাজার টাকার চেক এবং আটটি মোবাইল ফোন সেট উদ্ধার করা হয়।
উল্লেখ্য, এর আগে ১৫ অক্টোবর রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দর সড়ক থেকে রিয়াসাত এলাহী চৌধুরী নামে এক যুবককে মাইক্রোবাসে করে পাঁচ-ছয়জন লোক তুলে নিয়ে যায়। পরদিন র্যাব-৩ এর সদস্যরা জানায়, রিয়াসাত এলাহী চৌধুরী নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সদস্য। পরে তার বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলা করে র্যাব। তাকে রিমান্ডেও নেয়া হয়।