ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র পদে নির্বাচনের বিষয়ে দু-এক দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
নির্বাচনের প্রার্থী ঠিক করা নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এখনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক না করলেও সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে দলে চলছে নানামুখী আলোচনা। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নিয়ে ইতিমধ্যে
উভয় দলে অনানুষ্ঠানিক কথাবার্তা চলছে।
এর মধ্যে আলোচনার শীর্ষে আছেন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ। যোগাযোগ করা হলে এ কে আজাদ বলেন, এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের অনেক জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই মূল। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যদি আমার কথা চিন্তা করেন, তাহলে আমি প্রার্থী হব।’
মনোনয়ন পেতে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যাপক যোগাযোগ করছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান। তিনি গতকাল বলেন, তিনি একসময় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছিলেন। মহানগরের তিনটি থানায় সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৬ মাস ধরে মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। দলীয় প্রধান চাইলে তিনি মেয়র পদে ভালো করতে পারবেন।
এ ছাড়া সাবেক সাংসদ চিত্রনায়িকা সারাহ বেগম কবরী, অভিনয়শিল্পী শমী কায়সার, সাংসদ কামাল আহমেদ মজুমদার, ব্যবসায়ী এইচ বি এম ইকবাল প্রমুখের নাম আলোচনায় আছে। গত ডিএনসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমন্বয়ক ছিলেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. ফারুক খান। তিনি গতকাল বলেন, ডিএনসিসির উপনির্বাচন নিয়ে ইসির ঘোষণা দেখে তাঁরা এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করবেন। এখন অনেকে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এর মধ্যে রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব আছেন। বিএনপির সূত্র জানায়, ডিএনসিসির এই উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী কে হবেন, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে গতবারের প্রার্থী তাবিথ আউয়ালকে এবারও দলের প্রার্থী করার সম্ভাবনা বেশি। তাবিথ বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। তাঁর বাবা আবদুল আউয়াল মিন্টু বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান। ২০১৫ সালের নির্বাচনে ভোটের দিন মাঝপথে বিএনপির সিদ্ধান্তে তাবিথ নির্বাচন বর্জন করেন। তারপরও তিনি আনিসুল হকের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রায় তিন লাখ ভোট পেয়েছিলেন। এবার আবারও প্রার্থী হবেন কি না, জানতে চাইলে তাবিথ আউয়াল গত রাতে বলেন, ‘গত নির্বাচনের অভিজ্ঞতা আমাদের কাছে আছে। আগে নির্বাচন কমিশন কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করুক যে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। নির্বাচনে প্রার্থী হব কি না, দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।’ এর বাইরে সাবেক সাংসদ কামরুল ইসলাম ও বিএনপি জোটের শরিক দল বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমানের নাম আলোচনায় আছে। গত ৩০ নভেম্বর আনিসুল হক মারা যাওয়ার পর ডিএনসিসির মেয়র পদটি শূন্য হয়। আইন অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ উপনির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা আছে।
নতুন ১৮ ওয়ার্ড নিয়ে কী হবে
ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যুক্ত ১৬টি ইউনিয়নকে ৩৬টি ওয়ার্ডে বিভক্ত করে গত জুলাই মাসের শেষের দিকে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এর ফলে ঢাকা উত্তরে ১৮টি ওয়ার্ড যুক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট ওয়ার্ড হয়েছে ৫৪টি। আর দক্ষিণে ১৮টি নতুন ওয়ার্ড যুক্ত হয়ে মোট ওয়ার্ড হয়েছে ৭৫টি। নতুন ওয়ার্ডে এখন পর্যন্ত কোনো নির্বাচন হয়নি। নতুন ওয়ার্ডগুলোর ভোটাররা মেয়র পদের উপনির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমান আইনে নতুন এসব ওয়ার্ডে নির্বাচন করা কঠিন। কারণ, সিটি করপোরেশনে নতুন ওয়ার্ড যুক্ত হলে সেখানে কীভাবে নির্বাচন হবে, সে বিষয়ে আইনে সুস্পষ্ট কিছু বলা নেই। নতুন ওয়ার্ডগুলোর ভোটাররা মেয়র নির্বাচনে ভোট দিলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচনও হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচন হলে আইন অনুযায়ী তাদের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। কিন্তু বর্তমান পরিষদ ইতিমধ্যে দুই বছর মেয়াদ পার করে ফেলেছে। এতে সমস্যা তৈরি হতে পারে। এ বিষয়ে গতকাল রোববার সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয়েছিল ইসি সচিবালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদকে। তিনি বলেন, আইনি কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ, ১৮টি ওয়ার্ডে নির্বাচন করার জন্য ইতিমধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ ইসিকে অনুরোধ করেছে। এখানে নির্বাচন করতে বাধা নেই। নতুন ওয়ার্ডগুলো সঙ্গে নিয়ে মেয়র পদে নির্বাচন হবে কি না, তা দু-এক দিনের মধ্যে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবে ইসি। আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, তারাও মনে করছে এই নির্বাচনে নতুন যুক্ত হওয়া ১৮টি ওয়ার্ড নিয়ে আইনি ঝামেলা হতে পারে। স্থানীয় সরকার বিভাগ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। আওয়ামী লীগ আগে দেখতে চায়, নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলো নিয়ে কী সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় ঢুকতে চায় না ক্ষমতাসীন দলটি।