বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার দুপুর পৌনে দুইটার দিকে দুদক কার্যালয় ছেড়ে যান তিনি। এর আগে বেলা পৌনে ১১টায় আবদুল
হাই বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরম্ন করা হয়।
দুদক কার্যালয় ছেড়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের আবদুল হাই বাচ্চু বলেন, ‘যা জানতে চাওয়া হয়েছে, আমি তার উত্তর দিয়েছি। আবার আমাকে ডাকা হলে আমি সহযোগিতা করব।’অভিযোগ সম্পর্কে বক্তব্য জানতে চাইলে বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখনো তদন্ত্ম চলছে। এরপর তিনি তার কালো প্রাডো গাড়িতে করে দুদক কার্যালয় ছেড়ে যান।
বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু ও তার নেতৃত্বাধীন পরিচালনা পর্ষদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সম্প্রতি নোটিশ দেয় দুদক। অনুসন্ধান শুরম্ন হওয়ার প্রায় চার বছর পর দুদক প্রথমবারের মতো তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ দেয়। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের কয়েক দফা পর্যবেক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক এমন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়। আবদুল হাই বাচ্চুসহ পর্ষদের ১১ জনকে পর্যায়ক্রমে তলব করা হয়। গতকাল জিজ্ঞাসাবাদে উপস্থিত থাকার জন্য ১৮ নভেম্বর আবদুল হাই বাচ্চুর বনানীর ডিওএইচএসের বাড়ির ঠিকানায় নোটিশ পাঠানো হয়। পর্ষদের অন্য সদস্যদেরও ডাকা হয় বিভিন্ন দিনে। রোববার পর্যন্ত্ম দুদক বেসিক ব্যাংকের সাবেক ১০ জন পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার সকাল ৯টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে যান আবদুল হাই বাচ্চু।
সকাল ১০টার দিকে আবদুল হাই বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে এই মামলায় বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হচ্ছে কিনা, জানতে চাইলে দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা তো আমরা কেউ বলতে পারব না। তদন্ত্ম কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদ করে কী পেয়েছেন, তা বিচার-বিশেস্নষণ করে বলতে পারবেন। তদন্ত্মে প্রক্রিয়া যা আছে, তা হবে।’
আবদুল হাই বাচ্চু অনেক প্রভাবশালী, সেই প্রভাবে এই মামলায় পার পেয়ে যেতে পারেন- এমন একটি কথা প্রচলিত আছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রভাব দিয়ে কে কবে পার পেয়েছে। বহু লোকের প্রভাব তো দেখেছেন। বাইরে অনেক প্রভাব। প্রভাব দিয়ে পার পেয়েছে- এমন একজন লোকের নাম বলতে পারেন?’ দুদক চেয়ারম্যান বলেন, তিনি শুনেছেন বেসিক ব্যাংকের সেই আলোচিত ঋণের মধ্যে ৫৫৩ কোটি টাকা নগদ দিয়ে দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকা ঋণ পুনরায় তফসিলীকরণ করা হয়েছে।
২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা এবং শান্ত্মিনগর শাখা থেকে মোট সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণের অভিযোগ ওঠার পর তদন্ত্মে নামে দুদক।
ঋণপত্র যাচাই না করে জামানত ছাড়া, জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণদানসহ নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বিধি-বহির্ভূতভাবে ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ ওঠে ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের বিরম্নদ্ধে।
প্রায় চার বছর অনুসন্ধান শেষে এই অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনায় গত বছর রাজাধানীর তিনটি থানায় ১৫৬ জনকে আসামি করে ৫৬টি মামলা করে দুদক। আসামিদের মধ্যে ২৬ জন ব্যাংক কর্মকর্তা এবং বাকিরা ঋণগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক জরিপ প্রতিষ্ঠানে যুক্ত।
তবে আসামির তালিকায় বাচ্চু বা ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের কেউ না থাকায় দুদকের ওই তদন্ত্ম নিয়েই প্রশ্ন ওঠে।
এ বিষয়ে দুদকের বক্তব্য ছিল, ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় বাচ্চুর সংশিস্নষ্টতা তারা পায়নি। তাই তার নাম আসামির তালিকায় রাখা হয়নি।
কিন্তু গতবছর ফেব্রম্নয়ারিতে সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংকের নিয়োগ করা নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে অনিয়মিত ঋণ মঞ্জুর, নিয়োগ ও পদোন্নতিতে পরিচালনা পর্ষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর সংশিস্নষ্টতা ছিল।
আর চলতি বছর আগস্টে এক মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের মামলায় বাচ্চু ও পরিচালনা পর্ষদকে আসামি না করায় উষ্মা প্রকাশ করে।
ব্যক্তি যেই হোক না কেন- এ ধরনের মামলায় আসামি করার ক্ষেত্রে ‘পিক অ্যান্ড চুজ’ যেন না হয় সে বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) সে সময় সতর্ক করে আদালত।
এ নিয়ে সমালোচনার মধ্যে দুদকের একজন পরিচালক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আসামির তালিকায় নাম না থাকলেও তদন্ত্মের প্রয়োজনে বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য বাচ্চুকে ২০০৯ সালে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয় সরকার। ২০১২ সালে তার নিয়োগ নবায়নও হয়।
কিন্তু ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলে ২০১৪ সালে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরম্নল ইসলামকে অপসারণ করার পর চাপের মুখে থাকা বাচ্চু পদত্যাগ করেন।
অর্থমন্ত্রী তখন বলেছিলেন, পদত্যাগ করলেই পার পাবেন না বাচ্চু। তদন্ত্মে দোষ প্রমাণিত হলে তার বিরম্নদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার হবে।