দৈনিক রূপবাণীর সম্পাদক এবং প্রকাশকের বিরুদ্ধে গেন্ডারিয়া থানায় পুলিশের দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা পুনঃতদন্ত সাপেক্ষে অবিলম্বে মামলাটি প্রত্যাহার ও দোষীদের শাস্তির দাবি

0
696

দৈনিক রূপবাণীর সম্পাদক এবং প্রকাশকের বিরুদ্ধে গেন্ডারিয়া থানায় পুলিশের দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা পুনঃতদন্ত সাপেক্ষে অবিলম্বে মামলাটি প্রত্যাহার এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সংলগ্ন সড়কে সাংবাদিকদের জাতীয়, স্থানীয় এবং আঞ্চলিক সংবাদপত্র সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের সংগঠন এবং বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকার পক্ষ থেকে প্রতিবাদী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংবাদপত্রের সম্পাদক, প্রকাশক ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থেকে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেন, গণতন্ত্রবান্ধব সরকার সঙ্গত কারণেই গণমাধ্যম বান্ধব সরকার হবেন এটাই স্বাভাবিক। সেই সরকারের বিশেষ কোন বাহিনী বিশেষ কোন গোষ্ঠী যদি পেশাদায়িত্ব পালনে সাংবাদিকদের সহায়তা না করে বা তাদের পাশে না থেকে তাদেরকে নির্যাতন করাটা তাদের পেশাদায়িত্বের গুরুত্বপূর্ণ কিছু মনে করেন, তাহলে তার কঠিন প্রতিবাদ জানানো ছাড়া সাংবাদিকদের আর কিছুই থাকতে পারে না। যদিও এটা একান্তই দুঃখজনক বিষয়। ত্রিশ বছর প্রকাশনা দায়িত্ব পালনে দৈনিক রূপবাণী’র ভূমিকা সবটাই গণতন্ত্রের পক্ষে। গণতান্ত্রিক আন্দোলন, স্বৈরাচার বিরোধী সংগ্রাম, সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার নিরন্তর প্রচেষ্টা, সময়োপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থার বিকাশ, সাধারণের বাস উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি, জাতি ধ্বংসী দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া, শিশু নির্যাতন, নারী নির্যাতন এসবের বিরুদ্ধে লিখতেই থাকা যে পত্রিকাটির ত্রিশ বছরের মূল আদর্শ সেই রূপবাণী’র সম্পাদক এবং প্রকাশককে পুলিশ কোনো ধরনের আইনী পথে না হেঁটে তাদের দায়েরকৃত মামলার চার্জশিট পর্যন্ত দাখিল করে ফেলেছে। চার্জশিট দাখিলের পর রূপবাণী সম্পাদক একজন ক্রাইম রিপোর্টারের মাধ্যমে ফোনে জানতে পারেন যে তাকে একটি মামলায় জড়িয়ে আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। এর আগে এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। এমনকি কোনো পুলিশ কর্মকর্তাও তাকে এ বিষয়ে কোনো কথা সাক্ষাতে বা ফোনেও বলেননি। সম্পূর্ণ অবাক করার মতো এই বিষয়টি জানতে গিয়ে আরো বেশি করে হতবাক করেছে শুধু রূপবাণী সম্পাদককেই নয়, সংশ্লিষ্ট সকলকেও। মামলাটির প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে জনাব ফারুক আহমেদের কোনো নাম নেই। এজাহারপত্রে জনৈক আসামীর বরাত দিয়ে জনাব সম্পাদকের নামটি উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে সেদিনই ২৭/০৩/২০১৭ গেন্ডারিয়ার ৩৬নং মামলা বিষয়ক যে প্রেস রিলিজটি গেন্ডারিয়া থানা থেকে সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমে দেয়া হয়েছে, সেখানেও জনাব ফারুক আহমেদের নাম নেই। সাক্ষীদের জবানবন্দি শিরোনামে চার্জশিটপত্রে যে নথি দেওয়া হয়েছে তাতে পুলিশ ছাড়া সাধারণ কোনো সাক্ষীই সম্পাদক ফারুক আহমেদের নাম উল্লেখ করেনি। এমনকি কোনো কিছুই এ সম্পর্কে তারা বলেননি। অসামঞ্জস্য এবং স্বাভাবিক নিয়ম-নীতির বাইরে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা বা অন্য কি কারণে রূপবাণী সম্পাদকের নামটি এ মামলায় এসেছে তা এখনও সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে অজ্ঞাত। এমনকি সংশ্লিষ্ট থানায় প্রশাসনিক দায়িত্বে যারা রয়েছেন, তারাও টেলিফোনিক আলাপে এবং বিশেষ লোকের মাধ্যমে বলে বেড়াচ্ছেন এ সম্পর্কে তারাও কিছু জানেন না। এই জানা এবং না জানার মধ্যে সম্পাদক উচ্চ আদালত থেকে জামিন গ্রহণ করেছেন এবং পেশাজীবী সকলের সঙ্গে আলোচনা করে এই প্রতিবাদী মানববন্ধনে অংশীদার হয়েছেন। সম্পাদক স্পষ্ট করেই বলেছেন, যে তদন্তটি ইতিপূর্বে পুলিশের ভাষায় অনুষ্ঠিত হয়েছে সেখানে একজন আসামী তার নাম বলেছেন। একজন কিছু বললেই একজন সম্মানিত নাগরিক বা একজন সাধারণ নাগরিককে আসামী করে তার নামে চার্জশিট দেয়া যায় এটা আমাদের জানা মতে প্রচলিত আইনের মধ্যে পড়ে না। যে কেউ যে কারো বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে যে কোনো নাম বলতেই পারে। নিজে রিমান্ডের হাত থেকে বাঁচার জন্যে সে বলাবলি তো চলছেই। সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়া, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা ছাড়া মামলার চার্জশিট করে আদালতে পাঠিয়ে দিতে হবে এমন বিষয় আমাদের আইন সমর্থন করে না। পেশাজীবী সাংবাদিককে কারণে-অকারণে পুলিশ নির্যাতন করবে এটা মনে হয় আমাদের দেশেও একটি ফ্যাশনে উন্নীত হয়েছে। অথচ উচিত ছিল স্বাধীন দেশে সাংবাদিক এবং পুলিশের আন্তরিক সম্পর্ক জোড়দার। সাংবাদিক এবং পুলিশের সমান্তরাল অনুসন্ধানে যে শক্ত সংবাদ বা ঘটনার সঠিক চিত্র প্রকাশ যতটুকু সহজ, একক পুলিশের পক্ষে সে বিষয়টি তত সহজ নয়। বলতে গেলে সম্ভবও নয়। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা তাদের বাৎসরিক প্রতিবেদনে বারবারই উল্লেখ করছে, পুলিশের কার্যক্রমে সবচেয়ে বড় সহযোগী সংগঠন গণমাধ্যমের সচেতন কর্মীবাহিনী। তারা স্বীকার করেন, তাদের একক প্রতিবেদন কখনোই সঠিক এবং সত্য প্রতিবেদন নয়। আর সে কারণেই কোনো ঘটনার অনুসন্ধান করতে গিয়ে কোনো কালেই ইতিহাসবিদ বা তথ্য অনুসন্ধানীরা পুলিশের নথিকে স্বাক্ষ্য হিসেবে নেয় না। সেই নথিকে কখনোই সত্যাশ্রয়ী বা যথার্থ কোনো প্রতিবেদন বা উপকরণ মনে করা হয় না। আমরা বলছি না আমাদের দেশের সকল সাংবাদিক-সম্পাদক সার্বিক জ্ঞান সমৃদ্ধ পেশাজীবী মানুষ। তবে তাদের না জানাদের সংখ্যা অনেক কম। দুঃখজনক সংবাদ হলো-আমাদের দেশের স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ঐ না জানা বা শিক্ষানবিস সাংবাদিকদেরকেই যথার্থ সাংবাদিক হিসেবে কখনো কখনো মূল্যায়ন করে বসে। ত্রিশ বছর একজন সম্পাদক এবং প্রকাশক তার সীমিত ক্ষমতার মধ্য থেকে গণমাধ্যমের যে সেবা করে আসছে তার প্রতি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন কোনো কিছু না জেনে এ ধরনের একটি মামলা দায়ের বা চার্জশিট প্রদান করার মতো সামগ্রিক গণমাধ্যমের সত্যাশ্রয়ী কর্মী সাধারণকে লাঞ্ছিত করা। অপমানিত করা এবং সম্পূর্ণ সাংবাদিক সমাজকে পুলিশ প্রশাসনের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়া নামান্তর।মানববন্ধনে বক্তাগণ আরো বলেন, আমরা রূপবাণী’র সম্পাদকের মামলা প্রত্যাহারের সরাসরি কোনো দাবি জানাতে চাই না। আমাদের দাবি, বিষয়টি আইনানুগ তদন্ত করা হোক। প্রয়োজনে বিচার বিভাগীয় তদন্তও করা যেতে পারে। সার্বিক তদন্ত করে যদি প্রমাণিত হয় মানব পাচারের মতো ঘৃণ্য এই মামলাটির কোন অংশে সম্পাদক ফারুক আহমেদ জড়িত ছিলেন, তবে তার বিচার হোক। আর যদি না হয়ে থাকে তদন্তে যদি জনাব ফারুক আহমেদের কোনো সম্পৃক্ততা না থেকে থাকে, তাহলে কেনো এমনটি করা হলো, কেন একজন সম্পাদককে এই ধরনের নষ্ট মামলায় জড়িয়ে দেয়া হলো, কেন তার সাথে কোন ধরনের আলোচনা ছাড়া তাকে আসামী হিসেবে আদালতের মুখোমুখি করা হলো? কারা কি উদ্দেশ্যে এমনটি করে পুলিশ প্রশাসনে চিরায়ত ভাবমূর্তিকে বিনষ্ট করলো, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবিই এই মানববন্ধনের মূল্য বক্তব্য। তবে মানববন্ধন থেকে ঘোষণা করা হয়, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে যদি এর কোন সূরাহা না হয়, তাহলে যথাযথ স্থানে যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে দাবি আদায় করা হবে। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন-বিশিষ্ট সাংবাদিক-কলামিস্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম রুহুল আমিন, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব ওমর ফারুক, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অর্গানাইজেশন এর সভাপতি মোরশেদ, দৈনিক রূপবাণী’র সম্পাদক ফারুক আহমেদ, এড. মোঃ মোস্তফা কামাল, দৈনিক নব জীবন পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক ডা. মুহাম্মদ এনামুল হক, সাংবাদিক শাহজাহান চৌধুরী, সাংবাদিক তৌহিদুর রহমান, জাতীয় সাপ্তাহিক শীর্ষ অপরাধ-এর সম্পাদক হুমায়ুন আহমেদ মন্টু, সাংবাদিক নেতা মন্টু, সাংবাদিক মশিউর রহমান প্রমুখ

Advertisement

 

Advertisement

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here