অপরাধ বিচিত্রাঃ
নদীতে অপরিশোধিত ট্যানারি বর্জ্য ফেলার বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নিতে হবে। বর্জ্য শোধনাগার ব্যবহারে গাফিলতি রোধ করতে হবে। যদি শিল্পপল্লীর কেন্দ্রীয় পরিশোধনাগারের কোনো ত্রুটি থাকে, তাও দ্রুত ঠিক করতে হবে। সাভারে স্থানান্তরিত ট্যানারি শিল্প পরিবেশসম্মতভাবে পরিচালনা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কোনো রকম গাফিলতি রাখা যাবে না। রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি (চামড়া কারখানা) সরিয়ে নেয়া হলেও নদী দূষণ পরিস্থিতি পালটায়নি। বুড়িগঙ্গার বদলে ট্যানারিগুলো দূষণ করছে এখন ধলেশ্বরী নদী। সাভারে স্থাপিত ট্যানারি শিল্পের বর্জ্যে ধলেশ্বরীর পানি দূষিত হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নদীরক্ষা সংক্রান্ত টাস্কফোর্স। বুড়িগঙ্গা-শীতলক্ষ্যা বাঁচাতে ধলেশ্বরীকে যদি মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হয়, তা হলে আর লাভ হলো কী? পাকিস্তান আমলে হাজারীবাগে বুড়িগঙ্গার তীরে গড়ে উঠা ট্যানারিগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও কারখানার অশোধিত বর্জ্য ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গাকে পুরোপুরি দূষিত করে ফেলেছে। দূষণ গিয়ে ঠেকেছে শীতলক্ষ্যাতেও। এই অবস্থায় সরকার হাজারীবাগ থেকে কারখানাগুলো সাভারে সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয় প্রায় ১৩ বছর আগে। বারবার সময়ক্ষেপণের পর অবশেষে কারখানাগুলোর একাংশ সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বাকিগুলো প্রতিস্থাপনের কাজ চলছে।
হাজারীবাগের কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বুড়িগঙ্গার দূষণ পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। কিন্তু সাভারে চামড়া শিল্প নগরীর পাশে ধলেশ্বরীতে দূষণ ছড়াচ্ছে সেখানকার কারখানা থেকে ফেলা অশোধিত বর্জ্য। ইতোমধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ট্যানারি সাভারে স্থানান্তর হতেই হাজারীবাগের মতো পরিবেশ দূষণের আলামত দেখা যাচ্ছে সাভারের ট্যানারিশিল্প নগরীর ভেতর, আশপাশের এলাকা ও ধলেশ্বরী নদীতে। এই পরিস্থিতিতে ধলেশ্বরী আরেক বুড়িগঙ্গা হচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশবাদীরা। সাভারে ট্যানারি শিল্প এলাকায় বর্জ্য পরিশোধনে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা (সিইটিপি) রাখা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ হলো, নদীর তীরে গড়ে ওঠা শিল্প প্রতিষ্ঠানে ইটিপি থাকলেও তারা চালু রাখে না। গত বুধবার সচিবালয়ে নৌম ন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ট্যাক্সফোর্সের ৩৬তম সভায় সেখানকার বর্জ্য পরিশোধন ব্যবস্থার সফলতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী নিজেই বলেন, নদীর তীরে গড়ে ওঠা শিল্প প্রতিষ্ঠানে ইটিপি থাকলেও তারা চালু রাখে না। পরিবেশের লোক গেলে তারা চালু করে। লোকজন চলে গেলে ফের বন্ধ করে দেয়। এতে অনেক নদী দূষিত হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এখন দেখার বিষয় এই নির্দেশ কবে কতটা বাস্তবায়িত হয়। সাভারে সুপরিকল্পিতভাবে নির্মিত শিল্পপল্লীতে চামড়া শিল্প স্থানান্তর আমাদের পরিবেশ সুরক্ষার ব্যাপারে আশাবাদী করে তুলেছিল, কিন্তু সেখানেও দূষণের আলামত আমাদের ফের উদ্বিগ্ন করছে। আমরা চাই না ট্যানারি বর্জ্যে ধলেশ্বরী আবার বুড়িগঙ্গার ভাগ্য বরণ করুক। এর জন্য নদীতে অপরিশোধিত ট্যানারি বর্জ্য ফেলার বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নিতে হবে। বর্জ্য শোধনাগার ব্যবহারে গাফিলতি রোধ করতে হবে। যদি শিল্পপল্লীর কেন্দ্রীয় পরিশোধনাগারের কোনো ত্রুটি থাকে, তাও দ্রুত ঠিক করতে হবে। সাভারে স্থানান্তরিত ট্যানারি শিল্প পরিবেশসম্মতভাবে পরিচালনা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কোনো রকম গাফিলতি রাখা যাবে না। নদীরক্ষা সংক্রান্ত টাস্কফোর্স এ ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেছে, এটা ইতিবাচক। টাস্কফোর্সের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ত্বরিৎ ব্যবস্থা নিতে হবে।