ঝালকাঠি প্রতিনিধি
ঝালকাঠির রাজাপুরে সোহাগ ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় উপজেলার পুটিয়াখালি গ্রামের ক্ষুদ্র মৎসজীবি শহিদুল হাওলাদারের স্ত্রী নবজাতকের মা মিনারা বেগমের (৩৮) মৃতুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১৪ দিন বয়সের নবজাতক রবিউলকে বাচিয়ে রাখার শঙ্কায় পরিবারের লোকজন চরম হতাশাগ্রস্থ। রোববার বিকেলে ওই বাড়িতে গেলে মিনারার স্বামী শহিদুল, ভাবি নাসিমা বেগমসহ তার বাড়ির একাধিক লোক অভিযোগ করে বলেন, মিনারা গত ১লা অক্টোবর রোববার সকালে বাড়িতে বসে স্বভাবিকভাবে একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেয় এবং পরে জ¦রে আক্রান্ত হয়। জ¦র না কোমায় ৬ অক্টোবর শুক্রবার তাকে রাজাপুর সোহাগ ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। এমবিবিএস ও কোন সরকারি নিয়োগ প্রাপ্ত ডাক্তার ছাড়া প্যাড়ামেডিকেল পাসকৃত মউিদ্দিনকে দেখান এবং তিনি ব্যবস্থা পত্রদিলে সেই অনুযায়ী ঔষধ কিনে মিনারাকে ওই দিনই বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। ওই ঔষধ খাওয়ালে তাতে জ¦র আরো বৃদ্ধি পাওয়ায় ৮ অক্টোবর রোববার আবার সোহাগ ক্লিনিকে একই নামধারি ডাক্তার মহিউদ্দিনের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। মহিউদ্দিন আবারো অন্যান্য ঔষধের সাথে ২২০ টাকা করে ৭টি ইনজেকশন লিখে দিয়ে মিনারাকে ক্লিনিকে ভর্তি করে বিভিন্ন টেস্ট করায়। সোহাগ ক্লিনিকে ৫দিন ভর্তি থেকে সকল ঔষধের সাথে ওই ইনজেকশনের পাঁচ দিনে ৫টি ব্যবহার করার পরে মিনারার অবস্থার অবনতি হলে ১২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকালে নাসিমা মহিউদ্দিনকে বলেন, সুস্থ্য করার ব্যবস্থা না থাকলে রোগী ছেড়ে দিন, আমরা বরিশাল বা অন্য কোথাও চিকিৎসা করাবো। কিন্তু মহিউদ্দিন কোন জবাব না দিয়ে তিনি একই ক্লিনিকের ঠিক তার সমকক্ষ নামধারি ডাক্তার মোতাহারের কাছে পাঠান। ১০ অক্টোবর মঙ্গলবার মোতাহার নতুন করে ব্যবস্থা পত্রে বসবুব(২০সম),বফবসরফব, ারংপবৎধষমরহব(৫০সম), ভধংঃ ঢজ(৬৬৫সম) , সবষঢ়ৎবফ৮ ট্যাবলেট লিখে দেন। তার ব্যবস্থা পত্রে রোগের কোন বর্ণণা না দিয়ে ওইসব ঔষধ লিখে দেন। এরপর ওইসব ঔষধ ব্যবহার করার পর গত ১২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মিনারা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। মৃত্যুর পর বিষয়টি গোপন রেখে অন্যস্বজনদের ২ ঘণ্টা জিম্মি করে ওই গৃহবধূর স্বামী শহিদুলকে খবর দিয়ে তাকে নানাভাবে প্রলোভন ও চাপ দিয়ে দফারফার মাধ্যমে ম্যানেজ করে প্রথম চিকিৎসার ব্যবস্থা পত্র ও ভর্তির কাগজপত্র গায়েব করে ফেলে। গোপনে লাশ বাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয়। মিনারার ভুল ও অপচিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়েছে এবং ক্লিনিক সংশ্লিষ্ট কেহই তাদের সঠিক পরামর্শও দেয়নি বলে পরিবারের লোকজনসহ এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। তাদের দাবি রোগীকে বরিশাল বা অন্যত্র পাঠালে মহিউদ্দিনের ব্যাবস্থাপত্র ভুল প্রমান হবে বলে তারা অন্য কোথাও নিতেও দেয়নি। এলাকার প্রবীন আ. কাদের মুন্সি বলেন, মিনারাকে সোহাগ ক্লিনিকে রেখে ৫দিন ধরে ইনজেকশন না দিয়ে সরকারি হাসপাতালে পাঠালে মিনারার মৃতু নাও হতে পারতো। বর্তমানে ১৬ দিন বয়সের নবজাতক রবিউলকে বাচিয়ে রাখাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এভাবে উপজেলার বিভিন্ন স্থানের রোগীদের ভুলচিকিৎসাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে সোহাগ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি সোহাগ ক্লিনিকে বরিশাল র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়ে নানা অনিয়মের দায়ে ক্লিনিকের মালিককে অর্ধলাখ টাকা জরিমানা করেছিলো। এর পূর্বে সোহাগ ক্লিনিককে বিভিন্ন ত্রুটির কারনে অপারেশন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ। পরে ম্যানেজ করে আবার বীরদর্পে নানা অপচিৎিসা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে সোহাগ ক্লিনিকের মালিক আহসান হাবিব সোহাগ জানান, মারা যাওয়ার সময় তিনি ক্লিনিকে ছিলেন না, পরে শুনেছেন একজন রোগী রক্তশূণ্যতায় মারা গেছে। বিস্তারিত ডাক্তার বলতে পারবেন। তবে যে ২ জন ব্যবস্থাপত্র ও ঔষধ দিয়েছে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তার সঠিক চিকিৎসা হয়নি এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। ঝালকাঠির সিভিল সার্জন শ্যামল কৃষ্ণ হাওলাদার জানান, এ বিষয়ে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে ক্লিনিকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।