নি র্বা চ নী হা ল চা ল – ময়মনসিংহ ৯ বড় দু’দলেই কলহ

0
843

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ময়মনসিংহ-৯ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন কৌশলে  ঘোষণা দিচ্ছেন নিজের প্রার্থিতা। যোগ দিচ্ছেন সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে। উঠোন বৈঠকসহ দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে চালাচ্ছেন প্রচারণা। নান্দাইল উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনটি। এখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দু’দলেই বিরাজ করছে কোন্দল।

Advertisement

দশম সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই আওয়ামী লীগের অন্তর্কলহ প্রকাশ্যে চলে আসে। কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে আছে বিএনপিও। আগামী নির্বাচনে আসনটি ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ, আর পুনরুদ্ধার করতে চায় বিএনপি। অবশ্য জাতীয় পার্টি, জাসদসহ অন্য রাজনৈতিক দলে মনোনয়ন নিয়ে অস্বস্তি নেই। আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন প্রার্থী প্রচারণার মাঠে রয়েছেন। সম্ভাব্য প্রার্থী হলেন- বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন
, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম (আরসিডিএসপি),  উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আবদুল মালেক চৌধুরী স্বপন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শাহজাহান কবীর সুমন, বিশিষ্ট শিল্পপতি এডিএম সালাউদ্দিন হুমায়ুন। দৃশ্যত একাধিক গ্রুপে বিভক্ত নান্দাইল আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। নেতাদের সঙ্গে তাল মিলাতে গিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ছে তৃণমূলের কর্মীরাও। মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম পূর্ণাঙ্গ কমিটির সভাপতি ও  আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক দাবি করে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। নানা কায়দায় প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সালাম বিভিন্ন দলীয় কর্মকাণ্ডে যোগদানসহ দল গোছানোর কাজে ব্যাপক সময় ব্যয় করছেন। ফলে সঙ্গত কারণেই আওয়ামী লীগ মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নিজ দলের নেতারাই শক্ত প্রতিপক্ষ। উপজেলার নেতারাই এখন একে-অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। এলাকার আধিপত্য বিস্তার আর নেতৃত্বের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় দ্বন্দ্ব-সংঘাতেও জড়িয়ে পড়ছেন। ২০১৪ সালের ২০শে নভেম্বর দুই গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মুখোমুখি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে সালাম গ্রুপের আবুল মনসুর ভূঁইয়া নামে এক আওয়ামী লীগ নেতা নিহত হন। নিজ দলের নেতাকর্মীদের নামে একে-অপরের বিরুদ্ধে হামলা, মামলা ও হয়রানির অভিযোগ আছে বিস্তর। ২০০৮ সালের নির্বাচনে  সংসদ সদস্য হন মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালামের মনোনয়ন ঋণখেলাপির কারণে বাতিল হলে বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে এই দুইজন ছাড়া কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শাহজাহান কবীর সুমনের নাম বেশ জোরশোরে শোনা যাচ্ছে। দলের সাংগঠনিক কাজের বাইরেও শাহজাহান কবীর সুমন নিয়মিত নিজের নির্বাচনী এলাকায় নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণের মাঝে কাজ করে যাচ্ছেন। দলের নেতাকর্মীদের মাঝে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে তুলেছেন। শাহজাহান কবীর সুমন বলেন, জনগণের সেবা করার জন্য ছাত্রাবস্থা থেকেই রাজনীতি শুরু করি এবং নিজের এলাকার জনগণের সেবা দিয়ে যাচ্ছি বিভিন্নভাবে। নান্দাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভক্তির কারণে ইমেজ সংকটে পড়েছেন বর্তমান এমপি আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন এমন কথা জানিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ২০১৪’র ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে এক রকম হঠাৎ করেই নৌকা প্রতীক নিয়ে আবির্ভূত হন আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন। তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই জেনারেল সালাম গ্রুপের নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে পাঁচমিশালী লোকদের নিয়ে নতুনধারা সৃষ্টি করে দলে বিভাজন শুরু করেন। ফলে এলাকায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন্ন হয়েছে মারাত্মকভাবে। যেই প্রতিবাদ করেছেন তাকেই দল থেকে বিতাড়িত হতে হয়েছে।
এমপি আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন এমপি বলেন, জেনারেল সালাম গ্রুপের লোকজন আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট। আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে এ সব অপপ্রচার চালাচ্ছে।
এক্ষেত্রে মনোনয়ন প্রত্যাশী এডিএম সালাউদ্দিন হুমায়ুনের নাম জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। নৌকার হাল ধরে রাখার জন্য শক্ত মাঝি মনোনয়ন দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অনেকেই।
এদিকে বিএনপি’র বেশ কয়েকজন প্রার্থী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা হলেন- সাবেক এমপি খুররম খান চৌধুরী,  সাবেক ছাত্রদল নেতা ও মালয়েশিয়া বিএনপি’র প্রকাশনা সম্পাদক ব্যবসায়ী মামুন বিন আবদুল মান্নান, সাবেক এমপি আনোয়ারুল হোসেন খান চৌধুরীর ছেলে ইয়াছের খান চৌধুরী, সৌদি আরব বিএনপি’র পূর্বাঞ্চলীয় শাখার সভাপতি রফিকুল ইসলাম ও তার ছোটভাই নান্দাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র আজিজুল ইসলাম পিকুল।
ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক ও বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য চারবারের নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য খুররম খান চৌধুরী এলাকায় নানা দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি দুইবার জাতীয় পার্টি ও দুইবার বিএনপি থেকে নির্বাচিত হন। এদিকে আন্দোলন-সংগ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত নেতাদের পাশে দাঁড়ানোয় আলোচনায় আসেন গুরুদয়াল কলেজের সাবেক ছাত্রনেতা মামুন। নান্দাইল বিএনপি’র তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছেন তিনি। এছাড়া বিএনপি’র একটি বড় অংশ রয়েছে তার সঙ্গে। মামুন বিন আবদুল মান্নান বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই দলের জন্য কাজ করছি। এখন আমার এলাকার অবহেলিত সাধারণ মানুষের জন্যও কাজ করতে চাই। দলের অপরাপর রাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনায় ধানের শীষের মনোনয়ন চাইব। ওদিকে সৌদি প্রবাসী একেএম রফিকুল ইসলামও এলাকায়  প্রচারণা চালাচ্ছেন।
অপরদিকে ১৪ দলীয় জোট থেকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ইনু গ্রুপ থেকে এডভোকেট গিয়াস উদ্দিন প্রার্থিতা ঘোষণা করে সংবাদ সম্মেলন করে দলীয়ভাবে কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া জাতীয় পার্টির নান্দাইল উপজেলা কমিটির সভাপতি হাসনাত মাহমুদ তালহা জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

Advertisement

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here