নেপালের ঐতিহাসিক ভোট

0
533

অপরাধ বিচিত্রাঃ রাজধানী কাঠমান্ডুতে ভোট দিচ্ছেন এক ভোটার১৮ বছর পর রোববার সংসদ ও প্রাদেশিক নির্বাচনে প্রথম দফার ভোট দিয়েছে নেপালের জনগণ। রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ শেষে, রাজতন্ত্র অবসানের এক দশক পর এবারের নির্বাচন হিমালয়ের কোলে থাকা দেশটিতে শান্ত্মি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা নিয়ে আসবে বলেও প্রত্যাশা তাদের। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু অঞ্চলে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে এবং এর জন্য মাওবাদীদের দায়ী করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি
নেপালের ভোটার সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। সংসদে আসন রয়েছে ২৭৫টি। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নতুন সংবিধানের অধীনে এই নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচন ঘিরে সহিংসতার আশঙ্কা সত্ত্বেও রোববার সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে দেখা গেছে ভোটারদের। রাজধানী কাঠমান্ডুর কাছে কাগাতিগাউন কেন্দ্রে দেয়া প্রথম ভোট দেয়া ৩২ বছর বয়সী বাসচালক সুরেশ বালসামি বলেন, ‘শান্ত্মি, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য ভোট দিয়েছি আমি।’ নতুন সংবিধান অনুযায়ী, রোববার নেপালে প্রথম দফা ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। ৭ ডিসেম্বর হবে দ্বিতীয় দফা ভোট, এরপর ফল ঘোষণা করা হবে। দুরূহ গণনা পদ্ধতির জন্য ফল ঘোষণায় কয়েকদিন লেগে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচনে নেপালি কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ বাম দলগুলোর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাজতন্ত্রপন্থিদের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের মাধেসি পার্টি নেপালি কংগ্রেসের জোটে আছে। সর্বশেষ সংসদের প্রধান বিরোধীদল কমিউনিস্ট ইউএমএল পার্টির সঙ্গে জোট বেঁধেছে মাওবাদীরা। তাদের সঙ্গে আছে ছোট ছোট আরও কয়েকটি বাম দল।
রাজতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের সংবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা নির্ধারণের উদ্দেশে ২০০৮ ও ২০১৩ সালে দুইবার সাংবিধানিক পরিষদ গঠনের জন্য নেপালিরা ভোট দিয়েছিল। কয়েক বছরের টানাপড়েন ও বিতর্কের পর ওই সাংবিধানিক পরিষদেই নতুন সংবিধান অনুমোদিত হয়, যার অধীনেই এবারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচনে দেড় কোটি ভোটার ২৭৫ জন সাংসদের পাশাপাশি সাতটি আলাদা প্রদেশে প্রাদেশিক সংসদের প্রতিনিধিও ঠিক করবেন।
মাওবাদী কৃষক গেরিলাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর কয়েক দশকের গৃহযুদ্ধের অবসানের পর প্রথমবারের মতো হওয়া এই নির্বাচন নেপালকে সত্যিকারের গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্রে পরিণত করবে বলে প্রত্যাশা ভোটারদের। উলেস্নখ্য, ভারত ও চীন উভয়েই নেপালের জলবিদু্যৎ প্রকল্প ও ভৌগোলিক অবস্থান থেকে সুবিধা নিতে চায়। নেপালি কংগ্রেস জোটের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতা সুবিদিত, অন্যদিকে মাওবাদীরা চীনের কট্টর সমর্থক হিসেবে পরিচিত। এসব কারণে আঞ্চলিক রাজনীতিতেও এই নির্বাচনকে গুরম্নত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। পর্যটন ও বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল নেপালের অর্থনীতির পালাবদলেও এবারের নির্বাচন গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মন্ত্মব্য পর্যবেক্ষকদের।
বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশটির তিন কোটি নাগরিকের দৈনিক আয় ১৫০ টাকার নিচে। এদের অনেকেই এখনো ২০১৫ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের ক্ষতিই কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ৮ দশমিক এক মাত্রার ভয়াবহ ওই ভূমিকম্পে ৯ হাজারের বেশি লোক নিহত হয়েছিল, আহতের সংখ্যা ছিল ২০ হাজার।

Advertisement
Advertisement

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here