অপরাধ বিচিত্রা প্রতিবেদকঃ ঢাকা রাজধানীর বনানীতে গতকাল মঙ্গলবার রাতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে ব্যবসায়ী সিদ্দিক মুন্সিকে (৫৫) হত্যার ঘটনাটি পরিকল্পিত বলে পুলিশ ধারণা করছে। তিনি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এস মুন্সি ওভারসিজের মালিক ছিলেন। পুলিশ বলছে, এটি ‘টার্গেট কিলিং’ (পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড) বলে তাদের ধারণা। কারণ, সিদ্দিক মুন্সি কারও কাছ থেকে টাকা নেননি। তাঁর কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততাও পাওয়া যায়নি। সব বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত করা হচ্ছে। আর ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ অস্পষ্ট। বোঝা যাচ্ছে না কয়জন এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন। দুর্বৃত্তদের এলোপাতাড়ি গুলিতে প্রতিষ্ঠানটির তিন কর্মচারী মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে মোস্তাক (৪২), মোখলেসুর রহমান (৩৮) ও পারভেজ আহমেদ (২৮) আহত হন। তাঁদের বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। স্বজনদের দাবি, চাঁদা না দেওয়ায় সিদ্দিক মুন্সিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ২০১৬ সালে ১ জুলাই গুলশানে ২ নম্বরে হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর কূটনৈতিকপাড়া বলে পরিচিত গুলশান, বনানী ও বারিধারায় পুলিশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। এর মধ্যে এই হত্যার ঘটনা ঘটল। বনানী বি ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের ১১৩ নম্বর বাড়ির নিচতলায় এস মুন্সি ওভারসিজের কার্যালয়। ঘটনার সময় আটজন কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের একজন মোহাম্মদ হোসাইন আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রাত পৌনে আটটার দিকে চার দুর্বৃত্ত অফিসে ঢুকে পড়ে। একপর্যায়ে দুর্বৃত্তদের দুজন পিস্তলের মুখে আট কর্মচারীকে জিম্মি করে। অপর দুই দুর্বৃত্ত সিদ্দিক মুন্সির কক্ষে ঢুকে কয়েকটি গুলি চালায়। এতে বুকসহ শরীরের একাধিক স্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি লুটিয়ে পড়েন। এরপর দুর্বৃত্তরা অফিস কক্ষে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এতে তিন কর্মচারী গুলিবিদ্ধ হন। দুর্বৃত্তরা চলে যাওয়ার সময় বলে, ‘আমরা ডনের লোক। ২০ লাখ টাকা নিয়া যোগাযোগ করিস।’ দুর্বৃত্তরা বাইরে থেকে প্রধান ফটকের ছিটকিনি লাগিয়ে চলে যায়। ভেতর থেকে কর্মচারীদের চিৎকারে নিরাপত্তাকর্মী প্রধান ফটক খুলে দেন। এরপর গুলিবিদ্ধ সবাইকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়। ঘটনার সময় উপস্থিত আরেক কর্মচারী আবু জাফর বলেন, দুর্বৃত্তদের বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছর। তাদের প্রত্যেকের মুখোশ পরা ছিল। পরনে ছিল প্যান্ট, শার্ট। গুলিবিদ্ধ হয়ে মালিক লুটিয়ে পড়লে দুর্বৃত্তরা ড্রয়ার থেকে টাকা লুট করে। নিহত সিদ্দিক মুন্সির বাসা উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের ৭ নম্বর সড়কে। তাঁর দুই মেয়ে ও এক ছেলে। গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায়। পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার আবদুল আহাদ আজ বুধবার সকালে বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, চার থেকে ছয়জন এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তবে এখনো কেউ ধরা পড়েনি। এ ব্যাপারে মামলার প্রক্রিয়া চলছে