পিয়ন থেকে কোটি পতি: মাহাবুব আলম মিলন

0
1267

তানজীন মাহমুদ তনু ও ইসমাইল আশরাফ
কোন রূপকথার গল্প নয়। মাত্র অল্প দিনেই সামান্য একজন পিয়ন থেকে কিভাবে
কোটিপতি হওয়া যায়? তবে কি-কি আলাদিনের চেরাগ পেয়েছেন তিনি? চেরাগে ঘষা দিলেই দৈত্য এসে বলে “জি-হুকুম মালিক” আর টাকা দিয়ে যায়? এমনি একজন দাম্ভিক কোটিপতির সন্ধান পাওয়া গেছে রাজধানীর দক্ষিণখান, নগরীয়াবাড়ী এলাকায়।

Advertisement

ঘটনার নায়ক মাহাবুব আলম মিলন (৪৭)। পিতা মৃত আ: মান্নান, ২২৩ নগরীয়া বাড়ী, দক্ষিণখান, ঢাকা-১২৩০। গ্রামের বাড়ী ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও থানায়। তিনি পেশায় ছিলেন একজন ইনকাম ট্যাক্সের সার্ভেয়ার। বর্তমানে নিজেকে ইনকাম ট্যাক্সের একজন পরিদর্শক হিসেবে পরিচয়দেন। বিংশ শতাব্দীর শেষ লগ্ন ৯০ দশকে তার ঢাকা আগমন কর কমিশনারের কার্যালয়ে একজন সার্ভেয়ার হিসেবে। প্রথমে জীবনে ঢাকার মালিবাগে একটি ম্যাচে থাকতেন। অতপর রাজধানীর দক্ষিণখানের মোল্লাবাড়ীতে জায়গা কিনে টিনশেড ঘরে বসবাস। আর বর্তমানে ছয়তলা ভবনে রাজকীয় জীবন যাপন। দক্ষিণখান থানা জুড়ে রয়েছে মিলনের ৬ টি বহুতল বাড়ী। নিজ নামে ও স্ত্রীর নামে রয়েছে অসংখ্য জমি ও প্লট। নিজ গ্রামের বাড়ীতে কিনেছেন অনেক জমি গাজীপুর, শ্রীপুর বর্মীতেও রয়েছে প্লট ও জমি। মিলন নিজে হাকিয়ে বেড়ান একটি টয়োটা প্রিমিও (ঢাকা-গ-৩৭-৬৬৮৯)। দক্ষিণখান নগরীয়া বাড়ীতে রয়েছে একটি বিদেশী গরুর খামার। খামারে রয়েছে ৩০/৪০টি গরু, যার একএকটির বাজার মূল্য ৮-১২ লক্ষ টাকা। জনমনে প্রশ্ন মাহাবুব আলম মিলন ইনকাম ট্যাক্সের একজন সার্মান্য কর্মচারী হয়ে কিভাবে এত কোটি টাকার মালিক হয়? তবে কি আলাদিনের চেরাগ পেয়েছে মিলন সাহেব?
এমন প্রশ্নের জবাবে সরেজমিন তদন্তে দেখা যায় মিলন সাহেবের কয়েকটি বহুতল বাড়ী ও প্লট রয়েছে দক্ষিণখান এলাকায়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই সাধারন মানুষের। মিলনের দাম্ভিকতায় ও তার দুই ছেলের সন্ত্রাসীকতায় মুখ খুলতে সাহস পায়না এলাকা বাসী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন জানান-আমার বাপ দাদা চৌদ্দপুরুষের ভিটা এই মোল্লাবাড়ী। নিজের এত কিছু থাকার পরও সাহস পাইনা মিলনের বিরূদ্ধে কথা বলতে। কথায় কথায় লাঠি, দা নিয়ে দৌড়ে আসে মিলনের ছেলেরা। আমার বুকে খাপর মেরে মিলনের ছেলে শান্ত বলে তোর কলিজাটাবের করে খাব। আমি ভয়ে দক্ষিণখান থানায় একটি জিডি করি ০১/১১/২০১৭যার নং-৪৭। নিজের অপরাধ আরাল করতে মাহবুব আলম মিলন তার দুই ছেলেকে রাজনীতিতে নিয়ে আসে। সেই প্রভাব কে কাজে লাগিয়ে মিলন ও তার ছেলেদ্বয় প্রতিনিয়ত অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে
অপর আরেক স্থানীয় অধিবাসী জানান-মিলনের এই আয়ের উৎস কি-আমরা জানি না। আমরা জানি মিলন একজন ইনকাম ট্যাক্সের কর্মচারী। কি ভাবে সে রাত রাতি এত ধন সম্পতির মালিক হলো-বুঝে আসেনা। আর মিলন, তার দুই ছেলে শান্ত ও শাওনের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। এমন কোন দিন নাই যে দিন ওরা দুই ভাই মারামারি, কাটাকাঠি করে না। বাপের অবৈধ টাকায় ওই দুই ভাইয়ের গুন্ডামী-মাস্তানী এখন চরমে। তিনি প্রসাশন ও দুদকের হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন- এখনই মিলনের অবৈধ সম্পত্তির উৎস খুঁজে বের করা ও তার দুই পুত্র শান্ত ও শাওনের বিচার কার না গেলে সাধারণ মানুুষ স্বস্তিতে ঘুমাতেও পারবেনা।জানা যায়, মিলনের স্ত্রী একজন বদরাগী ও ঝগড়াতে মহিলা। তার পুত্রদ্বয় এলাকায় চিহ্নীত সন্ত্রাসী। মিলন ও তার পুত্রদ্বয়ের নামে অত্র থানায় ও কোটে একাধিক মামলা ও সাধারন ডায়েরী রয়েছে। পান মেকে চুন খসলেই মিলন ও ছেলেরা শুরু করে মারামরি ছিনতাই ও অস্ত্রের মহড়া। মিলনের অবৈধ সম্পদ ও সন্তাদের কাছে জিম্মি এলাকাবাসী। আরো জানা যায় মিলনের ছেলেদ্বয় মাদক সেবী ও মাদক ব্যবসায়ীও বটে।
এ বিষয়ে মিলনের সাথে কথা বলার জন্য তাঁর বাড়িতে গেলে এই সরকারি কর্মচারীর ক্ষমতার ধারণা পাওয়া যায় । তার বাড়ির নিচের অফিস কক্ষে বসে থাকতে দেখা যায় দক্ষিণখান থানার একজন কর্মকর্তাকে । এখানে তার উপস্থিতির কারন জানতে চাইলে তিন বলেন মাঝে মধ্যে একটু আড্ডা দেওয়ার জন্য এখানে আসা হয় । মিলনের ছেলের বিরুদ্ধে জিডির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি থানা ছাড়া কথা বলবো না- আপনারা থানায় আসেন । মিলনের কাছে তার সম্পত্তির বিষয়ে জনাতে চাইলে তিনি বলেন, তার স্ত্রী বিয়ের সময় বাপের কাছ থেকে একটি বাড়ি পেয়েছিলেন । আর সেই বাড়ির আয় দিয়ে বিশাল সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন । ছেলেদের নামে থানায় কোন জিডি নেই বলেও দাবি করেন তিনি। এই সময় কথার ফাকে তিনি ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন কেরামত উল্লাহ বিপ্লব নামের এক সাংবাদিকের সঙ্গে । সেই সময় কেরামত উল্লাহ বিপ্লব প্রতিবেদককে মোবাইলে ( ০১৭১**৫২০০) হুমকি দিয়ে সংবাদ না করে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বলেন।
এ বিষয়ে দুদকে যোগাযোগ করা হলে দুদক সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অভিযোগ করার পদ্ধতি ( হটলাইন -১০৬) চালুর পর থেকে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ অভিযোগ জমা পড়েছে । তার মধ্যে ১ শতাংশ অভিযোগ নিয়ে কাজ করতে সক্ষম হয়েছে দুদক। আর এই সক্ষমতার অভাবকে কাজে লাগাচ্ছে দুর্নীতিবাজরা।
দূর্নীতিবাজ মাহবুব আলম মিলনের অবৈধ সম্পদের উৎস খুঁজে বের করা ও তার বিচার এখন সময়ের দাবি ।

Advertisement

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here