প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেলেন সৎভাই দেলা ডাকাত

0
753

জাকির হোসেন হাজারী, দাউদকান্দি(কুমিল্লা)থেকে
প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে নাটকীয় কায়দায় সৎ ভাইকে হত্যা করে নিজেই ফেঁসে গেলেন কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার ইসলামাবাদ গ্রামের মৃত হানিফ মিয়ার ছেলে দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেলু ডাকাত। গত ১৫ অক্টোবর রোববার রাতে দেলোয়ার হোসেনের সৎভাই আমীর হোসেন(৪৩) নিখোজ হওয়ার ৩৬ঘন্টা পর মঙ্গলবার চালিভাঙ্গা বাজারের বাশ বাজার খাল থেকে ভাসমান অবস্থায় মেঘনা থানা পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মেঘনা থানায় মিথ্যা মামলা করতে ব্যর্থ হয়ে  দেলোয়ার হোসেন দেলু ডাকাত, ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল লতিফসহ কয়েকজন বুধবার কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপারের কাছে প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে গেলে কথা বার্তায় গড়মিল হওয়ায় তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয় বলে মেঘনা থানা পুলিশ জানায়। এদিকে বুধবার দেলোয়ার হোসেন আটক হয়েছে এ খবর এলাকায় জানাজানি হলে তার ফাঁসির দাবীতে কয়েক হাজার নারী-পুরুষ চালিভাঙ্গা বাজারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে। বিক্ষোভ কারীরা এসময় আমির হোসেন হত্যার মূল নায়ক দেলোয়ার হোসেন ওরফে  দেলু ডাকাত ও হত্যার পরিকল্পনাকারীর চেয়ারম্যান আবদুল লতিফের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন।
গত বুধবার মেঘনার চালিভাঙ্গাসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে সরেজমিন গেলে এসব তথ্য চিত্র ফুটে উঠে। এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন ও বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফের সাথে এলাকার আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এদিকে প্রতিপক্ষ সাবেক হুমায়ন চেয়ারম্যানের সমর্থকদের ফাঁসাতে ট্রলার চালক আমির হোসেনকে হত্যার পরিকল্পনা আটে বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ গ্রুপ। পরিকল্পনা মোতাবেক গত ১৫অক্টোবর নাটকীয় কায়দায় হত্যা করা হয়  ইসলামাবাদ গ্রামের মৃত হানিফ মিয়ার সহজ সরল ছেলে  ট্রলার চালক আমির হোসেনকে (৪৩)। গত রোববার রাতে ট্রলার চালক আমির হোসেন ও তার ছেলে ইব্রাহিম(১৫) সারাদিন ট্রলার চালানোর পর রাত সাড়ে ৮টায় বাড়ি ফেরার পথে তার সৎ ভাই মোঃ দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেলু ডাকাত মোবাইলে ফোন করে। সে ফোন পেয়ে তার ছেলে ইব্রাহিমকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে সৎ ভাইয়ের কথা মত বৈদ্ধার বাজার যায় দেলু ডাকাতকে আনতে। বৈদ্ধার বাজার যাওয়ার পর তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। এরপর রাত সাড়ে ১০টায় দেলোয়ার বাচাও বাচাও বলে চিৎকার চেচামেচি করে  পাগাড়ি বাড়ি হযরত আলীর উঠানে গিয়ে পড়ে। তার কিছুক্ষন পরেই বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ দেলোয়ারকে চিকিৎসার নাম করে স্পিড বোট দিয়ে হাসপাতালের কথা বলে ঢাকায় নিয়ে যায়। লতিফ চেয়ারম্যান এ প্রসঙ্গে বলেন,  ওই রাতে অজ্ঞান অবস্থায় দেলোয়ারকে আমি ঢাকা নিয়ে যাই, জ্ঞ্যান ফেরার পর দেলোয়ার আমাকে বলে যে কে বা কারা আমাদের উপর হামলা করে  আমির হোসেনকে মেরে নদীতে ফেলে দিয়েছে আর  সে নিজে(দেলোয়ার) কোন রকমে প্রানে বেচেছে।  আর এই হত্যাকান্ড নিয়ে এলাকায় ধু¤্রজাল সৃস্টি হয় এবং পরস্পর বিরোধী বক্তব্য উঠলেও  সৎভাই দেলোয়ার হোসেন আটক হওয়ায় সস্তির নিঃশাষ ফেলে  এলাকাবাসী।  হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামী দেলু ডাকাত ্ এর আগে এলাকবাসী অস্ত্রসহ ধরে পুলিশের হাতে দেয়। এছাড়া কয়েকবার পুলিশের হাতে ধরা  পরলেও আইনের ফাক ফোকর দিয়ে বেরিয়ে এসেছে। তার মদদদাতাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবীও  জানিয়েছেন এলাকাবাসী ।  তার ফাঁিসর দাবীতে ফুসে উঠে ্এলাকার লোকজন ।
এদিকে আমীর হোসেনের ১৫ বছরের ছেলে ইব্রাহিম বলেন, বাবা এবং আমি ট্রলার নিয়ে বাড়ী আসার সময় আব্বার মোবাইলে একটা ফোন আসে। তখন বাবা আমাকে বলে তুই বাড়ীতে চলে-যা আমি পরে আসব, আর তোর চাচা ফোন করেছে তাকে বৈদ্যার বাজার থেকে নিয়ে আসতে এবং একথা কাউকে জানাতে না করেছে , তুই কাউকে এমনকি তোর মাকেও বলিছ না।
সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির বলেন, আমীর হোসেন এলাকার নিরীহ ছেলে। দেড় বছর বয়সে মাকে হারানোর পর সৎ মায়ের যন্ত্রনায় তার বাবা  অন্যত্র তাকে দত্ত্বক (পালক) দিয়ে দেন। বড় হয়ে বিয়ে করার পর নিজ বাড়ী বাপের বাড়িতে চলে আসেন আমীর হোসেন। এদিকে এই হত্যকান্ডে এলাকার নিরীহ নিরপরাধ লোক যেন হয়রানীর শিকার না হয় এবং সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত খুনিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করার দাবি জানান এলাকাবাসী।
সহকারী পুলিশ সুপার (হোমনাÑমেঘনা ) মো. সাইফুর রহমান আজাদ  বলেন, ট্রলার চালক আমির হোসেন হত্যায় অজ্ঞাতনামা আসামী করে নিহতের স্ত্রী মেঘনা থানায় মামলা দায়ের করা করেছে। এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের ভাই দেলোয়ার, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ ও মানিককে আটক করা হয়েছে। তবে মামলাটি জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

Advertisement
Advertisement

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here