অপরাধ বিচিত্রা প্রতিবেদক
নিয়ম রক্ষার নির্বাচনের কথা বলে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের সাথে প্রতারণা করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বলেছিলেন এই নির্বাচন নিয়ম রক্ষা এবং সংবিধান রক্ষার নির্বাচন। এরপরই আরেকটি নির্বাচন দেয়া হবে। কিন্তু সেই নির্বাচনের পর তিনি জনগণকে দেয়া কথা ভুলে গিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি জনগণের সাথে প্রতারণা করেছেন। গতকাল (মঙ্গলবার) রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে যুবদল আয়োজিত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫৩তম জন্মদিন উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথ বলেন।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ২০১৪ সালের মত নির্বাচন আর এদেশে হবে না। একাদশ সংসদ নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনে হবে না, জনগণ হতে দেবে না। তিনি বলেন, আমাদের দেশনেত্রী উপযুক্ত সময়ে নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকারের রূপরেখা দেবেন। সেই রূপরেখা দেওয়ার পরে আমরা আহ্বান জানাব সরকারকে রূপরেখা মেনে নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য। আর যদি সেই পথে না এসে আবার ২০১৪ এর পথে হাঁটেন তাহলে বলতে চাই, জনগণ এবার তা গ্রহণ করবে না। যদি এই সরকার একটি নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে রাজি না হয়, তাহলে সেই দাবি আদায়ের জন্য দেশের জনগণ রাস্তায় নেমে আসবে এবং রাস্তায় সেই দাবি আদায় করেই একাদশ নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনে পরাজয়ের ভয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, এই সরকার ১/১১ এর সরকারের মতো মিথ্যা মামলা দিয়ে চক্রান্ত শুরু করেছে। জন্মদিনে তারা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার বিচারের কার্যক্রম শুরু করেছে। এ থেকে বোঝা যায়- এই সরকার কী পরিমাণ তাকে ভয় পায়, কী পরিমাণ প্রতিহিংসামূলক। তিনি বলেন, সরকার তার বিভিন্ন সংস্থার লোকজন দিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জনপ্রিয়তার গোপন জরিপ করেছে। সেখানে যে রিপোর্ট এসেছে, তাতে আওয়ামী লীগ ৪০টি আসনও পাবে না বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। সেই থেকে সরকার ভীত হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। যাতে এদেরকে বাদ নিয়ে একটি পাতানো নির্বাচন করে ক্ষমতায় যেতে পারে। কিন্তু এদেশের মানুষ কোনোদিনই দলীয় সরকারের অধীনে ২০১৪ সালের মতো পাতানো নাটক মেনে নেবে না। নির্বাচনের আগে সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির আহ্বান জানিয়ে মোশাররফ বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো যাতে সমানভাবে সভা-সমাবেশের মতো কর্মসূচি পালন করতে পারে, সেই পরিবেশ সরকারকে তৈরি করতে হবে।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু বলেন, সরকারকে আমি বলতে চাই, আমাদেরকে যদি মিথ্যা মামলায় সাজা দেন, তার লিস্ট প্রকাশ করে দেন কারা কারা নির্বাচন করতে পারবে না। তারপরে আমাদের দ্বিতীয় সারি তৃতীয় সারির নেতাদের সাথে যদি প্রতিযোগিতা করে নির্বাচনে আপনারা জয়লাভ করে পারেন, ৫০টি আসন পান তাহলে আমরা রাজনীতি ছেড়ে দেব।
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন নতুন ‘সম্প্রচার আইন-২০১৭’ এর সমালোচনা করে বলেন, ‘এই আইন মুক্ত সমালোচনাকে টেনে নিয়ে কারাগারে ফেলবে। বিএনপির বিরুদ্ধে এটি ব্যবহার করা হবে। এটি চূড়ান্ত বাকশালের বহিঃপ্রকাশ। নতুন এই আইনে মিথ্যা, অসত্য ও অশ্লীল বক্তব্যের জন্য পাঁচ কোটি টাকা ও তিন বছরের জেলের বিধান রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যদি তাই হয় তাহলে আগে তথ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সাজা হতে হবে। কারণ তারা অব্যাহতভাবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ এবং তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা বক্তব্য রেখে যাচ্ছে।’ যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নিরবের সভাপতিত্বে এসময় আলোচনায় অংশ নেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ।
তারেকের জনপ্রিয়তার সরকার ভীত
এদিকে তারেক রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কৃষক দল আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, তারেক রহমানের জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে সরকার তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে, বিচার শুরু করছে। তিনি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের কন্যা আছেন শেখ হাসিনা আর শহীদ জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র হচ্ছেন তারেক রহমান। আসুন না আপনি আপনার সিটে নির্বাচন করেন, তারেক সাহেব তার সিটে নির্বাচন করবেন। রেফারি হবেন অন্যজন। দেখবেন আপনি কত ভোট পান আর আমাদের তারেক সাহেব কত ভোট পান- এটা আমরা আগামী নির্বাচনে দেখতে চাই। মহানগর কৃষক দলের আহ্বায়ক নাসির হায়দারের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক এস কে সাদীর পরিচালনায় মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, তথ্য বিষয়ক সহ-সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।