জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মো. আশিকুর রহমান জানান, শনিবার জেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হাফিজ আল আসাদের বিশেষ বিচারিক আদালতে হাজির করে আক্কাসের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই পরিমল চন্দ্র দাস। আদালত শুনানি শেষে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
তিনি জানান, গ্রেফতারের পর আসামি আক্কাস আলীকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে র্যাব-১৪। পরে তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির এসআই পরিমল চন্দ্র দাস পিপিএম বলেন, আক্কাসকে পুলিশ হেফাজতে ৫ দিন জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। এখন পর্যন্ত সে শুধু তার হ্যাচারির কর্মচারী আবদুল কাইয়ুমের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
২৫ সেপ্টেম্বর গৌরীপুরের হ্যাচারির মালিক আক্কাস আলী ও তার ছেলে কাইয়ুমসহ চার-পাঁচজন চোর সন্দেহে সাগরকে খুঁটিতে বেঁধে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় পর দিন শিপন মিয়া বাদী হয়ে হ্যাচারির মালিক আক্কাস আলী, তার ভাই জুয়েল মিয়া, কাইয়ুম, হাসু, সোহেল এবং সাত্তারের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও পাঁচজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। এদের মধ্যে প্রধান আসামি আক্কাসকে মুঠোফোনে আড়ি পেতে শুক্রবার ভোরে ভৈরব থেকে গ্রেফতার করে র্যাব।
মানবাধিকার কমিশনের মানববন্ধন : এদিকে কিশোর সাগরকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে ময়মনসিংহ শহরের ফিরোজ-জাহাঙ্গীর চত্বরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন ময়মনসিংহ শাখা ও সমাজ রূপান্তর সাংস্কৃতিক সংঘ। এ সময় হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। মানবাধিকার কমিশনের জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট এএইচএম খালেকুজ্জামানের সভাপতিত্বে অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নুর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন, অ্যাডভোকেট এসএম সাদিক হোসেন, অ্যাডভোকেট শিব্বির আহমেদ লিটন, অধ্যক্ষ সাহাবুদ্দিন, সিপিবি সাধারণ সম্পাদক শেখ বাহার মজুমদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল ফজল, গৌরীপুরের ভাংনামারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক মফিজুন নুর খোকা, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মকবুল হোসেন, শিক্ষক সমিতির নেতা খন্দকার সুলতান আহম্মেদ, কবি স্বাধীন চৌধুরী, সাংবাদিক নিয়ামুল কবীর সজল, আনোয়ারা খাতুন, সমাজ রূপান্তর সাংস্কৃতিক সংঘের হান্নান খান, রাজু খান, সেলিম মিয়া প্রমুখ।
এদিকে মানবাধিকার কমিশন গৌরীপুর শাখার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আবুল কালাম মুহাম্মদ আজাদের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও নিহতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে। এ প্রতিনিধি দলের সদস্যদের কাছে আক্কাস আলীর অপকর্ম তুলে ধরেন এলাকাবাসী। তারা এ সময় আক্কাসের সহযোগী কাইয়ুমসহ সব আসামিকে গ্রেফতারের দাবি জানান। শনিবার আক্কাস আলীর বাড়ি চরশ্রীরামপুরে গিয়ে জানা যায়, তার আরও অপকর্মের কথা। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন গ্রামবাসী। তারা জানান, আক্কাস আলীর মায়ের নাম আছিরন। তাকেও নির্যাতন করতে কুণ্ঠাবোধ করেনি সে। খোদ আক্কাসের মামা মো. মারফত আলী ফকির বলেন, আরে ওর ওপর আল্লাহর গজব পড়েছে। যে তার মাকে মারে, গালাগাল করে তার শাস্তি হওয়া উচিত। এদিকে অন্য আসামিদের গ্রেফতারে সাদা পোশাকে পুলিশ ও গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে চরশ্রীরামপুরেও। শুক্রবার গভীর রাতেও সন্দেহজনক বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ। ডিবির অফিসার ইনচার্জ মো. আশিকুর রহমান জানান, আসামি গ্রেফতারে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।