বিশেষ সংবাদদাতাঃ
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের কর্মকান্ডে সরকারি আইন-কানুনের তোয়াক্কা নেই। প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ার মোহাম্মদ হানজালা স্বেচ্ছাচারি কায়দায় এ প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন। তার আত্মীয়-স্বজন এবং কয়েকজন বিশেষ অনুগত প্রকৌশলী-কর্মকর্তার সমন্বয়ে গড়ে উঠা শক্তিশালী সিন্ডিকেট এই প্রতিষ্ঠানটিকে জিম্মি করে রেখেছে। প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে এরা প্রতিষ্ঠানটিতে ব্যাপকহারে লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের সনদ বিতর্কে হাইকোর্ট তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ স্থগিত করার পর তিনি কৌশলে আইনী মারপ্যাঁচে স্বপদে থেকে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তার সফলতা জাহির করে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। দ্বিতীয় দফায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে তিনি এখন মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন। এক কালের ছাত্র ইউনিয়ন এবং পরবর্তীতে বিএনপি ঘরানার এই ধুরন্ধর প্রকৌশলী এখন স্বাচ্ছা আওয়ামীলীগার হিসেবে নিজেকে পরিচিত করতে ভাড়াটে গ্রুপকে ব্যবহার করছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন এ অধিদপ্তরের অনিয়ম ও জালিয়াতি রোধে বিশেষ ডিজিলেন্স টিম নিয়োজিত করা সত্ত্বেও প্রধান প্রকৌশলী সে তৎপরতা থামিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন। আগামীতে তিনি দ্বিতীয় দফায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাবেন বলে প্রচারণা চালিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ঠিকাদারদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে দিচ্ছেন। শিক্ষামন্ত্রী এবং সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকার কারণে কোন সংস্থা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে না বলে তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন।
অপরাধ বিচিত্রার অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরে প্রধান প্রকৌশলীর পরের পদ অর্থাৎ অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পর্যায়ে একটিমাত্র অনুমোদিত পদ আছে। কিন্তু, এ পদটিও দীর্ঘদিন ধরে শূণ্য রয়েছে। নিজের একচ্ছত্র রাজত্ব ধরে রাখতে দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালা মন্ত্রণালয়ের উপর প্রভাব খাটিয়ে এই পদটি পূরণ করতে দিচ্ছেন না। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরে পাঁচটি সার্কেল অফিস আছে। পাঁচটি সার্কেল অফিসেই পাঁচজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদায়ন আছেন। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীদের কোনও আর্থিক ক্ষমতা ব্যবহার করতে দিচ্ছেন না তিনি। এই পাঁচটি সার্কেল অফিস চালু হয়েছিল ২০১৫ সালের ২২ এপ্রিল। ওইদিন জারি করা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের সার্কেল অফিসের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীগণের উপর আর্থিক ক্ষমতা পুনঃ অর্পণ করা হয়। কিন্তু প্রধান প্রকৌশলী সিএস ও সংশোধিত প্রাক্কলন অনুমোদনের ক্ষমতা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীদের হাতে দেননি। সিএস ও সংশোধিত প্রাক্কলন অনুমোদন করে দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে তিনি মন্ত্রণালয়ের আদেশ উপেক্ষা করে সকল নির্বাহি ক্ষমতা অবৈধভাবে নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন।ফলে অধিদফতরের কাজে দেখা দিয়েছে চরম বিশৃঙ্খলা।
এদিকে দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালার কোটি কোটি টাকা আয়ের অন্যতম উৎস হলো বদলি বাণিজ্য। বর্তমানে ঢাকা জোনে নির্বাহি প্রকৌশলী পদে আছেন আবুল কালাম মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান। ইতিপূর্বে ফরিদপুরে নির্বাহি প্রকৌশলী পদে ছিলেন তিনি। সেখান থেকে ঢাকায় পোস্টিং দিয়েছেন ৫০ লাখ টাকার বিনিময়ে, এমন কথা চাউর হয়েছে।
সূত্রে জানায়, প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরে একটি নতুন নিয়ম চালু করেছেন। তা হলো, সকল প্রকল্পের সংশোধিত প্রাক্কলন প্রধান প্রকৌশলী পর্যন্ত অনুমোদন নিতে হবে। অথচ ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও ডিজিটাল প্রশাসনের যে নীতিমালা সরকার বর্তমানে চালু করেছে সেই অনুযায়ী এ কাজগুলো প্রধান প্রকৌশলী পর্যন্ত আসার কোনও সুযোগ নেই। বস্তুত, ঘুষের রেট বাস্তবায়ন করার জন্যই তিনি সরকারি নীতিমালার বাইরে স্বেচ্ছাচারী কায়দায় এ বিতর্কিত নিয়ম চালু করেছেন। সংশোধিত প্রাক্কলন অনুমোদনের কাজে অঘোষিতভাবে ঘুষের একটি রেটও নির্ধারণ করা হয়েছে। কলেজ, মাধ্যমিক স্কুল, মডেল স্কুল, মাদ্রাসা- প্রভৃতির ক্ষেত্রে কোনটির কত টাকা ঘুষ দিতে হবে তা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী অঘোষিতভাবে নির্ধারন করে দিয়েছেন। প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালা ওইসব সংশোধিত প্রাক্কলন অনুমোদন করে একটি বিশেষ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালার আপন ভাই-ভাতিজা, শ্যালকসহ পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের কয়েকজন দূর্নীতিবাজ প্রভাবশালী প্রকৌশলী এই সিন্ডিকেটের সদস্য। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন, নির্বাহি প্রকৌশলী মীর মোয়াজ্জেম হোসেন, নির্বাহি প্রকৌশলী মোঃ আবুল হাসেম সরদার, উপসহকারী প্রকৌশলী মোঃ আবুল হোসেন প্রমুখ। উপসহকারী প্রকৌশলী আবুল হোসেন একাধারে প্রায় ১৫ বছর ধরে শিক্ষাভবনে আছেন। মাঝে ২০১১ সালের মে মাসে ঢাকার বাইরে নরসিংদীর রায়পুরে তার পোস্টিং হয়েছিল। কিন্তু সেখানে তিনি যাননি। উর্ধ্বতন মহলকে ম্যানেজ করে শিক্ষাভবনেই ডেপুটেশনে রয়ে যান।
প্রভাবশালী এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা শিক্ষাভবনে বসে সারাদেমের কমিশন বাণিজ্য, ঘুষ ও টেন্ডারের ভাগ-বাটোয়ারায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এসব অপকর্মে প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালার নাম ব্যবহার করছেন। এদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের প্রকৌশলী, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা। প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে যোগাযোগ করে এ ব্যাপারে তার কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
আগামীতে চোখ রাখুন —
ঠিকাদার মিজানের সুন্দরী স্ত্রী বিলকিছ জাহানকে ফুঁসলিয়ে নেয়া হয় নরকুন্ডে