নাবিলা শারমিন :নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট কার্যালয়ের ব্যাপক দূর্ণীতির কারনে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে অপরাধীদের গ্রেফতার করলেও কোন সময়ই থামানো যায় নাই অপরাধ।
খোদ পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীচক্র মিলিতভাবে দূর্ণীতির আখড়ায় পরিণত করেছে সরকারি এই সংস্থা টি।
এমন দূর্ণীতির সংবাদে বারবার শাক দিয়ে মাছ ঢেকে রাখার চেষ্টা করে নিজের অনিয়ম আর দুর্নীতি ঢাকতে চান নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে উপ-পরিচালক গাজী মাহমুদুল হাসান। যিনি নামে বেনামে গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পদ । ওই সম্পদ ও চাকরী রক্ষায় মরিয়া হয়ে উঠছেন তিনি।
পাসপোর্ট অফিসের এমন চরম অপরাধের পর এবার চাঞ্চল্যকর প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ফেঁসে গেছে পাসপোর্ট অফিসের সেই অসাধু চক্রের সদস্য। যা নিয়ে ব্যাপকভাবে সমালোচনায় অনেকেই বলেছে, “এখন কি বলবেন পাসপোর্ট কর্তা মাহমুদুল হাসান ?”
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শাহাদত হোসেন নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কর্মরত।
বেতন পান ১২ হাজার টাকা। এই বেতনের চাকরি করে ঢাকার মিরপুরে করেছেন বাড়ি। এছাড়া, নিজ গ্রামে তিন বিঘা ফলের বাগান, পাঁচ বিঘা জমি এবং সিংড়া উপশহরে ও সর্দার পাড়ায় কিনেছেন আট শতাংশ জমি। যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ১২ কোটি টাকা।
সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তার শাহাদত হোসেন নাটোরের সিংড়া উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নের কাদিরগাছা এলাকার বাসিন্দা। তবে, এলাকাবাসী তাকে শখেন নামেই চেনেন।
তাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ‘একজন নিরাপত্তা প্রহরী ১২ হাজার টাকা বেতন পান। এই বেতনের চাকরি করে কীভাবে ১০-১২ কোটি টাকার সম্পদের মালিক হওয়া সম্ভব ? খোঁজ নিয়ে জেনেছি, সম্প্রতি তিনি মেয়েকে পাসপোর্ট অফিসে চাকরি দিয়েছেন। শাহাদাতসহ যারা জাতিকে মেধা শূন্য করতে প্রশ্নফাঁসের মতো জঘন্যতম কাজ করেছেন তাদের সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
শুক্রবার (১২ জুলাই) সরেজমিনে শাহাদাতের গ্রামের বাড়িতে যান এই গণমাধ্যম কর্মীরা। তবে সেখানে তার পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। কথা হয় শাহাদাত হোসেনের খালাতো ভাই হানিফ আলীর সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘ভাই ও তার পরিবারের কেউ এখানে থাকেন না। তারা ঢাকার মিরপুরে নিজস্ব বাড়িতে থাকেন। শুধু ঈদের সময় বাড়িতে আসেন। গ্রামে তাদের বাড়িঘর ও ফলের বাগান আমি দেখাশুনা করি।’
কাদিরগাছা এলাকার বাসিন্দা সোবহান বলেন, ‘২০০২ সালের দিকে এই এলাকার সাবেক সচিব মখলেছুর রহমান শাহাদাতকে চাকরি দিয়েছিলেন। তবে কী চাকরি তা প্রতিবেশীরা জানতেন না। তবে কারও টাকার দরকার হলে শাহাদতের কাছে চাইলেই পেতেন।’
রাহেলা নামে আরেকজন বলেন, ‘ঈদের মধ্যে শাহাদত বাড়িতে এলে গরিব মানুষদের সহযোগিতা করতেন।’
প্রতিবেশী রেজাউল বলেন ,‘শখেন ভাই খুব ভালো মানুষ। এলাকায় আসলে আমাদের সঙ্গেই চলাফেরা করতেন। সম্প্রতি আমাদের চার বিঘা জমি কিনেছেন তিনি।
আরেক প্রতিবেশী জামাল উদ্দিন বলেন, ‘শাহাদাত হোসেনকে ভালো মানুষ হিসেবে জানতাম। প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে তিনি জড়িত জেনে খারাপ লাগছে।’
প্রসঙ্গত, সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে গত সোমবার (৮ জুলাই) পিএসসির দুজন উপপরিচালক, একজন সহকারী পরিচালকসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী নাটোরের শাহাদাত হোসেনও রয়েছেন।