চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চল সহ কঙ্বাজার মহাসড়কে বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রতিদিন কোটি টাকার বিভিন্ন প্রজাতির বনের কাঠ পাচার হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে করে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি পরিবেশ ভারসাম্যহীন হয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়গুলো বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বন বিভাগের কর্মকর্তারা রহস্যজনক নীরব ভূমিকা পালন করছে। পাহাড়ি বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ চট্টগ্রাম-কঙ্বাজার মহাসড়ক দিয়ে পাচার হয়ে থাকে। পাচারের সময় বিভিন্ন চেক পোস্টে প্রতি গাড়ি থেকে ১০-১৫ হাজার টাকা আদায় করেন হাইওয়ে পুলিশ। দিন রাত্রি দক্ষিণ চট্টগ্রামের একটি চোরাই কাঠ পাচারকারী সিন্ডিকেট এ কাঠগুলো দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাচার হয়ে থাকে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। বিশেষ করে পটিয়ার পূর্বাঞ্চল, করলডেঙ্গা, বোয়ালখালী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, লড শ্রীমাই, কুঠাখালী, বাজালিয়া, লোহাগাড়া, বান্দরবান, পদুয়া, লামা, আলিকদম, রুমা, থানছি, মাষ্টার পাড়া, ধোপাছড়ি, কমলাছড়ি, রোয়াংছড়ি, দিঘিনালা, রাঙ্গুনিয়া, বরকল, চুনতি, মাথামহুরি, মেধাকচ্ছপিয়া, বাঘমারা, রাজার হাট, কাপ্তাই, কাউকালী, ফটিকছড়ি, নানীয়াচ্ছর, মানিকছড়ি, রাউজান, হাটাজারী, বাঙালখালী, জুড়াছড়ি, কঙ্বাজারের চকরিয়া, রামু, এবং উপকূলীয় অঞ্চলসহ ২৫ টি উপজেলায় বন বিভাগের বন ভূমি রয়েছে ১৬ লাখ ৮৮ হাজার একরের মত। এসব জায়গায় বন বিভাগের সংরক্ষিত বন, সৃজিত বন, অর্পিত বন, অশ্রেণীভুক্ত বন ভূমি রয়েছে। আরও রয়েছে বন বিভাগের শুল্ক ফাঁড়ি। এসব বনাঞ্চল থেকে বিভিন্ন সময় চোরাই কাঠ অভিযানে জব্দকৃত কাঠগুলো দরপত্রের মাধ্যমে লাইসেন্সধারী কাঠ ব্যবসায়ীদের মাঝে বিক্রয় করে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিমাসে পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৬ লাখ ঘনফুট কাঠ পাচার হয়ে থাকে। যার আনুমানিক মূল্য ১৭ কোটি টাকা। জানা যায়, অভিযানে যে পরিমাণ কাঠ আটক হয়, পাচার হয়ে যায় তার থেকে অনেক বেশি কাঠ। সড়ক ও নৌ-পথে কাঠ পাচারের প্রস্তুতি থাকে পাচারকারীদের। এছাড়া এদের হয়ে কাজ করার জন্য বিশ্বস্ত সোর্স নিয়োগ দেয় তারা। সড়ক পথে কড়াকড়ির আরোপের খবর পেলে নৌ-পথে পাচার করা হয় কাঠ। এভাবে দৈনিক সাড়ে তিন লাখ টাকার মত প্রতি চেক পোস্টে সাড়ে তিন লাখ টাকার চাঁদাবাজী হচ্ছে। আবার অবৈধভাবে যে কাঠ গুলো আসে সেগুলো চাঁদার অংক দ্বিগুণ। বর্তমানে সাঙ্গু ও ধোপাছড়ি বন বিটের সংরক্ষিত বাগান থেকে কাঠ পাচারে প্রকাশ্যে ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন এখান থেকে সেগুনসহ মূল্যবান প্রজাতির কাঠ পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় বন বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের পরোক্ষ সহযোগিতায় পাচারকারীরা নির্বিঘ্নে কাঠ পাচার করে আসছে বলে জানা গেছে। কাঠ পাচারকারীরা ধোপাছড়ি ও সাঙ্গ বিটের সংরক্ষিত বন বাগান থেকে কাঠ কেটে শঙ্খ নদী দিয়ে চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী ও সাতকানিয়া উপজেলার বাজালিয়া, পুরান ঘর, শীলঘাটা, ধর্মপুর, কেরানী হাট ও কাঠগড় লামার বাজার এলাকায় চোরাই কাঠ মজুদ করে। কাঠ চোরদের ব্যক্তিগত ডিপোর মজুদ কাঠ ট্রাকযোগে ত্রিপল মুড়িয়ে কিংবা বালি ভর্তি ট্রাকযোগে অথবা ভুষির বস্তার নিচে দিয়ে চট্টগ্রাম-কঙ্বাজার মহাসড়ক হয়ে ঢাকা ফরাসগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করছে। তথ্য অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, রাঙ্গমাটি জেলা বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ি, বরকল, লংগদু সহ আশেপাশের এলাকার পাহাড় থেকে প্রতিদিন হাজার ঘনফুট কাঠ রাঙ্গাপানী এলাকায় জমা করা হয়। পরবর্তীতে সুযোগ বুঝে মূলত ট্রাক করে কাপ্তাই সড়ক অথবা রাঙ্গামাটি সড়ক হয়ে পাচার করা হয় নগরীতে। এছাড়াও দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া বিভিন্ন সরকারি পাহাড় থেকে কাঠ কেটে মজুদ করা হয় কর্ণফুলীর নদীর তীরবর্তী এলাকায়। এছাড়াও কাপ্তাইয়ের শীলক, কুদালা, রাঙ্গুনিয়ার শফলভাটা সহ বিভিন্ন এলাকার স’মিলে মজুদ করা হয় এসব কাঠ। পরে সুযোগ বুঝে নদী পথে অথবা সড়ক পথে নিয়ে আসা হয় কালুরঘাঠে। আবার রাঙ্গামাটির বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বনাঞ্চল থেকে মূলত কাঠ পাচার করা হয় রায়খালী হয়ে রাঙ্গুনিয়ায় অথবা কারিগর পাড়ায়। বাঙালখালীয় ঘুরে রাঙ্গুনিয়ার ডাক বাংলায় দুধ পুকুরিয়, দশ মাইল ও সুখ বিলাস হয়ে ইঞ্জিন চালিত নৌকা অথবা চাদের গাড়িতে শীলক কুদালা সহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে আসা হয়। পাবর্ত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে চোরাই কাঠ বেশী পাচার করা হয় ট্রাকে করে। এসব কাঠ নগরীরর বলির হাট, আলকরণ, বাঁদুরতলা, কালুরঘাট, কর্ণেল হাট এবং ঢাকার সবুজবাগ, মিরপুর, মগবাজার, তেজকুনিয়াপাড়া, রামপুরা, বাড্ডা সহ বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে। অভিযোগ রয়েছে পুলিশ ও বন বিভাগের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে প্রতিদিন পাচার হচ্ছে হাজার হাজার ঘনফুট কাঠ। সংশ্লিষ্ট বন বিভাগের কর্মকর্তারা সরকারী কাঠ অবৈধভাবে চোরাই কাঠ পাচারকারীদের কাছে বিক্রি করে অনেকে কোটিপতি এবং আংগুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ সূত্রে প্রকাশ। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজন তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।