মাজহারুল ইসলাম, রৌমারীঃ
কিন্তু বিদ্যালয়ের গেট নেই তবও খোলামেলা প্রতিষ্ঠান। সামনে দাঁড়িয়ে স্কুলের কচি কচি শিক্ষার্থীরা। ওই স্কুলের সামনে দিয়ে এক সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য স্থানীয় সাংবাদিক অন্য এক ঘটনায় যোগ দেয়ার জন্য যাচ্ছিলেন কয়েকজন গণ মাধ্যম কর্মি।
গাড়ি থামিয়ে সাংবাদিক গিয়ে দেখেন বিদ্যালয়ের ঘর খোলা। শিক্ষার্থীরা বাইরে অপেক্ষা করছে কিন্তু বিদ্যালয়ে তখনো কোনো শিক্ষকের খবর নেই। এ অবস্থায় স্কুলে ধারকরা (প্যারা) শিক্ষক দিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে শ্রেণি কক্ষে গেলেন ও ক্লাস নিলেন। কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার নামাজের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রোববার (২৯ অক্টোবর) এ ঘটনা ঘটে।
প্রথমে আমাদের প্রতিবেদক স্কুল লাইব্রেরিতে ঢুকে দেখেন, লাইব্রেরির খাতা ও প্রযোজনীয় জিনিস পত্র মাটিতে পরে আছে। হটাৎ করে নৈশ্য প্রহরী (পিয়ন) বেলাল হোসেন ক্লাস কক্ষে ঢুকে ছাত্র ও ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন কে জেন আসছে। তোমরা ক্লাসে যাও। এভাবে ডেকে এনে ক্লাসে বলেন, ওরা সাংবাদিক।
এই দৃশ্য দেখে আমাদের প্রতিবেদক উলিপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলামকে ফোন করেন। শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলামকে ফোন করার ৩০ মিনিট পরে প্রধান শিক্ষক উজ্জল কান্তি সরকার, সহকারি শিক্ষক মহানন্দ রায় বিদ্যালয়ে উপস্থিত হন। তখনো অনুপস্থিত দুই সহকারী শিক্ষক রুমা (রুমার বাড়ি কুড়িগ্রাম সদর) ও সহঃ শিক্ষক আলমগীর ( বাড়ি স্কুলের পাশে) সে সব সময় বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন। স্কুলের কথা তাঁর (আলমগীর) যেন মনে থাকে না।
পরে স্থানীয় লোকমুখে জানা যায়, যে স্কুলের নানা কাহিনী। কোন শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসে না। কিন্তু প্যারা শিক্ষক দিয়ে স্কুলের ক্লাস নেয়। আর মাস গেলে শিউলি (প্যারা শিক্ষক) কে ১৫০০ টাকা দেয়। নৈশ্যপ্রহরী (পিয়ন) বেলাল কে কোন প্রকার টাকা না দিয়ে তাঁরা এভাবেই বেতন তোলে পকেট ভর্তি করে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষকরা। ৩০ মিনিটি সময় অতিবাহিত হওয়ার পর প্রধান শিক্ষক একটি পাঁয়ে চালিত সাইকেল থেকে নেমে স্কুলের প্রধান শিক্ষক কার্যালয়ে ঢুকে দেখেন ২ জন ভদ্রলোক বসে আছেন। তখন তাঁর প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসে এবং গণমাধ্যম কর্মিকে দেখলেন এবং বলেন, কে আপনারা? আমাদের প্রতিবেদক উত্তর না দিয়ে বলেন স্যার (প্রতিবেদক) আপনি এত দেরিতে কেন? তখন (প্রধান শিক্ষক) বলেন, “আমার বাড়ি কোথায় জানেন নদীর ওপার উলিপুরের জন্তিগাও এলাকা ও আরেক এক সহকারি শিক্ষক মহানন্দ রায় তিনিও বলেন আমার বাড়ি ভাইগো রাজার হাট (কুড়িগ্রাম)।” আমরা প্রধান ও সহকারি দুইজনেই অনেক কষ্ট করে বিদ্যালয় আসি। আমাদের ওখান থেকে আসা চাট্টিখানি কোথা (কথা)।”
তখন আমাদের প্রতিবেদক প্রশ্ন করেন শিক্ষককে (প্রধান ও সহকারি) কে , আপনরা মাসেও বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকেন না। অথচ ঠিকেই বেতন উত্তোলন করছেন। আপনারা কেন এই ফাঁকি দিয়ে বেতন নিচ্ছেন ? ভাই (প্রধান শিক্ষক) আপনাদের পরিচয় কি? তখন আমাদের প্রতিবেদক বলেন আমরা স্থানীয় সাংবাদিক। সাংবাদিক বলার পর বললেন একটু দাঁড়ান আমি (প্রধান শিক্ষক) আসতেছি। প্রায় ১৫ মিনিট অপেক্ষা করার পরও স্কুলে না এসে কোথায় যেন গাঁডাকা দিয়েছে। তখন আমাদের (প্রতিবেদক) বলেন অপেক্ষা করে কি হবে। সহকারি শিক্ষক মহানন্দ রায় কে বলা হলো আমরা আসি। উত্তরে বলেন (সহঃশিক্ষক মহানন্দ) ঠিক আছে। তখন আমরা বিদ্যালয় ত্যাগ করে আমাদের নিজ গোন্তবোস্থলে রওনা দেয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনচ্ছুক এক ছাত্র বলেন, আমাগো স্কুলে বড় স্যারেরা (ঐ স্কুলের শিক্ষক কথা) আসে না। আমাগো এখানকার আপুরা (প্যারা শিক্ষক শিউলি) পড়ান। এদিকে স্কুলের নিজস্ব কোন ভবন নেই, আছে শুধু মাত্র একটি টিনের ঘর তার মধ্যে তিনটি কক্ষ। তিনটি কক্ষের মধ্যে একটিতে শিক্ষকদের কার্যালয়। ঘরে নিচে কোন বেড়া নেই। স্কুলের শিক্ষার্থী মোট ১৪২ জন। শিক্ষকের সংখ্যা-৪ জন। মোট স্টাফ ৫, তার মধ্যে একজন নৈশ্য প্রহরী (পিয়ন)। শিক্ষার্থীদের একটি মাত্র চাওয়া পাওয়া তা হলো স্কুলের ভবন এবং শিক্ষক উপস্থিতি।
এ বিষয় নামাজের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি আজিজুর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করে তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে উলিপুর উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঐ প্রতিষ্ঠানে ৪ শিক্ষকদের শোকজ করা হয়েছে। সেই সাথে তাদের বেতন (পে-বিল) শিক্ষা অফিসের চিঠি মাধ্যমে বন্ধ করা হয়েছে। উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা নিকঠ শিক্ষকদের ব্যাখা চাওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ঐ স্কুলে সরেজমিন গিয়ে তদন্ত করে দেখা যাবে।”
প্রতিবেদন লেখার পর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উজ্জল কান্তি সরকারের সঙ্গে বারবার কথা বলার চেষ্টা করেও তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ প্রসঙ্গে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, “আমি শুনেছি স্কুলে শিক্ষক উপস্থিত না থাকা’র বিষয় সত্যতা পাওয়াগেছে। ঐ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শিক্ষা অফিস ব্যবস্থাও নিয়েছে। তারপরও বিষয়টি নিয়ে আমি খতিয়ে দেখবো।”