বিশ্লেষণ অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ

13
2156

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মানুষের চোখেমুখে এখন আশার ঝিলিক। সবার প্রত্যাশা প্রশ্নমুক্ত সুষ্ঠু এবং শান্তিপুর্ণভাবে জনগণ তাদের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। জনপ্রত্যাশা গণতন্ত্রের ধারকশক্তি নির্বাচনে সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। সচেতন ও পর্যবেক্ষক মহল আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন নতুন

Advertisement

করে দেশ কখনো যেন অনিশ্চয়তার বেড়াজালে আবদ্ধ না হয়। সচেতন প্রতিটি মানুষেরই প্রচন্ড আগ্রহ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচন নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ভোট পন্ডিতরা। রাজনীতির দাবাখেলায় কে কখন ওঠে আর কে নামে বলা মুশকিল। অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে নানা হিসাব নিকাশ হচ্ছে। চলছে ভোট রাজনীতির চুলচেরা বিশ্লেষণ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অতীতে কোন আসনে কোন দলের কোন প্রার্থীর কি অবস্থান ছিল, বর্তমানে কার কি অবস্থান এবং আগামীতে কোথায় কার অবস্থান হবে-এসব নিয়ে সংশ্লিষ্টরা অঙ্ক কষছেন। সরল অঙ্কের মতো দৃশ্যতঃ রাজনীতির হিসাব মনে হয় সহজ কিন্তু বাস্তবে বড়ই গরল। পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকুল হলে সহজ সরল ভোটাররা স্বতঃস্ফুর্তভাবে সমর্থন দিতে কার্পণ্য করেন না। আবার কোন কারণে আহত হলে সেইসব সহজ সরল মানুষ যদি একবার বেকে বসেন তাহলে তাদের সোজা করা হয় কঠিন। একথা খুব ভালো করেই জানেন ভোট রাজনীতির ধারক বাহকরা।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলায় আসন সংখ্যা আগে ছিল ৩৭টি। সাতক্ষীরার ১টি আসন কমে গিয়ে দাঁড়ায় ৩৬টিতে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনীতির পালাবদলের আনন্দে মাতোয়ারা জনগণ অপ্রতিহত গতিতে অবিস্মরণীয় স্বতঃস্ফুর্ততা ও খুশীর বন্যায় ভেসে ভোটের বাক্সে একরাশ প্রত্যাশার ছাপ ফেলে। আওয়ামী লীগসহ মহাজোট আসন পায় ৩৪টি। বিএনপির ভোট বাক্সে অতীতের কর্মকান্ডে ক্ষব্ধ ভোটাররা প্রতিবাদের চিহ্ন একে দেয়। সেইবার বিএনপি পায় মাত্র ২টি। এর আগে অবশ্য অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ছিল উল্টোচিত্র। সেইবার আওয়ামী লীগ পেয়েছিল মাত্র ২টি। আর বিএনপিসহ জোট পায় ৩৪টি। নির্বাচন অফিসের রেকর্ড অনুযায়ী ১৯৯১সালে অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে ৩৭টি আসনের মধ্যে আওয়ামীলীগ ১৬টি, বিএনপি ১৩টি ও জামায়াত ৮টি আসন পায়। এইবার যশোর সদর ও মাগুরার শালিখার উপ নির্বাচনে বিএনপি আরো ২টি আসন পেয়ে দাঁড়ায় ১৫টিতে। আর আওয়ামী লীগের দু’টি কমে হয় ১৪টি। পরবর্তী নির্বাচন অর্থাৎ ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত ৭ম সংসদ নির্বাচনে ৩৭টির মধ্যে আওয়ামীলীগ ২২টি, বিএনপি ১২টি, জাতীয় পার্টি ১টি, জামায়াত ১টি ও স্বতন্ত্র ১টি আসন পায়। এইবার আসন বৃদ্ধি পায়। আবার ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত ৮ম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের আসন সংখ্যা কমে যায়। তারা পায় মাত্র ৮টি। ভোট রাজনীতিতে জোট ফর্মুলায় ৮ম সংসদে বিএনপিসহ চারদলীয় জোট মোট আসন পায় ২৯টি। যা ছিল অভাবনীয়। জোট ফর্মুলা কাজে লাগিয়ে আওয়ামীলীগসহ মহাজোটও নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ চারদলীয় জোটের মতোই অভাবনীয় ফল পায়। তারা ৩৬টির মধ্যে আসন পায় ৩৪টি। এটি এই অঞ্চলে ছিল আওয়ামীলীগসহ মহাজোটের চমক। সর্বশেষ একতরফা দশম সংসদ নির্বাচনে ৩৬টি আসনের মধ্যে ৩৩টি আওয়ামী লীগ ও বাকি ৩টি দখলে নেয় মহাজোটের শরিক দল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ভোটপন্ডিতদের বিশ্লেষণী বক্তব্য ও মন্তব্য থেকে বের হয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হিসাব নিকাশ হবে অনেকটাই কঠিন। নিকট অতীতের ফলাফলে একবার আওয়ামীলীগ আরেকবার বিএনপি এভাবে উল্টাপাল্টা হয়। আগামী নির্বাচনে কি চিত্র দেখা যাবে তা এই মুহূর্তে বলা বড়ই খুবই কঠিন। কারণ সবেমাত্র নির্বাচনী হাওয়া বইছে। চলছে নানা কথাবার্তা। ভাবনা চিন্তার মধ্যেই সবকিছু সীমাবদ্ধ রয়েছে তাও একেবারে প্রাথমিকপর্যায়ে। যশোর, খুলনা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মাগুরা, নড়াইল, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গার ৫৯টি উপজেলার মোট ৩৬টি সংসদীয় আসনেই জোরালোভাবেই নির্বাচনী হিসাব নিকাশ চলছে। নির্বাচনী আড্ডায়ও চলছে নানা বিশ্লেষণ। নির্বাচন কখন কিভাবে হবে তা পরিস্কার হলেই একটা ধারণা পাওয়া যাবে। সম্ভাব্য প্রার্থী ছাড়া রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীরা ততটা নির্বাচনী মাঠে এখনো কেউ সরব নয়। সমর্থকরাও ততটা প্রকাশ্য নয়। সমর্থক যে যার মতো মনে মনে পক্ষবিপক্ষে রয়েছেন। নেতা কর্মীদের সাথে সমর্থকদের খুব একটা দেখা যাচ্ছে না।
চারিদিকে নির্বাচন ভোট জোটের আওয়াজ আছে ঠিকই। কাউকেই ততটা গাটছড়া বেধে এখনো ঘুরতে দেখা যাচ্ছে না। বেশীরভাগ সমর্থক যে যার মতো নিজেদের গুটিয়ে রাখছেন। কেন গুটিয়ে রাখছেন তার উত্তর মিলছে না। হয়তো ভালোভাবে জমজমাট হলে তারা নামবেন। এমন মন্তব্য করেছেন পর্যবেক্ষকরা। বেশ কয়েকটি আসন এলাকার কয়েকজন দলীয় সমর্থকের সাথে কথা হয় তারা বললেন, আমরা এখন পর্যবেক্ষণ করছি পরিস্থিতি। আবার কয়েকজন বললেন ‘আরে ভাই কোন দলের কোন নেতার পেছনে গেলেই তো মানুষ কর্মী আর সমর্থক গুলিয়ে ফেলে। পরে ঝড়ঝাপটা গায়ে লাগে। আমরা সমর্থক বিভিন্ন কাজকর্ম করে সংসার চালাই রাজনৈতিক কর্মী হতে চাই না। নীতি আদর্শ যে দলের ভালো লাগে তাদের সমর্থন করবো। বেশী লাফালাফি করবো না। যা করবো মনে মনে। এখন তো সেই রাজনীতি নেই। কোন দলে ভিড়লে প্রতিপক্ষ দলের রোষানলে পড়তে হয়। তাই যতটা সতর্ক হয়ে চলা যায়-ততই মঙ্গল।’
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ১০ জেলায় জেলাওয়ারী আসন সংখ্যা হচ্ছে খুলনা ৬টি, যশোর ৬টি, ঝিনাইদহ ৪টি, কুষ্টিয়া ৪টি, চুয়াডাঙ্গা ২টি, মেহেরপুর ২টি, মাগুরা ২টি, নড়াইল ২টি, বাগেরহাট ৪টি, সাতক্ষীরায় ৪টি। বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের বাইরেও অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন আবার দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন অনেকে এমন আভাস পাওয়া গেছে। সব আসনেই কমবেশী নতুন ভোটার বেড়েছে। পর্যবেক্ষকরা জানতে পেরেছেন, এবারের ভোটে এলাকার উন্নয়ন, দেশ ও দেশের কথা যিনি বলবেন, ব্যক্তি স্বার্থে নয়, জনকল্যাণে নিবেদিত প্রাণ হবেন তাদের প্রাধান্য দেয়া হবে। আগের চেয়ে মানুষ আরো সচেতন হয়েছেন। গ্রাম আর এখন গ্রাম নেই। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে মুহূর্তে দেশ বিদেশের সব খবর পাচ্ছেন অজপাড়া গা’য়ে বসে। বর্তমানে সাধারণ মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতা অনেক অনেক সমৃদ্ধ। বিশ্লেষকদের কথা, ভাবাবেগে নয়, হিসাব নিকাশ করেই ভোট দেবেন ভোটাররা।

Advertisement

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here