ব্যাংক দুর্নীতির মামলায় বাচ্চুকে দুদকের জেরা

0
771

অপরাধ বিচিত্রাঃ অবশেষে উচ্চ আদালতের নির্দেশে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি, দুর্নীতি ও আত্মসাতের মামলায় বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুকে ডেকে টানা সাড়ে ৩ ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত টিমের কর্মকর্তারা।

Advertisement

 

গতকাল সোমবার বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন দুদক পরিচালক জায়েদ হোসেন খান ও পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের দুদক টিম। দুদক তদন্ত কর্মকর্তাদের জেরার মুখে বাচ্চু নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন বলে জানান দুদকের কর্মকর্তারা। : দুদক থেকে বেরিয়ে যাবার সময় বেসিক ব্যাংকের অস্বাভাবিক ক্ষমতাবান সাবেক এই চেয়ারম্যান বাচ্চু সাংবাদিকদের বলেন, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো এখনো তদন্তাধীন অবস্থায় রয়েছে। এসব অভিযোগ এখনো প্রমাণিত হয়নি। দুদক ডেকেছে তাই তিনি এসেছেন, তদন্তকাজের প্রয়োজনে আবার ডাকলে আসবেন। এ সময় সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,  তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্তাধীন, সেগুলোর বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছে। আমি বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব হয়েছে উত্তর দিয়েছি।  তদন্তকাজে সহযোগিতা দেবেন। গতকাল  সকাল ৯টায় দুদক কার্যালয়ে হাজির হয়েছেন বেসিক ব্যাংকের সাবেক  চেয়ারম্যান বাচ্চু। সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে টানা দেড়টা পর্যন্ত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দৈনিক দিনকালকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুদক জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য। : সূত্র মতে, দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামানের নেতৃত্বাধীন কমিশন বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের অনুসন্ধান এবং তদন্তের শুরুতেই ওই ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যানসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের আইনের আওতায় না এনে তাদের রক্ষায় ছিলেন ব্যস্ত এমন অভিযোগ উঠেছে। গত আগস্টে  বেসিক ব্যাংকের এক মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের মামলায় বাচ্চু ও পরিচালনা পর্ষদকে আসামি না করায় উষ্মা প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে আপিল বিভাগের কড়া তিরস্কার এবং নির্দেশের প্রেক্ষিতে বাধ্য হয়ে গত ১৯ নভেম্বর দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাচ্চুসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের তলবি নোটিশ পাঠায়। : এর আগে গত রবিবার পর্যন্ত দুদক বেসিক ব্যাংকের সাবেক ৯ পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদকালে তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। তবে অনিয়ম করে ঋণ অনুমোদনের তথ্যপ্রমাণ দেখালে তারা ‘চুপ’ হয়ে যান। পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম, আনিস আহমদ, কামরুন নাহার আহমেদ, অধ্যাপক কাজী আকতার হোসেন, সাখাওয়াত হোসেন, ফখরুল ইসলাম, একেএম কামরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আখন্দ সেলিম, শ্যামসুন্দর শিকদার। ২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণের অভিযোগ ওঠার পর তদন্তে নামে দুদক। : ঋণপত্র যাচাই না করে জামানত ছাড়া, জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়াসহ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ ওঠে ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে। দুদক অনুসন্ধান শেষে এ অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনায় ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ১২৯ জনকে আসামি করে ৫৬ মামলা করে। আসামিদের মধ্যে ২৬ বেসিক ব্যাংক কর্মকর্তা এবং বাকিরা ঋণগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক জরিপ প্রতিষ্ঠানে যুক্ত। তবে আসামির তালিকায় বাচ্চু বা ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের কেউ না থাকায় দুদকের ওই তদন্ত নিয়ে উচ্চ আদালত থেকে প্রশ্ন ওঠে। অপরাধী যেই হোক না কেন, এ ধরনের মামলায় আসামি করার ক্ষেত্রে ‘পিক অ্যান্ড চুজ’  যেন না হয়, সে বিষয়ে দুদককে সতর্ক করেন আপিল বিভাগ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দুদক বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যানসহ পর্ষদের বিরুদ্ধে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১২ সালে তার নিয়োগ নবায়নও হয়। কিন্তু ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলে ২০১৪ সালে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণ করার পর চাপের মুখে থাকা বাচ্চু পদত্যাগ করেন। :

 

Advertisement

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here