বিশেষ প্রতিনিধিঃ
ব্লু-সিটি হাউজিং কোম্পানীর চেয়ারম্যান আমানউল্লাহ‘র অভিনব কৌশলের ফাদে পড়ে রুপগঞ্জের বেলাইরটেক এলাকার শতাধিক জমির মালিক তাদের জমির মালিকানা হারিয়ে ঘুরছে দ্বারে দ্বারে। দুয়েক শতাংশ জমি কৃষকদের নিকট থেকে বেশী মুল্যে ক্রয় করে ঐ কৃষকের পুরো জমিই দখলে নিয়ে নেয় ব্লু-সিটি হাউজিং কোম্পানি। আর এই কাজে আমানউল্লাহকে সহযোগিতা করে স্থানীয় মেম্বার মোরশেদ ও সন্ত্রাসী সাইফুল ইসলাম। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর উত্তরা ৪নং সেক্টরের ৭নং রোডের ১১৩/বি বাসায় শী-সেল গ্রুপের ব্লু-সিটি হাউজিং কোম্পানীর চটকদার প্রতারণার অফিস। অফিসের চেয়ারম্যান ভোলা জেলার মৃত সেরাজুলের ছেলে মোঃ আমান উল্লাহ। হাউজিং ব্যবসায় প্রতারণার শীর্ষে থাকা আমিন মোহাম্মদ গ্রুপকেও হার মানিয়েছে খ্যাতিমান প্রতারক আমানউল্লাহ‘র ব্লু-সিটি হাউজিং কোম্পানী। ব্লু-সিটি হাউজিং কোম্পানীর চটকদার বিজ্ঞাপন ও বাহারী বিলবোর্ড ব্যবহার করে সাধারন কৃষকদের দৃষ্টি আকর্ষন করে হাতিয়ে নিচ্ছে জমির মালিকানা। আমানউল্লাহ‘র অভিনব প্রতারনার কৌশলের ফাঁদে পড়ে জমির মালিকানা হারিয়েছে রুপগঞ্জের শতাধিক মালিক। রুপগঞ্জে ভূমিদস্যু মোরশেদ মেম্বার ও ক্যাডার সাইফুল ব্লু-সিটির চেয়ারম্যান আমানউল্লাহ‘র বিশ্বস্ত সদস্য। ব্লুÑসিটির ব্যানারে মোরশেদ মেম্বার ও সাইফুল রুপগঞ্জে জমি আত্মসাতের নিল নকশা তৈরি করে আর আমানউল্লাহ খরচের টাকা যোগান দেন। মোরশেদ মেম্বার দক্ষিনবাগ বেলাইরটেক এলাকার অন্তত ৩ শতাধিক জমির মালিককের নিকট ব্লু-সিটির পক্ষে অনেক জমি কেনা হবে বলে ঘোষণা দেন। যারা জমি বিক্রি করতে আগ্রহী তাদের নিকট থেকে মোরশেদ মেম্বার জমি কাগজপত্র হাতিয়ে নেন। এভাবে অন্তত শতাধিক লোকের নিকট থেকে জমির কাগজপত্র হাতিয়ে নিয়ে একজনের নিকট থেকে শতাংশ প্রতি ডবল মুল্য দিয়ে দুই শতাংশ ক্রয় করেন। ব্লু-সিটির পক্ষে ক্রয়কৃত ঐ জমির উপর বিশাল বিলবোর্ড স্থাপন করে বাকী জমির মালিকদের অপেক্ষায় রাখেন। জমির মালিকরা ব্লু-সিটির এই প্রতারনা প্রথম দিকে বুঝতে পারেনা। তারা আশায় থাকে বেশী মুল্যে ব্লু-সিটির নিকট তাদের জমি বিক্রি করতে পারবে। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই জমির মালিকরা বুঝতে পারে ব্লু-সিটির প্রতারনার কথা। ব্লু-সিটি কৃষকদের নিকট থেকে যেসকল জমির কাগজপত্র হাতিয়ে নিয়েছে সেই সব কাগজ পত্র থেকে অর্পিত জমি গুলো চিহ্নিত করে বালু ভরাট সহ সাইনবোর্ড বসানো কাজ শুরু করে মোরশেদ মেম্বার ও ক্যাডার সাইফুল বুলডুজার বাহিনী। মোরশেদ মেম্বার জনপ্রতিনিধি হওয়ার সুবাদে পুলিশের সহযোগিতা পেয়ে থাকে। মোরশেদ মেম্বারের কথা এতদিন অর্পিত সম্পত্তি তোমরা ভোগ করেছ। এখন থেকে আমরা ভোগ দখল করবো। ব্লু-সিটির চেয়ারম্যান আমানউল্লাহ টাকা পয়সা দিয়ে মোরশেদ মেম্বারকে ক্যাডার ও পুলিশ পালতে সহযোগিতা করে থাকে। কেউ প্রতিবাদ করলে তার উপর নেমে আসে আমানউল্লাহ সিন্ডিকেটের নির্যাতনেরই স্টিমরোলার। পুলিশ দিয়ে মিথ্যে মামলায় ফাসানো ও ক্যাডার দিয়ে মারধর করায় কেউ তার সাথে পেরে উঠতে পারছেনা। আমানউল্লাহ‘র প্রতারণার ফাঁদে আটকা পড়ে জমির মালিক মোঃ রুস্তম আলী বলেন, ব্লু-সিটির চেয়ারম্যান আমানউল্লাহ আমার জমির পাশে ৪ শতাংশ জমি বাজার মুল্যে চাইতে তিনগন বেশী দাম দিয়ে ক্রয় করে ব্লু-সিটির বিশাল বিলবোর্ড বসান। মোরশেদ মেম্বারের মাধ্যমে ঘোষণা দেন আর অনেক জমি ক্রয় করা হবে। এখানে আধুনিক শহর করা হবে। আমি তাদের কথায় বিশ্বাস করে আমার ১৬ শতাংশ মুল জমির সাথে ১৮ শতাংশ অর্পিত জমির কাগজ পত্র দেই। একই দামে আমার জমি কেনার কথা বলে আমার কাগজপত্র নিয়ে ক্রয় না করে কালক্ষেপন করতে থাকে। এখন তারা ঐ কাগজ পত্রের ফটোকপি ফেরত না দিয়ে অর্পিত ১৮ শতাংশ জমি দখলের পায়তারা চালাচ্ছে। রাতের আধারে সাইনবোর্ড লাগিয়েছিল। বালু ভরাটের পায়তারা চালাচ্ছে। প্রতিবাদ করতে গেলে মিথ্যে ফাসানো সহ প্রাননাশের হুমকি দিয়ে আসছে। আমানউল্লাহ‘র হাত খুব শক্তিশাল বিধায় আমার মতো ভুক্তভুগি শতাধিক জমির মালিক তার বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়, রাজউক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, নারায়নগঞ্জ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, রুপগঞ্জ থানার ওসি ও এসিল্যান্ড বরাবর লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছিনা। আমরা ক্ষতিগ্রস্থ ২০ জন জমির মালিক একসাথে আমানউল্লাহ‘র বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টেও বিজ্ঞ আইনজীবি এডভোকেট মোঃ আনিসুজ্জামানের মাধ্যমে একটি লিগ্যাল নোটিশ প্রেরণ করেছি। আমাদের সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষের আকর্ষন করছি।
লিগ্যাল নোটিশ সুত্রে জানা গেছে, শী-সেল গ্রুপের ব্লু-সিটি হাউজিং কোম্পানীর চেয়ারম্যান আমানউল্লাহ বেলাইরটেক এলাকায় অন্তত ১০/১৫ একর অর্পিত জমির উপর নজর দেন। পরবর্তীতে নামে বেনামে লোভনীয় সাইনবোর্ড ব্যবহার সাধারন কৃষকদের জমি ও অর্পিত সম্পত্তি গ্রাস করার লালসে বিভিন্ন লোভনীয় প্রস্তাব দিতে থাকেন। বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে কিছু ওয়ারিশ সম্পত্তি ক্রয় করেন। কিন্তু জমির মালিকরা আমানউল্লাহ‘র প্রতারণার বিষয় বুঝতে পেরে তার নিকট জমি বিক্রয় করতে রাজি হয় না। ফলে আমানউল্লাহ সিন্ডিকেটের লোকেরা ঐ সমস্ত জমি দখলের চেষ্টা চালালে জমির মালিকরা ৫ শতাধিক সিমেন্টের খুটি বসিয়ে তাদের জমির সিমানা নির্ধারন করেন। কিন্তু আমানউল্লাহ‘র বুলডুজার বাহিনী রাতের আধারে খুটি গুলো ভেঙ্গে ফেলে।
এঘটনায় জমির মালিকরা রুপগঞ্জ থানায় ১৫/১৬ টি জিডি ও ৪/৫ টি অভিযোগ দায়ের করেন। রুপগঞ্জ থানার পুলিশ আমানউল্লাহকে হাজির হতে বললেও সে তাতে কোন প্রকার কর্নপাত করেনি।