কুমিল্লা থেকে ময়নাল হোসেন
ভুয়া এএসপি কুমিল্লার মাসুদের মৃত্যুতে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মাঝে গভীর রাতে হুলস্থুল পড়ে যায়। পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে একাধিক বিয়ে করা এক ব্যক্তির মৃত্যুকে ঘিরে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মাঝে গভীর রাতে শোরগোল পড়ে যায়। পুলিশ প্রধানের হাসপাতালে আসার প্রস্তুতির মধ্যে তার আসল পরিচয় বেরিয়ে আসে।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে ছুরিকাহত হয়ে মারা যান মাসুদ নামের ঐ ব্যক্তি, যিনি বিসিএস পাস পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল বলে নিজের পরিচয় দিতেন। এই পরিচয়ে বিয়ে করা তার ব্যাংক কর্মকর্তা স্ত্রীকে ছুরিকাহত মাসুদের পাশে পান জানিয়ে মোহাম্মদপুর থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর বলেন, ঐ নারী তার স্বামী সিআইডিতে কর্মরত সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল আউয়াল বলে পরিচয় দিলে খোঁজ নেন তারা। আব্দুল আউয়াল নামে ২৯তম বিসিএসের একজন পুলিশ কর্মকর্তা থাকার বিষয়েও নিশ্চিত হন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিহত মাসুদের বাড়ি কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার গুল মার্কেট হাউজিংয়ে। আর পুলিশ কর্মকর্তা আউয়ালের বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে। ওসি জামাল উদ্দিন মীর আরো বলেন, এসব তথ্যের ভিত্তিতে ‘পুলিশ কর্মকর্তার’ মৃত্যুর খবর তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান। খবর শুনে পুলিশের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হাসপাতালে ছুটে যান। বিষয়টি পুলিশের মহা-পরিদর্শকের কানেও পৌঁছায়। তিনিও হাসপাতালে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সময় ২৯ ব্যাচের কর্মকর্তা ধানমন্ডি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লাহ হেল কাফি হাসপাতালে গিয়ে লাশ দেখে ঐ প্রতারককে চিনে ফেলেন বলে জানান তিনি। পুলিশ কর্মকর্তা কাফি বলেন, নিহত ব্যক্তির ব্যাংক কর্মকর্তা স্ত্রীর কথায় বিশ্বাস করেই আমরা এসব খোঁজ খবর নিচ্ছি। এরপর মর্গে গিয়ে লাশ বের করে দেখা মাত্রই চিনতে পারলাম ঐ ব্যক্তি একজন প্রতারক। তাকে আমি একবার গ্রেফতারও করে ছিলাম।
রমনাসহ ঢাকার বিভিন্ন থানায় ঐ ব্যক্তির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব মামলার অধিকাংশই প্রতারণা করে বিয়ে করার মামলা। মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বিয়ে ছাড়াও এমন কোনো অপকর্ম নেই সে করেনি। মগবাজার এলাকার এক মহিলাকে সে ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে বিয়ে করে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল। এই মহিলা পরে বুঝতে পেরে তার বিরুদ্ধে মামলা করে। তার এমন প্রতারণার শিকার মিরপুরেও আছে। স্বল্প সময়ে তার প্রতারণার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, সে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে ২০টির উপরে বিয়ে করেছে। ঘটনার বিবরণ দিয়ে ওসি জামালউদ্দিন মীর বলেন, রাত ৯টার দিকে তারা খবর পান মোহাম্মদপুরের বছিলা সেতুর কাছে এক ব্যক্তি ছুরিকাহত অবস্থায় পড়ে আছেন, যিনি সিআইডিতে কর্মরত সহকারী পুলিশ সুপার। এ খবর পাওযার পরপরই থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পায় এক মহিলা ঐ ব্যক্তিকে হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করছেন। ঐ মহিলা তার স্ত্রী।
এদিকে পুলিশ ছুরিকাহত ঐ ব্যক্তিকে তুলে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিতসক মৃত ঘোষণা করেন। হাসনা মমতাজ নামের ঐ নারী পুলিশকে বলেন, তার স্বামী সিআইডিতে কর্মরত আছেন। অফিসের কাজে বরিশাল গিয়েছিলেন। কেরানীগঞ্জ হয়ে কারও একজনের মোটরসাইকেলে করে মোহাম্মদপুরের বাসায় আসছিলেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে স্বামীর মোবাইল থেকে এক ব্যক্তি তাকে ফোন করে তার ছুরিকাহত হওয়ার কথা জানালে তিনি মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটির বাসা থেকে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। বছিলা ব্রিজের ওপারে কেরানীগঞ্জ থানা এলাকার আরশি নগর এলাকায় সন্ত্রাসীরা তাকে ছুরিকাঘাত করে বলে জানান তিনি। ওসি জামাল উদ্দিন মীর আরো বলেন, ঐ নারী একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা। সহকারী পুলিশ সুপার পরিচয় দিয়ে মাস ছয়েক আগে তাকে বিয়ে করে ছিলেন প্রতারক মাসুদ। তিনিও প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে সহকারী পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লাহ হেল কাফি এ প্রতিবেদককে বলেন, আব্দুল আউয়ালের সঙ্গে দীর্ঘদিন তার যোগাযোগ না থাকায় তিনি এখন কোথায় কর্মরত তা তার জানা ছিল না। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তাদের ব্যাচের আউয়াল সারদায় আছেন। তখন তার ফোন নম্বর যোগাড় করে কথা বলে জানা যায় তিনি সুস্থ আছেন। রাত ১২টার দিকে আইজিপি হাসপাতালের আসার জন্য বের হচ্ছিলেন, নিহত ব্যক্তি যে প্রতারক তা জানিয়ে দেয়ায় তিনি আর আসেননি বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা। লাশের সুরতহালকারী শেরেবাংলা নগর থানার উপ-পরিদর্শক নুরুল ইসলাম জানান, নিহতের গলায় ধারাল অস্ত্রের বেশ কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বুকের বামপাশেও একটি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে।