ভেজাল খাদ্যে ক্যান্সার ঝুঁকি বাড়ছে শিশুদের

0
1112

দশ বছরের শিশু রাজু হোসেন। বাড়ি মানিকগঞ্জের আরিচায়। বাবা মহিদুল ইসলাম কৃষিকাজ করেন। আর মা হাজেরা খাতুন গৃহিণী। এমনিতেই টানাটানির সংসার। তার উপর একমাত্র ছেলের হয়েছে ব্লাড ক্যান্সার। জমিজমা নেই, থাকেন পরের জায়গায়। সম্পদ বলতে ছিল একটা ঘর। ছেলের চিকিত্সা করাতে এসে সেটাও বিক্রি করছেন। বর্তমানে চিকিত্সাধীন রয়েছেন ঢাকা মেডিক্যালের শিশু বিভাগে। সুস্থ হবে এমন নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না চিকিত্সকরা। এভাবে রাজু হোসেনের মতো ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে। গতকাল ঢাকা মেডিক্যালের শিশু বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, শাফায়াত নামে দুই বছরের ছোট্ট এক ছেলে ক্যান্সারে চিকিত্সা নিচ্ছে। এই শিশুর মা নাজমুন নাহারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, দুই মাস ধরে প্রায়ই জ্বরে ভুগত ছেলেটি। গিরা ব্যথা, হাঁটতে অসুবিধা, খাবারে অরুচি আর কাশিও ছিল। পরে তার রক্তে ক্যান্সার ধরা পড়ে। জানা যায়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২০১২ সালের জুলাই মাস থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ক্যান্সারে আক্রান্ত ৫৫৭ শিশু চিকিত্সা নিয়েছে। এছাড়া বর্তমানে ১৬টি বেডে ১৬ জন শিশু, ১০ জন বিভিন্ন ওয়ার্ডে এবং কেবিনে ১০ জন শিশু চিকিত্সাধীন রয়েছে। অন্যদিকে প্রতিদিন বহির্বিভাগে ২৫-৩০ জন শিশু কেমোথেরাপি নিয়ে থাকে। ঢাকা মেডিক্যালের শিশু রক্তরোগ ও ক্যানসার বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আমিরুল মোরশেদ বলেন, ক্যান্সারের মূল কারণ জিনগত পরিবর্তন। তবে এ পরিবর্তন কী কারণে হয়, সে বিষয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা নেই। বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জোহ্রা জামিলা খান খাদ্যে ব্যবহূত রাসায়নিক উপাদান, খাদ্য সংরক্ষণের জন্য মিশ্রিত বিষাক্ত পদার্থ, খাদ্যে ভেজালের কারণেও জিনগত পরিবর্তন ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হয়। তিনি জানান, দ্রুত রোগ নির্ণয় করে চিকিত্সা শুরু করা গেলে ক্যান্সারে আক্রান্ত সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যেতে পারে। তার পরামর্শ, শিশু যদি খুব দ্রুত ফ্যাকাশে হয়ে যায়, শরীরে লাল বা কালো চাকা দেখা যায়, যদি দ্রুত ওজন কমে যায়, ঘন ঘন জ্বর হয়, পেটে অস্বাভাবিক কোনো চাকা অনুভূত হয়, পেট, গলা, কুঁচকি বা বগলে কোনো গোটা বের হয়, চোখের মণি সাদা হয়ে যায়, হাড়ে অস্বাভাবিক ব্যথা হয়, হাড়ের কোনো প্রান্ত বা অস্থিসন্ধি ফুলে যায়, বিনা আঘাতে রক্তপাত হয়, তাহলে দ্রুত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। এদিকে নানা আয়োজনে বিশ্ব শিশু ক্যান্সার দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে গতকাল সোমবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে একটি সচেতনতামূলক র্যালি বের করা হয়। পরে আয়োজিত আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. মো. ইসমাইল খান, পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিজানুর রহমান, শিশু বিভাগের প্রধান প্রফেসর মো. আবিদ হোসেন মোল্লা, শিশু ক্যান্সার ও রক্তরোগ বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. আমিরুল মোরশেদ খসরু, একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জোহরা জামিলা খান প্রমুখ। অন্যান্য আয়োজনের মধ্যে ছিল শিশু পাপেট শো, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, ছবির বই বিতরণ, শিশুতোষ চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু ক্যান্সার ও রক্তরোগ বিভাগ, শিশু বিভাগ, আশিক ফাউন্ডেশন, শিশু একাডেমি, টেকনো অনকোলজি, ওয়ার্ল্ড চাইল্ড ক্যান্সারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

Advertisement
Advertisement

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here