মামলা করে দাম্পত্য অধিকার ফিরে পাওয়া যাবে

0
1598

কখন আদালতে যাওয়া যাবে, কখন নয়
কোনো স্ত্রী বা স্বামী কোনো আইনসংগত কারণ ছাড়া একসঙ্গে বসবাস বন্ধ করে দিয়ে থাকলে, সে ক্ষেত্রে তাদের দুজনের যে কেউ দাম্পত্য অধিকার চাইতে পারেন। তবে কোনো বিয়ে যদি স্ত্রীর ইদ্দত পালনের সময় সম্পন্ন হয়, সে ক্ষেত্রে স্বামী এই অধিকার চাইতে পারেন না। আবার স্ত্রী নাবালিকা থাকলে তালাক সম্পন্ন হলে স্বামীর এই অধিকার থাকে না। আবার বিয়ের আগে সম্পাদিত কোনো চুক্তি যদি এমন হয় যে বিয়ের পর স্ত্রী তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গেই বসবাস করবেন, তাহলে এই অধিকার দাবি করা যাবে না। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী যখন আলাদা ছিলেন, তখন যদি এমন কোনো চুক্তি হয় যে তারপর থেকে তাঁরা একত্রে থাকবেন এবং এতে স্ত্রী রাজি না থাকলে স্বামীকে ত্যাগ করতে পারবেন, তাহলে এই অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।
স্ত্রীকে দেনমোহর না দেওয়া পর্যন্ত স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য মিলন ও বসবাসে অস্বীকার করতে পারেন। স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে তালাক-প্রক্রিয়া সম্পন্নকালে তালাকের নোটিশ প্রত্যাহার করা না হলে এ মামলা চলে না। এ মামলায় আদালত বিবেচনা করেন যে পরস্পরের প্রতি আরোপিত দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে কি না। অনেক সময় দেখা যায়, স্ত্রীর পক্ষে স্বামীর নিষ্ঠুরতার কারণে ঘরে ফেরা সম্ভব নয়। এ রকম হলে তালাক নেওয়ার ক্ষেত্রে ১৯৩৯ সালের বিবাহবিচ্ছেদ আইন অনুযায়ী যেসব অধিকার দেওয়া হয়েছে, তা প্রমাণ করতে পারলে স্বামী এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন। আবার স্বামী যদি স্ত্রীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটায়, যা সত্য প্রমাণিত না হলে দাম্পত্য অধিকার টিকিয়ে রাখতে আদালত ডিক্রি জারি করতে পারেন। তবে স্বামী যদি সমাজচ্যুত কোনো কুখ্যাত সন্ত্রাসী বা মাস্তান হন, সে ক্ষেত্রে স্ত্রী স্বামীর ঘরে ফিরতে বাধ্য নন।

Advertisement

আদালতেই যেতে হবে?
দাম্পত্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাদীকে সৎ মনোভাব নিয়ে আসতে হবে এবং প্রমাণ করতে হবে যে তাঁর জীবনসঙ্গী কোনো কারণ ছাড়াই ঘরে ফিরতে চান না। স্বামী-স্ত্রী দুজনের দাম্পত্য জীবন একান্তই নিজেদের। দুজনের ভালো-মন্দ নিজেদের নির্ধারণ করা উচিত। কোনো কারণে সংসার টেকানো সম্ভব না হলে এ নিয়ে নিজেরা আলাপ-আলোচনা করে কী করা উচিত, তা নির্ধারণ করে নেওয়া উচিত। মনের দিক থেকে এক হতে না পারলে মামলা-মোকদ্দমা করে কাউকে ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে না নামাই উচিত। আদালতে না গিয়ে নিজেরা বসে পারিবারিকভাবে একত্রে থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে মিটমাট করে নেওয়া দরকার। কাউকে জোর করে কিংবা জেদের বশে আদালতের মাধ্যমে ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করলে এতে ফল উল্টোও হতে পারে। মনে রাখতে হবে, আইন কিন্তু কারও মতপ্রকাশ এবং স্বাধীনভাবে থাকার অধিকারকে হরণ করে না।

লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

Advertisement

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here