কাতার ও ভিয়েতনামে নিযুক্ত সাবেক বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান নিখোঁজ হয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সিগন্যাল কোরের (ষষ্ঠ শর্ট কোর্স) একজন অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন। গত ৩ দিনেও তার কোনো সন্ধান মেলেনি। পুলিশ জামানের সন্ধান না পেলেও গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তার ব্যবহৃত গাড়িটি রাজধানীর খিলক্ষেত থেকে উদ্ধার করেছে। গত ৪ ডিসেম্বর
দিবাগত রাত থেকে তাকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তার মেয়ে সামিহা জামান। ওই রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তার মেয়েকে আনতে গিয়ে আর বাসায় ফেরেননি তিনি। সাবেক রাষ্ট্রদূত এম মারুফ জামানের নিখোঁজ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। তিনি কি জীবিত আছেন, জীবিত থাকলে কোথায় আছেন, কারা এবং কেন তাকে ধরে নিয়ে গেছেন এসব প্রশ্ন ওই পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি সচেতন দেশবাসীরও। : এদিকে গতকাল বুধবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামানকে উদ্ধারের জন্য থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশ কাজ করছে। : গত ৫ ডিসেম্বর দুপুরে ধানমন্ডি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয় (জিডি নং ২১৩)। সন্ধ্যায় তার গাড়িটি (ঢাকা মেট্রো-গ-২১-১৩৯৯) পুলিশ খিলতে থেকে উদ্ধার করে। তবে মারুফ জামানের সঙ্গে কোনও ধরনের যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। আর এই বিষয়টি নিয়ে পরিবারের সদস্যরা তার ভবিষ্যৎ নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন। তাকে উদ্ধারে গোয়েন্দা পুলিশের বিশেষ টিম কাজ করছেন বলে সাংবাদিকদের জানানো হয়েছে। রাজধানীসহ সারাদেশেই টার্গেটকৃত বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার লোকজনের নিখোঁজের (গুমের) ঘটনায় নানা উদ্বেগ, উৎকন্ঠা ক্রমেই বাড়ছে। কলেজ শিক, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকের পর এবার নিখোঁজ হলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এম মারুফ জামান। গত আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত এ নিয়ে ১৩ ব্যক্তি নিখোঁজ (গুম) হয়েছেন। এর মধ্য চারজনের খোঁজ মিলেছে। অন্যদের এখনো খোঁজ মেলেনি। : মারুফ জামামের ছোট ভাই বলেন, ‘আমার ভাই কোনও রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত নন। তাকে কেউ তুলে নিয়ে গিয়েছে কিনা, আমরা বুঝতে পারছি না। তিনি বলেন গত সোমবার সন্ধ্যায় বেলজিয়াম থেকে আসা মেয়েকে আনতে নিজে গাড়ি চালিয়ে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন মারুফ জামান। রাত পৌনে ৮টার দিকে তিনি ফোন করে গৃহকর্মীকে বলেন, বাসায় কেউ গেলে তাকে যেন কম্পিউটার ও ল্যাপটপ দিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু রাত ৮টার দিকে সুঠামদেহী ৩ ব্যক্তি বাসায় এসে মারুফ জামানের ব্যবহৃত ল্যাপটপ, কম্পিউটারের সিপিইউ, একটি মুঠোফোন ও একটি ক্যামেরা নিয়ে যান। এ সময় বাসায় তল্লাশিও করেন তারা। জামানের ছোট ভাই রিফাত জামান সাংবাদিকদের বলেন, তার বড় ভাই এবং তিনি ধানমন্ডি ৯/এ নম্বর সড়কের একই ভবনের পৃথক : ফ্যাটে থাকেন। রাত সাড়ে নয়টার দিকে ভাইয়ের বাসার গৃহকর্মী তাকে জানান, মারুফ জামান তখন পর্যন্ত বিমানবন্দরে যাননি। বিদেশ থেকে আসা মেয়ে বিমানবন্দরে বসে আছেন। এরপর থেকে ভাইয়ের মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তিনি দ্রুত বিমানবন্দরে গিয়ে ভাতিজিকে নিয়ে বাসায় ফেরেন। তিনি মনে করেছিলেন, শারীরিকভাবে দুর্বল তার ভাই হয়তো কোনো দুর্ঘটনায় পড়েছেন। রাতে আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর কাছে ও স্বজনদের বাসায় খোঁজ করেও কোনো সন্ধান পাননি। গত : মঙ্গলবার ধানমন্ডি থানায় তিনি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পর পর পুলিশ তার ভাইয়ের গাড়িটি খিলক্ষেতের ৩০০ ফুট সড়কের পাশ থেকে অত অবস্থায় উদ্ধার করে। ভাই কীভাবে নিখোঁজ হলেন, সে বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। ধানমন্ডি থানার এসআই তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘মারুফ জামানের মোবাইল ফোনের সর্বশেষ লোকেশন ট্রেস করে উত্তরার দিকে পাওয়া গিয়েছে। আমরা তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করছি। জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা ধানমন্ডি থানার এস আই তারিকুল আনোয়ার বলেন, গাড়িটি অত অবস্থায় পাওয়া গেলেও এখনো মারুফ জামানের সন্ধান মেলেনি। ‘পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে মেসেজ পেয়ে আমি গাড়িটির নম্বর মিলিয়ে দেখার পর গাড়িটি জব্দ করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। : খিলতে থানার এসআই জাহেদ বলেন, গাড়িটি অত অবস্থায় রাস্তার পাশে পার্কিং করা ছিল। কোনও দুর্ঘটনা বা অন্য কিছু হয়নি। লকড অবস্থায় ছিল। লোকজনের উপস্থিতিতে গাড়িটি খুলে ভেতরে শুধু গাড়ির কাগজপত্র পাওয়া গেছে। পরে সেসব জব্দ তালিকা করে খিলতে থানায় নেয়া হয়েছে। : উল্লেখ্য, রাষ্ট্রদূত হিসেবে মারুফ জামান ৬ ডিসেম্বর ২০০৮ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ পর্যন্ত ভিয়েতনামে কর্মরত ছিলেন। এর আগে তিনি কাতারে রাষ্ট্রদূত, যুক্তরাজ্যে কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালে তিনি অবসর নেন।