অপরাধ বিচিত্রা প্রতিবেদক ॥
বঙবন্ধুর যে ডাকে স্বাধিনতা অর্জন হয়েছে সে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সশস্ত্র বাহিনী পরিচালিত হবে। বহু ত্যাগে অর্জিত স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে মনে প্রাণে ধারণ করতে হবে মুত্তিযুদ্ধের চেতনাকে। সস্ত্রশ বাহিনী সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই পরিচালিত হবে। জাতির ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধ সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধের ফলশ্রুতিতে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র পরিচিতি লাভ করেছে। মুক্তিযোদ্ধারা নিজের জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদান রেখে আমাদের একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ উপহার দিয়েছেন। মঙ্গলবার সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেনাকুঞ্জে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যেককে তার সরকার ভাতা প্রদান করবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা বিশেষ করে সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, আনসার-ভিডিপি এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’র (তৎকালীন ইপিআর) সদস্য যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তাদের ভাতা প্রদান করা হবে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তারা সে সময় বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন বলে তাদের ভাতা প্রদান করা হয়নি। এখন থেকে তারা অবসরে এবং তাদের পরিবারের সদস্যরাও সমস্যায় রয়েছেন। আমরা তাদের সকলকেই আগামী জানুয়ারি থেকে ভাতা প্রদান করব ইনশাআল্লাহ। সশস্ত্র বাহিনী দিবসে আমি এখানে এলেই প্রতিবছর এই দাবি উঠত। কাজেই আমরা এটি (ভাতা) প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে তার সরকার সম্ভাব্য সবকিছু করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন এবং আত্মাহুতি দিয়েছেন তাদের মর্যাদা দেয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। দিবসটি উপলক্ষে সেনা নিবাসে ‘আলোকের ঝর্ণা ধারায় রাঙিয়ে দাও রাঙিয়ে দাও’—-। আলোকের নানা রং দিয়েই রাঙিয়ে দেয়া হয়েছিল ঢাকা সেনানিবাসকে। আর হরেক রকমের ফুলে ফুলে সেজেছিল সেনাকুঞ্জ। এমন এক মনোরম পরিবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেনাকুঞ্জে আসার পরই চৌকস বাদকদল বদ্যযন্ত্রে জাতীয় সঙ্গীতের সুর তোলেন। সুরের আবেশে কুঞ্জ এলাকায় দেশপ্রেমের মহান আবেশ তৈরি হয়। এ সময় উপস্থিত সামরিক বেসামরিক সবস্তরের কর্মকর্তা, নেতা, মন্ত্রী যে যেখানে ছিলেন সেখানেই নীরবে দাঁড়িয়ে যান। সে এক অন্য রকম দৃশ্য-অন্য রকম বাংলাদেশের অনুভূতি। এ দৃশ্য সেনাকুঞ্জে বছরে একবারই দেখা যায়। সেই দিনটি হচ্ছে ২১ নবেম্বর। দিনটি সশস্ত্র বাহিনীর ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। এই দিবসটি সশস্ত্র বাহিনীই নয়, গোটা জাতির কাছে দারুণভাবে গুরুত্ব বহন করে আসছে। তাই দিবসটিকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা উপস্থিত হয়েছিলেন সেনাকুঞ্জে। বাদ ছিলেন না গণমাধ্যমের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তি থেকে কর্মীরাও। মনমুগ্ধকর এমন আয়োজনের মাধ্যমে পালিত হয়েছে সস্ত্রশ বাহিনী দিবস। শিখা অনির্বাণে ফুল দেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও তিন বাহিনীর প্রধানগণ। এরপর ফজর নামাজে বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দিবসের নানা কর্মসূচীর সূচনা হয়। সেনাকুঞ্জে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য ছিল একটি দক্ষ ও চৌকস সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলা। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য যুদ্ধকালীন ও শান্তিকালীন সময়ে বীরত্বপূর্ণ কর্মকা-ের স্বীকৃতিস্বরূপ যুদ্ধকালীন ও শান্তিকালীন পদক প্রচলন করেছে। যা বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বর্তমান সরকারের ৯ বছরে সশস্ত্র বাহিনীর ব্যাপকভাবে আধুনিকায়ন হয়েছে। বিশেষ করে নৌ-বাহিনীকে ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে রূপ দেয়া হয়েছে। এই বাহিনীতে যোগ করা হয়েছে সাবমেরিন। আকাশে যুদ্ধ জাহাজ। আর জলে ছোট-বড় শতাধিক জাহাজ সংযোজনের মাধ্যমে বাহিনীটি আক্ষরিক অর্থেই ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে পরিনিত হয়েছে। বর্তমানে এই বাহিনী ব্লু ইকোনমিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে। একইভাবে উন্নয়ন ঘটানো হয়েছে সেনা ও বিমান বাহিনীতেও। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারই সশস্ত্র বাহিনীর জন্য এপিসি, মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান, অত্যাধুনিক ফ্রিগেট ও অন্যান্য আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহের কাজ শুরু করেছিল। এরপর ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে তিন বাহিনী আধুনিকায়নের বিষয়ে উদাসিনতা দেখায়। বস্তুত এই সময়ে তিন বাহিনীতে তেমন কোন উন্নয়ন ঘটেনি। পরে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পরিকল্পনায় ২০৩০ সালের মধ্যে সস্ত্রশ বাহিনীকে সর্বাধুনিক বাহিনীতে পরিনিত করা হবে। বর্তমান সময়ে দেশের সস্ত্রবাহিনী বিশ্ব দরবারে একটি উচ্চমানে চলে গেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের উন্নত দেশের বাহিনীগুলো সমকক্ষ স্থানে চলে যাবে।
খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা-উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা ॥ সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০১৭ উপলক্ষে মঙ্গলবার সকালে ঢাকা সেনানিবাসের মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা-উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সাত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারকে সম্মানী চেক এবং মোবাইল ট্যাবসহ বিভিন্ন উপহার দেন। মুক্তিযুদ্ধে সম্মাননা পদকপ্রাপ্তদের মাঝে বিতরণ করেন। ‘শান্তিকালীন’ পদক ২০১৬ বিজয়ী ১২ জন এবং ‘অসামান্য সেবা’ পদক বিজয়ী ১৪ জনসহ সশস্ত্র বাহিনীর ২৬ জন সদস্যের মাঝে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী পদক বিতরণ করেন। অনুষ্ঠানে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ মাহফুজুর রহমান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মুহম্মদ শফিউল হক, নৌবাহিনী প্রধান এ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল আবু এসরার এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। জাতির বীর সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক মর্যাদায় পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং তাদের অবদানের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি দিতে তার সরকার নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ভাতার পরিমাণ ৯শ’ টাকা থেকে পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি করে ১০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে এবং ভাতা ভোগীর সংখ্যা এক লাখ থেকে বৃদ্ধি করে দ্বিগুণ অর্থাৎ দুই লাখে উন্নীত করা হয়েছে। তিনি বলেন, মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ৬৭৬ জন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে যথাক্রমে বীরশ্রেষ্ঠদের জন্য ৩০ হাজার টাকা, বীর উত্তমদের জন্য ২৫ হাজার টাকা, বীর বিক্রমদের জন্য ২০ হাজার টাকা এবং বীর প্রতীকদের জন্য ১৫ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন শ্রেণীর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারবর্গের মাসিক রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতা সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাগণকে শিক্ষা ভাতা, কন্যা সন্তানের ক্ষেত্রে বিবাহ ভাতা, উৎসব ভাতা, দেশে-বিদেশে চিকিৎসাসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রতি জেলায় ভবন নির্মাণ করা হবে। যার মধ্যে ৪৯ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন এবং হস্তান্তর করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৩ থেকে মোট ১,০৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৭০ উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় ইতোমধ্যে ২৫১টি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অভূতপূর্ব অবদান কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের বিষয়ে আমাদের সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রী মহান সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জানাই শুভেচ্ছা ও আন্তরিক অভিনন্দন। ঐতিহাসিক এই দিনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর অকুতোভয় সদস্য এবং আপামর জনসাধারণ সম্মিলিতভাবে দখলদার পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ সূচনা করে। ডিসেম্বরের শুরুতে যুক্ত হয় ভারতীয় মিত্র বাহিনী। সশস্ত্র বাহিনী, বাংলার মুক্তিপাগল জনতা ও মিত্র বাহিনীর একযোগে শত্রুকে আক্রমণ আমাদের বিজয়কে ত্বরান্বিত হয়। আমরা অর্জন করি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার সুমহান দায়িত্ব সশস্ত্র বাহিনীর উপর ন্যস্ত। এ পবিত্র দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আমাদের দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা, দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম, অবকাঠামো নির্মাণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রতিনিধিত্বশীল অংশগ্রহণ বজায় রাখছে। আমি এজন্য সশস্ত্র বাহিনীর সকল সদস্যকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন ও সব ধরনের কল্যাণমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। আজ দেশের সকলবাহিনী এবং প্রতিষ্ঠান উন্নয়নের সুফল ভোগ করছে এবং বাঙালী জাতি হিসেবে আমরা আজ বিশ্ব দরবারে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছি। আমরা সেই সক্ষমতা এবং সামর্থ্য অর্জন করেছি এবং আমাদের তা ধরে রাখতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালী জাতি বিজয়ী জাতি এবং এ জাতি কখনও মাথা নত করে থাকবে না। স্বাধীনতার এই গৌরবকে আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর। আমরা হারানো গৌরব আবার ফিরিয়ে এনেছি এবং বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতার লক্ষ্যই ছিল দেশের জনগণকে দারিদ্র্যের কশাঘাত থেকে মুক্ত করার, মানুষ উন্নত জীবন পাবে, উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পাবে, শিক্ষা পাবে এবং তারা মাথা উঁচু করে চলবে। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে বহুকষ্টে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা পিছিয়ে থাকতে পারি না, শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। আমরা এটা কখনও হতে দেব না। জাতি মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানকে চিরদিন প্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে এবং আমরা সোনার বাংলা গড়ে তুলব যে স্বপ্ন একদিন জাতির পিতা দেখেছিলেন। বক্তব্যের শেষ প্রান্তে এসে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কো তাদের ‘ওয়ার্ল্ড ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই স্বীকৃতির মধ্যদিয়ে এটাই প্রমাণ হয়েছে যে, ইতিহাসকে কখনও মুছে ফেলা যায় না এবং ইতিহাস তার স্থান একদিন ঠিকই করে নেবে। এটা এখন প্রমাণিত। ওই ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে জাতির পিতা বাঙালী জাতিকে মুক্তির পথ দেখিয়েছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালী জাতি ওই ভাষণের মাধ্যমেই মুক্তিযুদ্ধের সকল প্রকার দিক নির্দেশনা পেয়েছিল। অথচ ওটা কোন লিখিত ভাষণ ছিল না, ছিল উপস্থিত বক্তৃতা। তিনি বলেন, জাতির পিতা তার ভাষণের মাধ্যমে সমগ্র জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার এবং গেরিলা যুদ্ধের চূড়ান্ত নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর ক্ষমতা লিপ্সুরা ইতিহাস বিকৃতির ষড়যন্ত্র করে এবং জাতির পিতার নামও তার সকল অর্জনকে মুছে ফেলে দিতে চেয়েছিল। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে কাজেই যারা ১৯৭৫’র পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল তারা ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে পতিত হয়েছে, তারা কূপম-ুকতায় ভুগেছে। তারা দেশের স্বাধীনতাকে ধূলিসাৎ করে সমগ্র দেশকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল।
সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ সদস্যদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০১৭ উপলক্ষে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি মঙ্গলবার সকালে ঢাকা সেনানিবাসে শিখা অনির্বাণে (শিখা চিরন্তন) পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে এ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গ করা শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্যে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকস দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। সে সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। সেনাকুঞ্জে বৈকালীন সংবর্ধনা ॥ দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী কর্তৃক ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে এক বৈকালীন সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে। এ সংবর্ধনায় উল্লেখযোগ্য আমন্ত্রিত ব্যক্তিত্বগণের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় সংসদের ¯পীকার, প্রধান বিচারপতি, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিগণ, সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা, প্রাক্তন প্রধান উপদেষ্টাগণ, মন্ত্রী ও মন্ত্রীর পদমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিগণ, প্রতিমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিগণ, ডেপুটি স্পীকার, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশী রাষ্ট্রদূতগণ, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানগণ, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারগণ, বিচারপতিগণ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, মুখ্য সচিব, সংসদ সদস্য (ঢাকা এলাকার এবং প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তাগণ), বাহিনীত্রয়ের প্রাক্তন প্রধানগণ, ২০১৭ সালের স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত ও একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, স্বাধীনতা যুদ্ধের সকল বীরশ্রেষ্ঠের উত্তরাধিকারীগণ, স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ঢাকা এলাকায় বসবাসরত খেতাবপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-তাদের উত্তরাধিকারীগণ, উচ্চপদস্থ বেসামরিক কর্মকর্তাগণ এবং তিন বাহিনীর চাকরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।