জাকির সিকদারঃ ঝালকাঠির রাজাপুরের বড়ইয়ার বিষখালি নদীতে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে জাটকা ইলিশ শিকারের ঘটনায় জেলে নুরজামালকে আটক করে বেঁধে মারধরের জেরে জেলে-পুলিশ সংঘর্ষে এক নারী, ৩ জেলে, ২ ট্রলার চালক ও ৫ পুলিশসহ মোট ১১ জন আহত হয়েছে। বড়ইয়া গ্রামের বিষখালি নদীর বুথমারা খালের মোহনায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে, তবে কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। আহতরা হল-পালট গ্রামের রফিজ খানের ছেলে জেলে নুর জামাল (৪০), নুর জামানের তার মা নুরি বেগম (৬০), বড়ইয়া গ্রামের মজিবর খানের ছেলে জেলে সোহাগ খান (১৭), আলতাফ হাওলাদারের ছেলে জেলে মনির হাওলাদার (২৫), পালট গ্রামের কাদের খানের ছেলে খেয়ার ট্রলার চালক এনায়েত খান (৩৫) এবং বাখেরগঞ্জের নিয়ামতির নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আতিকুর রহমান, এএস আই আফজাল হোসেন, নায়েক রিয়াজুল ইসলাম, সদস্য আনোয়ার হোসেন, আলতাফ হোসেন ও পুলিশের ট্রলার চালক ফোরকান গাজি (৩২)। আহতরা রাজাপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে চিকিতসা নিয়েছে।
পুলিশ ও আহত জেলেরা জানান, সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে বিষখালি নদীতে কারেন্ট জাল দিয়ে জাটকা ইলিশ শিকারের সময় নুরজামালসহ ৩ জেলেকে আটক করে ট্রলারে টহলরত ৮ সদস্যের একটি নৌ পুলিশের দল। নুরজামালকে পুলিশ হেফাজতে রাখতে সক্ষম হলেও বাকি ২ জেলে মনির ও সোহাগ নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে পালিয়ে আসা দুই জেলে নদীর তীরে এসে নুরজামালকে আটক ও হাত-পা বেঁধে ট্রলারে মারধর করা হয় বলে তার স্বজন ও অপর জেলেদেরকে জানালে জেলে ও এলাকাবাসী কয়েকটি ট্রলারে গিয়ে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে আসার সময় পুলিশের সাথে জেলে ও এলাকাবাসীর সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। জেলে নুর জামানের মা নুরি বেগম অভিযোগ করে জানান, তার ছেলে আটক করে বেধরক মারধর করছে শুনে তিনি ট্রলারে করে পুলিশের ট্রলারের গিয়ে ছেলেকে রক্ষার চেষ্টা করলে জেলে তাকেও মারধর করা হয় এবং বিবস্ত্র করে শ্লীলতাহানি করা হয়। পালট ও বড়ইয়া গ্রামের জেলেরা অভিযোগ করে জানান, নিয়ামতি নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আতিকুর রহমান বিভিন্ন সময় জাল-নৌকা ধরে নিয়ে জাল-ইঞ্জিন নৌকা ৫ হাজার টাকায়, শুধু নৌকা ৩ হাজার ও শুধু জাল ২ হাজার টাকা ঘুষের বিনিময়ে রাতে ছেড়ে দেয় বলে অভিযোগ জেলেদের এবং প্রতিদিন ৫শ’ অথবা মাসে ১০ হাজার দিলে দিলে নদীতে জাল দিয়ে মাছ শিকার করতে দেন। কিন্তু বর্তমানে এসআই আতিকুর প্রতিদিন জেলে ১ হাজার টাকা উতকোচ দাবি করলে এনিয়ে জেলেদের সাথে আতিকের বিরোধ দেখা দেয়। এসব ঘটনার জেরে পুলিশ জেলেদেরকে মারধর করেছে বলে অভিযোগ জেলেদের। তবে বাখেরগঞ্জের নিয়ামতির নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আতিকুর রহমান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, অভিযান চালিয়ে ৩ জেলেসহ জাল ও নৌকা আটক করলে তা থেকে নদীতে ঝাপদিয়ে ২ জন পালিয়ে গেলেও জেলে নুর জামাল আটক করতে সক্ষম হয়। কিছুক্ষণ পরেই কয়েকটি ট্রলারে করে আটক নুরজামালের আত্মীয়স্বজন ও অপর জেলেরা তাদের (পুলিশ) ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে ৫ পুলিশ সদস্য ও তাদের ট্রলার চালককেও মারধর করে। হামলার ভিডিও করার চেষ্টা করলে বৈঠা দিয়ে হাতে আঘাত করলে মোবাইলটি পড়ে যায়। ওই এলাকার জেলেরা খুব উচ্ছিঙ্খল প্রকৃতির, তারা আইনকানুন মানে না। প্রত্যেক নিষেধাজ্ঞা সময়ই আইনের তোয়াক্কা না করে কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ শিকার করে। রাজাপুর থানার ওসি শামসুল আরেফিন জানান, এ ঘটনায় আহত নিয়ামতি নৌ পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ এসআই আতিকুর রহমান বাদি হয়ে মামলার প্রস্ততি নিচ্ছেন। অভিযক্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে