রোহিঙ্গাদের ঐতিহ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করা হচ্ছে

0
680

অপরাধ বিচিত্রা প্রতিনিধিঃ রোহিঙ্গাদের চিরতরে ধ্বংসে মুছে ফেলা হচ্ছে তাদের সকল ঐতিহ্য। আন্তর্জাতিক যাবতীয় নিন্দা, চাপ ও উদ্বেগ উপেক্ষা করে কথিত স্থিতিশীলতার আবরণে রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের সকল ধর্মীয় ও ঐতিহ্যগত চিহ্ন মুছে ফেলছে বিশ্ব বিতর্কিত সামরিক জান্তা। গত সপ্তাহে মংডুর হেন্দি পাড়ায় আড়াই শত বছরের অধিক পুরনো একটি মসজিদসহ ওই এলাকার ১৭টি মসজিদের মধ্যে ১৬টি মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়েছে বলে মংডু থেকে খবর পাওয়া গেছে। এদিকে মিয়ানমারের লাদেন খ্যাত বিতর্কিত বৌদ্ধ সন্ন্যাসী উ ওয়েরাথু মিয়ানমারের জাতীয় ধর্মীয় পরিচয়ের প্রতি সে দেশের কার্যত সরকার প্রধান স্টেট কাউন্সিলার অং সান সুচিকে হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করে সেনাবাহিনী এ ক্ষেত্রে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভরসা স্থল বলে জানিয়েছেন।

Advertisement

রাখাইনের মংডুর শহর পার্শ্ববর্তী সিন্ডি প্রাং গ্রামের হেন্দি পাড়া, উসার পাড়া ও পুরানো পাড়ায় অবস্থিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের ১৭টি মসজিদ, মকতব ও সংলগ্ন মাদ্রাসার মধ্যে ১৬টি ভেঙে ফেলা হয়েছে। কয়েকটি মসজিদ ও মাদ্রাসা সংলগ্ন কবরস্থানের ঘেরা বেড়াও ভেঙে ফেলা হয়েছে। আর এগুলো গত সপ্তাহ থেকে রোববার পর্যন্ত মিয়ানমার সেনাবাহিনী, বিজিপি ও উগ্র রাখাইনরা ভেঙে ফেলছে।হেন্দিপাড়া থেকে মৌলভী রহমত শরিফ (৫৫) ফোনে জানিয়েছেন, বার্মার মগ রাজা বোধা পায়া ১৭৮৪ সালে আরাকান আক্রমণের পূর্বে ১৯৫২ সালে রোহিঙ্গাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন সিন্ডি প্রাং মসজিদটিও ভেঙে দিয়েছে। ভেঙে দেওয়া ১৬টি মসজিদের মধ্যে ৬টি মসজিদের বয়স শতাধিক বছরের পুরনো। এসব প্রাচীন স্থাপনাগুলো বোল্ড ডোজার দিয়ে ভেঙে মাটির সাথে মিশিয়ে ফেলা হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ইতিহাসের ভয়াবহতম নৃশংসতার মাঝেও আমরা কিছু লোক বিভিন্ন ভাবে দেশে থেকে গিয়েছি। হাজার হাজার ঘরবাড়ি, স্থাপনা ২৫ আগস্টের পর থেকে ধ্বংস করে অসংখ্য রোহিঙ্গাকে হত্যা, ধর্ষণ, নির্বিচারে আটক করা হয়েছে। এখন সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থি রাখাইনরা রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের সব ধরনের ইতিহাস ঐতিহ্য, প্রাচীন নিদর্শন ও স্থাপনা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় চিহ্নগুলো মাটির সাথে মিশিয়ে দিচ্ছে যাতে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ইতিহাস মুছে ফেলার মত।

বর্তমান রাখাইন পরিস্থিতি ও জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের সরকারের আইনি পদক্ষেপের ব্যাপারে জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ সন্ন্যাসী মিয়ানমারের লাদেন খ্যাত উ ওয়েরাথু বলেছেন, জাতীয় ধর্মীয় পরিচয়ের জন্য অং সান সুচি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাখাইনের পরিস্থিতির বিষয়ে সরকার ও সেনাবাহিনী বৈশ্বিক কঠোর সমালোচনার ব্যাপারে তিনি বলেন, সরকার এব্যাপারে আমাদের অবিশ্বাস করছে। এ ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর উপর ভরসা বেড়েছে। তিনি বলেন, আমরা সেনাবাহিনীকে সমর্থন করি, কারণ সেনা প্রধান যখন বলেছেন, রাখাইনে সংখ্যা লঘুদের পূর্ণ সুরক্ষা দিয়ে সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে তাদেরকে সন্ত্রাসীদের গণ হত্যার কবল থেকে রক্ষা করবে। বৌদ্ধ জাতি পরিচয়ে আমরা কেবল সেনাবাহিনীর ওপর নির্ভর করতে পারি। গতকাল মিয়ানমারে অনলাইন ভিত্তিক ইরাবর্তী সাথে এক সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরো জানান, রাখাইনের ব্যাপারে সেনাবাহিনীকে দোষারূপ করার অনুপযুক্ত। এর জন্য সেনাবাহিনী নয় বরং সরকারের করা উচিত বলে তিনি জানান। বিদেশিদের যে কোন ধরনের হস্তক্ষেপ অনৈতিক বক্তব্যের বিরুদ্ধে আমরা। কফি আনানের সুপারিশ বাস্তবায়ন সম্পর্কে তিনি বলেন, যে কোন রিপোর্ট সব পক্ষের কাছে গ্রহণ যোগ্য হতে হয়। তবে এটি নিখুত নয়। রাখাইন কমিশনের অনেক কিছু দেশের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ। যেমন সুপারিশে যারা নাগরিকত্বের অধিকারী নয় তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এর জন্য ১৯৮২ সালের আইন সংশোধন করা দেশের জন্য হুমকি সরূপ। সরকার যদি এটি করতে উদ্যোগ নেয় তাতে আমরা বিরোধীতা করবো এবং এতে বৌদ্ধ সন্ত্রাসী সন্ন্যাসী ও তাদের সমর্থকরা এগিয়ে আসবে বলে তিনি জানান বলে উক্ত গণমাধ্যম জানিয়েছেন। রোহিঙ্গারা মনে করছেন সরকার সেনাবাহিনী, বৌদ্ধ সন্ন্যাসী গ্রুপ মা বা থা যেভাবে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে এতে রাখাইনে ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য খুবই কঠিন হবে।

 

Advertisement

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here