শিকারি ও চোরাচালানিদের পোয়াবারো বিপাকে বন বিভাগ নিঝুম দ্বীপের ৪৫ হাজার হরিণ নিয়ে

0
784

নিঝুমদ্বীপের হরিণ নিয়ে রীতিমত হরিলুট চলছে। একদিকে অসাধু শিকারীরা নিধন করছে শত শত হরিণ। অপরদিকে দেশীয় চোরাচালানীরা বিপূল সংখ্যক হরিণ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করছে। স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তি হরিণের মাংশ ও চামড়া বিক্রি করে টুপাইস কামাচ্ছে।
এলাকার প্রভাবশালী ও স্থানীয় বন বিভাগের কতিপয় অসাধু ব্যক্তির

Advertisement

সহযোগীতায় নিঝুমদ্বীপের শত শত হরিণ সাবাড় হচ্ছে। নিঝুমদ্বীপের ৪৫ হাজার হরিণ নিয়ে বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয় এখনো সিদ্বান্তে পৌছতে পারেনি। ফলে এখন নিঝুমদ্বীপের হাজার হাজার হরিণ লুটের মাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। জানা গেছে, ১৯৫০ সালের দিকে মেঘনার বুক চিরে একখন্ড ভ‚মি জেগে উঠে। পরবর্তীতে চরটি আরো বিশাল আয়তনের মাধ্যমে পরিপূর্ণতা লাভ করে। সর্বশেষ দ্বীপটির নামকরন করা হয় নিঝুমদ্বীপ। ১৯৬৫ সাল থেকে হাতিয়ার কিছু ব্যক্তি অস্থায়ীভাবে সেখানে চাষাবাদ শুরু করে।
১৯৬৯ সালের প্রলয়ংকরী ঝড় জলোচ্ছাসে দুই শতাধিক কৃষক নিহত হয়। এরপর ১৯৭৩ সাল থেকে নিঝুমদ্বীপে জনবসতি গড়ে উঠে। সরকারী হিসাব অনূযায়ী নিঝুমদ্বীপের বর্তমান আয়তন ১৬৩ বর্গকিলোমিটার। ২০০১ সালে সরকার নিঝুমদ্বীপকে রিজার্ভ ফরেষ্ট অঞ্চল ঘোষনা করে। এরমধ্যে ৫০% রিজার্ভ ফরেষ্ট এলাকা ঘোষণা করা হলেও বাস্তবে অর্ধেকও নেই। ১৯৭৮ সালে নোয়াখালী বনবিভাগ নিঝুমদ্বীপে দুই জোড়া চিত্রা হরিণ অবমুক্ত করে। ১৯৯৬ সালের আদমশুমারী মতে, নিঝুমদ্বীপের হরিণের সংখ্যা ২২ হাজার। বর্তমানে এ সংখ্যা দ্বিগুন অর্থাৎ ৪৫ হাজারে এসে পৌছেছে।
নিঝুমদ্বীপে হরিণের ঘনত্ব তৎসহ শিকারী ও পাচারকারীদের কথা মাথায় রেখে ২০১১ সালে নোয়াখালীর ডিএফও নিঝুমদ্বীপ থেকে কিছু সংখ্যক হরিণ দেশের অন্যান্য বনাঞ্চলে স্থানান্তরের জন্য প্রধান বন সংরক্ষক কার্যালয়ে চিঠি প্রেরন করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, প্রধান বন সংরক্ষক কার্যালয় কিংবা বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয় অদ্যবধি বিষয়টি সূরাহা করতে পারেনি। ফলে নিঝুমদ্বীপে হরিণের বংশবৃদ্বির পাশাপাশি প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ হরিণ সাবাড় হচ্ছে। অপরদিকে খাদ্যাভাবে বিপূল সংখ্যক হরিণ লোকালয়ে প্রবেশ করে কৃষকের ফসলাদি সাবাড় করছে। এসময় ওৎ পেতে থাকা শিকারীরা হরিণ নিধন করছে। একাধিক বিস্বস্থ সূত্রে জানা গেছে, নিঝুমদ্বীপের হরিণ ঘিরে এক শ্রেনীর চোরাচালানী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে। গভীর সমুদ্রে ইলিশ ধরার নামে এরা ট্রলারযোগে হরিণ পাচারে লিপ্ত।
নিঝুমদ্বীপের হরিণের গোশত হাতিয়ার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অতিথি আপায়নে হরিনের গোশত বিশেষ সমাদৃত হচ্ছে। নিঝুমদ্বীপের কয়েক হাজার হরিণ জোয়ারের পানিতে ভেসে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলায় আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশেষ করে ঝড় জলোচ্ছাসে বিপুল সংখ্যক হরিণ মারা যাচ্ছে। স্থানীয় কয়েকজন অধিবাসী ইনকিলাবকে জানায়, সংশ্লিষ্ট বিভাগের সিদ্বান্তহীনতার কারণে নিঝুমদ্বীপের হরিণ এখন লুটের মাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অথচ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় নিঝুমদ্বীপ থেকে কয়েক হাজার হরিণ দেশের বিভিন্ন বনাঞ্চলে অবমুক্ত করলে একদিকে হরিণের বিস্তার ঘটবে অন্যদিকে নিঝুমদ্বীপে হরিণ নিধন বন্ধ হবে।

Advertisement

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here