শীতের দিনের মজাদার সব পিঠা চিতই, ভাপা, ভর্তা

4
2437

সড়কের ধারের অস্থায়ী দোকানে সাজিয়ে রাখা হয়েছে চিতই পিঠা। কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ২ ডিসেম্বর। ছবি: আবদুস সালামশীতের অপেক্ষায় থেমে নেই নগরবাসীর পিঠা খাওয়া। রাস্তার ধারে চুলা নিয়ে ‘খালা-মামারা’ পিঠা বানিয়ে চলেছেন। চিতইয়ের মাথায় একটু সরিষা ভর্তা লাগিয়ে

Advertisement

মুখে দিলেই তার তেজ মাথা পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে। তবে হালকা শীতে সেটা খেতে বেশ মজাই লাগে। আর ভাপ ওঠা ভাপা পিঠা তো আছেই। বাঙালির ঘরে পিঠা সারা বছরই কমবেশি হয়। তবে শীতে একটু বেশি। খেজুরের গুড় ও রস এতে বাড়তি স্বাদ দেয়। তাই এ ঋতু এলেই পিঠার উৎসব চলে। জ্বলন্ত চুলার পাশে গোল হয়ে বসে সদ্য নামানো পিঠা এহাত-ওহাত করে ফুঁ দিয়ে খাওয়া হয় না রাজধানীবাসীর। তবে ফুটপাতের ধারে অস্থায়ী দোকানের চুলা থেকে নামানো গরম-গরম পিঠা খাওয়া যায়। সেখানে চিতই আর ভাপা পাওয়া যায়। চিতইয়ের সঙ্গে হরেক পদের ভর্তা। চিতই পিঠার সঙ্গে মিলবে হরেক রকম ভর্তাও। কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ২ ডিসেম্বর। ছবি: প্রথম আলোরাজধানীর বসুন্ধরা শপিং মলের পেছনে বাবা-ছেলের পিঠার দোকান। সাতটি চুলায় ভাপা, চিতই, তেলে ভাজা পিঠা বানাচ্ছেন ছেলে শেখ শহিদুল ইসলাম। বাবা আবদুল মতিন সবকিছু তদারক করছেন। সামনে ঠিক বুফে স্টাইলে বাটিতে করে ৩৫ রকমের ভর্তা সাজানো। পিঠার সঙ্গে ইচ্ছেমতো ভর্তা খাওয়া যাবে। মতিন বলেন, ভর্তার মধ্যে কালিজিরা, ধনেপাতা আর সরিষা বেশি চলে। চিতই ৫, ডিম চিতই ২০, ভাপা ১০ এবং তেলে ভাজা পিঠা ৫ টাকা। ভর্তা ফ্রি। শহিদুল বলেন, ভর্তা মা বানিয়ে দেন। আর এখানে এসে তিনি পিঠা তৈরি করেন। সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এখানে পিঠার পাওয়া যায় সারা বছর। তবে ভাপা পিঠা শুধু শীতেই হয়। তানিয়া সুলতানা এক বন্ধুকে নিয়ে ফার্মগেটে পিঠা খাচ্ছিলেন। বাইরে পিঠা খাওয়ার ব্যাপারে বলেন, ‘বাসায় পিঠার আয়োজন ঝামেলার। এখানে ভালো পিঠাই বানায়। দামও কম। তাই প্রায়ই চলে আসি।’
চিতই পিঠার পাশাপাশি রয়েছে মিষ্টি ভাপা পিঠাও। কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ২ ডিসেম্বর। ছবি: প্রথম আলোতানিয়া খাচ্ছিলেন রাস্তার পাশে ‘পাগলা পিঠা’ নামের একটি অস্থায়ী দোকানে। এদের পিঠা এরই মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার দেখা গেল, সন্ধ্যা নামতেই ভিড়। একেকজন ঠেলেঠুলে জায়গা করে নিচ্ছেন। পিঠা বানানো থেকে বিক্রির কাজ করছেন চারজন কর্মী। তাঁদের একজন মো. মিজানুর বলেন, ‘প্রতিদিন ৩২ কেজি চাল ও আটার পিঠা বানাই। আগে ভর্তার পরিমাণ বেশি ছিল, কিন্তু নষ্ট হয়। এখন ১৫ পদ রাখি। একেক দিন একেক পদের ভর্তা।’ পাগলা পিঠা শুধু শীতের সময়টাতেই খাওয়া যাবে। ধানমন্ডি ১৫ নম্বরে চুলা, হাঁড়ি ও প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ নিয়ে মো. রুবেল বিকেলেই বসে পড়েন। ছোট কাচের বাক্সের মধ্যে সাজিয়ে রাখেন ভাপা, চিতই আর ভর্তা। সরিষা, ধনেপাতা আর শুঁটকি ভর্তা আছে। সন্ধ্যা হলেই ভিড় বাড়তে থাকে। কেউ কেউ রাস্তার পাশেই খেয়ে নেন। আবার অনেকেই প্যাকেট করে বাসায় নিয়ে যান। বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শাহিন রহমান তিন বন্ধুকে নিয়ে বের হয়েছেন পিঠা খেতে। রুবেলের কাছেই ভাপা আর চিতইয়ের ফরমাশ দিলেন। তবে আগে চিতই খেয়ে ঝাল কমাতে পরে ভাপা খাবেন। শাহিন বলেন, ‘ঢাকায় তো পিঠা খাওয়ার ভরসা এই রাস্তাই। ছোটবেলায় দাদুবাড়িতে কাজিনরা মিলে খুব মজা করে পিঠা খেতাম। তাজা রসে তৈরি করা পিঠা এখন খুব মিস করি।’

Advertisement

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here