সাঁকো মেরামত করতে বলায় মা ও নানিকে মারধর উদ্ধার হয়নি শিশু হৃদয় তৎপর ফায়ার সার্ভিস

0
519
বোনের হাত ধরে সাঁকো পার হতে গিয়ে পানিতে পড়ে নিখোঁজ আড়াই বছরের শিশু হৃদয়কে এখনও উদ্ধার করা যায়নি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। রোববার বিকাল ৪টার দিকে স্থানীয়ভাবে জিরানি খাল বলে পরিচিত ওয়াসার স্যুয়ারেজের ওপর বাঁশের সাঁকো পার হয়ে বাসায় ফেরার সময় বোনের হাত থেকে ছিটকে পানিতে পড়ে যায় হৃদয়

ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক ছালেহ উদ্দিন বলেন, সকাল থেকে আমাদের তিনিটি ইউনিট উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত আমরা হৃদয়ের খোঁজ পাইনি। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হবে না, ততক্ষণ উদ্ধার অভিযান চলবে।’ মঙ্গলবার উদ্ধার কাজে এলাকাবাসীর সঙ্গে নিখোঁজ হৃদয়ের বাবা কামাল হোসেনও অংশ নেন। খালের ময়লা সরিয়ে তারা উদ্ধার কাজ করছেন। ওয়াসার পানি নিষ্কাশনের এ স্যুয়ারেজটি রাজধানীর বেগুনবাড়ি থেকে গোপীবাগ এসে মিশেছে। এ দুর্ঘটনার আগেরদিন শনিবার সাঁকো ভেঙে গেছে জানিয়ে মেরামত করতে বলায় ম্যানেজার নাজমা ও তার ছেলে আল আমিন হৃদয়ের মা ও নানিকে মারধর করে।
এ ঘটনায় এলাকাবাসীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সাথী বলেন, হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে আসার সময় সে খালে পড়ে যায়। এ সময় আমি প্রথমে আব্বা এবং পরে মাকে ডাকি। তার ডাকে বাবা কামাল হোসেন ও মা রোজিনা এসে একমাত্র ছেলেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। এ সময় হৃদয়কে বাঁচানের জন্য চিৎকার করে স্থানীয় মানুষের সহযোগিতা চান তার মা রোজিনা। কিন্তু বেশিরভাগই দর্শকের ভূমিকায় থেকে দেখেছে পুরো ঘটনা। শুনেছে বাবা কামাল হোসেন ও মা রোজিনা বেগমের আর্তনাদ। স্থানীয়দের ভাষ্য, হৃদয়কে বাঁচাতে তারা চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বাঁচানো যায়নি।
হৃদয়দের ভাড়া বাড়ির সামনে অবস্থিত একটি মুদি দোকানের মালিক মোস্তফা যুগান্তরকে বলেন, তখন পানিতে নামতে চেয়েও পারিনি। ওই দিন ব্যাপক বৃষ্টি হয়, যার কারণে অন্যদিনের তুলনায় খালের পানির স্রোত বেশি ছিল। আমার মনে হয়, হৃদয় অনেক দূরে ভেসে গেছে। স্থানীয় গোলাম রাব্বানি বলেন, চিৎকার শুনে আমিও ঘটনাস্থলে এসেছিলাম, কিন্তু সাঁতার না জানায় পানিতে নামতে পারিনি। জানা গেছে, রাজধানীর মুগদা থানার মান্ডা সুখনগর এলাকার ১৩৬নং বাড়ির মূল মালিক লতিফুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। তিনি বাড়িতে থাকেন না। ওই বাড়ির ম্যানেজারের দায়িত্বে রয়েছেন আরেক ভাড়াটিয়া নাজমা। সাঁকোর এ দশা কেনো জানতে চাইলে ম্যানেজার নাজমা নিজেকে অসুস্থ দাবি করে বলেন, সাঁকো এ রকম ছিল না, অতিরিক্ত মানুষ হাঁটাহাঁটি করায় এ অবস্থা হয়েছে।
নিখোঁজ হৃদয়ের মা রোজিনা বেগম মঙ্গলবার দুপুরে বলেন, শনিবার সাঁকো ভেঙে গেছে জানিয়ে ম্যানেজারকে মেরামত করতে বলায় তারা টাকা দিতে দেরি হওয়ার কথা বলে ম্যানেজার নাজমা ও তার ছেলে আল আমিন আমাকে এবং আমার মাকে মারধর করে। খালের ওপর নির্মিত টিনের ছাউনির একটি বাড়িতে থাকে হৃদয়দের পরিবারসহ আরও তিনটি পরিবার। সোমবার রাতে ভাঙা সাঁকো পার হয়ে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে হৃদয়দের বসতঘর। একটি ভাঙা খাটে থাকত হৃদয়দের ৫ সদ্যসের পরিবার। পাশের কক্ষের বাসিন্দা দুই সন্তানের জননী সাথী বলেন, হৃদয় পানিতে পড়ে যাওয়ার পর তার বাবা-মা অনেক চেষ্টা করেছে তাকে উদ্ধারের। কিন্তু পারেনি। সন্তানকে না পেয়ে হৃদয়ের মা কক্ষে এসে দরজা আটকে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল। আমরা দরজা ভেঙে তাকে বাঁচাই। তিনি জানান, দুই মাস আগে ১৮শ’ টাকা মাসে ভাড়ায় এ কক্ষে ওঠে তারা। হৃদয়ের বাবা অধিকাংশ সময় এ খালে মাছ ধরত।

Advertisement
Advertisement

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here