স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আজ মিয়ানমার সফরে যাচ্ছেন

0
867

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আজ তিন দিনের সফরে মিয়ানমার যাচ্ছেন। ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সফরকালে তিনি মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠক করবেন। এ ছাড়া দু’দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকেও যোগ দেবেন। নিরাপত্তা নিয়ে মিয়ানমারের উদ্বেগ নিরসনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ সফর হলেও রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও তিনি দেশটির বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে।সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরকালে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ‘বর্ডার লিয়াজোঁ অফিস’ স্থাপন সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হবে। এর আওতায় সীমান্তের দুই দিকে নিজ নিজ দেশের সীমান্তরক্ষীদের লিয়াজোঁ অফিস থাকবে। সীমান্তে কোনো সমস্যা দেখা দিলে দুই লিয়াজোঁ অফিস পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে তা নিরসনের চেষ্টা করবে। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরকালে দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত নিরাপত্তা সংলাপ করার লক্ষ্যে পৃথক একটি এমওইউ সই করার চেষ্টা করা হবে। প্রতি বছর এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। এক বছর বাংলাদেশে, পরের বছর মিয়ানমারের রাজধানীতে সংলাপ হবে। নিরাপত্তাসংক্রান্ত সমস্যাদি পর্যালোচনা করাই এ সংলাপের লক্ষ্য। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে তীব্র আস্থার সংকট রয়েছে। এ অবিশ্বাস দূর করতে বাংলাদেশ এমন উদ্যোগ নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে। বাংলাদেশ মনে করে, আস্থার সংকট দূর হলে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের পথ উন্মুক্ত হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরকালে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হতে পারে। যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের মাধ্যমে যাচাই করে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার আগেই রাজি হয়েছে। সূত্রটি আরও জানায়, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর পদ্ধতি নিয়ে বাংলাদেশ একটি খসড়া চুক্তি মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করেছে। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের অন্তর্ভুক্তি চায় বাংলাদেশ। তবে মিয়ানমার চায় আন্তর্জাতিক উপস্থিতি ছাড়াই পুরোপুরি দ্বিপক্ষীয় প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন। এ মতপার্থক্য দূর করা নিয়েও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে আলোচনা হতে পারে। প্রায় তিন মাস আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মিয়ানমার সফরের দিনক্ষণ ঠিক হলেও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশসহ নানা কারণে তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সফরের শেষ দিন অং সান সু চির সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের কথা রয়েছে। এ সময় মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে দ্রুত ফেরত নেয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া এসব রোহিঙ্গার কারণে বাংলাদেশে কী ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তাও তুলে ধরা হবে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে। বাংলাদেশ যে পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে চলতে চায় সে বার্তাও দেয়া হবে। সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দলে রয়েছেন আইজিপি একেএম শহীদুল হক, স্বরাষ্ট্রসচিব (জননিরাপত্তা বিভাগ) মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, সচিব (সুরক্ষা সেবা বিভাগ) ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন, কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক) শামছুর রহমান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একান্ত সচিব হারুনুর রশীদ বিশ্বাস, উপসচিব আবু হেনা মোস্তফা জামান এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু। এদিকে সম্প্রতি সচিবালয়ে এক বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মিয়ানমার সফরকালে দেশটির আরাকান রাজ্য (রোহিঙ্গাদের আবাসস্থল) পরিদর্শনের আগ্রহ প্রকাশ করেন। তবে প্রতিনিধি দলের সফরসূচিতে বিষয়টি উল্লেখ নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমার যাওয়ার পর এ ব্যাপারে তার আগ্রহের কথা জানাবেন বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

Advertisement
Advertisement

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here