আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ মাত্র পনের মিনিটের বৈঠক। এর মধ্যেই পোপ ফ্রাঁসিসকে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং জানিয়ে দিলেন, বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে কোনো ধর্মীয় বৈষম্য নেই। সেনাবাহিনীতেও তা নেই। সেনারা দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় কাজ করে। মিয়ানমারের মাটিতে পা রাখার পর সোমবারই দেশটির সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন পোপ। আজ মঙ্গলবার তার বৈঠক করার কথা রয়েছে স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি সহ রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক নেতাদের সঙ্গে।
এ খবর দিয়েছে অনলাইন আইরিশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট। এতে বলা হয়, পোপের এ সফরকে মূলত মিয়ানমারে সংখ্যালঘু ক্যাথোলিক খ্রিস্টানদের অবস্থার উন্নতির জন্য ভাবা হয়। কিন্তু মানবাধিকার বিষয়ক কর্মীরা প্রত্যাশা করছেন, তিনি অং সান সুচির সরকারের ওপর কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবেন। বিশেষ করে রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নৃশংস নির্যাতনের বিরুদ্ধে। এ জন্য বিশ্ববাসীর চোখ এখন পোপের দিকে। তিনি সেনাবাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে সরকার গঠন করা সুচিকে কতটা চাপে ফেলতে পারেন, নাকি হিতে বিপরীত হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়। সোমবারের বৈঠক নিয়ে ভ্যাটিকানের মুখপাত্র গ্রেগ বারকি বলেছেন, পোপ ও সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং গণতান্ত্রিক এই পটপরিবর্তনের সময় তাদের মহান দায়িত্বশীলতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ সময় সেনাপ্রধান হ্লাইংকে তার সফর উপলক্ষে স্বারক পদক উপহার দেন। অন্যদিকে পোপকে সেনাপ্রধান হ্লাইং উপহার দেন নৌকার আকৃতির একটি বাদ্যযন্ত্র, চাল রাখার অলংকৃত বোল বা গামলা। এরপর সেনাপ্রধান তার ফেসবুকের পোস্টে বলেন, মিয়ানমারে কোনো ধর্মীয় বৈষম্য নেই। এখানে উল্লেখ্য, ২৫ শে আগস্ট নৃশংসতা শুরু হওয়ার পর রাখাইনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালায় সেনাবাহিনী। তারা গণধর্ষণ, হত্যাযজ্ঞ, অগ্নিসংযোগ সহ সব রকম ঘৃণ্য অপরাধ করেছে। এর ফলে জীবন বাঁচাতে কমপক্ষে ৬ লাখ ২৪ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এখানে আরো উল্লেখ করা যেতে পারে, সারাবিশ্ব যখন রাখাইনে রোহিঙ্গা জাতি নিধন নিয়ে ক্ষুব্ধ তখন এটাকে গণহত্যা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে একটি সাক্ষাতকার দিয়েছেন সম্প্রতি মিয়ানমারের কট্টরপন্থি বৌদ্ধ ভিক্ষু থা পারকা। তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় (রোহিঙ্গা ইস্যুতে) যা বলছে পরিস্থিতি আসলে তা নয়। এটা মোটেও কোনো গণহত্যা নয়। এমন মন্তব্য করেছেন ইয়াঙ্গুনের ডাম্মারইয়োন মনাস্টেরি’র ভিক্ষু থা পারকা (৪৬)। তিনি সেখানে শতাধিক ভিক্ষুর নেতৃত্ব দেন। তিনি বলেছেন, মিয়ানমারের প্রধান হুমকি কি? তা হলো ইসলাম। মিয়ানমারে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের জাতীয় পর্যায়ের গ্রুপ মা বা থা অর্থাত দ্য এসোসিয়েশন ফর দ্য প্রটেকশন অব রেস অ্যান্ড রিলিজিয়ন-এর ভিক্ষুদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন। কিন্তু জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সহ সব পর্যবেক্ষক বলছে, রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নৃশংস নির্যাতন করা হয়েছে। নির্বিচারে তাদের ওপর বর্ণবাদী, ধর্মীয় আগ্রাসন চালানো হয়েছে। কিন্তু সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং তা বেমালুম এড়িয়ে গেলেন পোপের সঙ্গে বৈঠকে। সাফ জানিয়ে দিলেন মিয়ানমারে কোনো ধর্মীয় বৈষম্য নেই। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বরাবরই তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। এক সপ্তাহের সফরে পোপ ফ্রাঁসিস মিয়ানমারে পৌঁছেছেন সোমবার। সেখান থেকে তিনি আসবেন ঢাকা। এখানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তিনি প্রার্থনা সভা করবেন। তাতে ৮০ হাজার মানুষের যোগ দেয়ার কথা রয়েছে।