১৮৬ দেশের ২৫ হাজার তরুণের মাথা ব্যথার কারণ দুর্নীতি

0
942

অপরাধ বিচিত্রা ঃ
বলা হয়, তরুণেরা একটি রাষ্ট্রের শক্তি। দেশের প্রয়োজনে কঠিন অনেক কাজও করে ফেলে তারা। তবে এই তরুণেরা আসলে নিজেদের কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ভাবে? অধিকাংশ তরুণ মনে করে, বৈশ্বিক সিদ্ধান্তে তাদের মতামত নেওয়া হয় না। এটাও সত্য যে ৩০ বছরের কম বয়সী এমন অর্ধেক জনগোষ্ঠী গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে তাদের শক্ত অবস্থান তুলে ধরতে পারে না। বিশ্বের ১৮৬টি দেশের ২৫ হাজার তরুণের ওপর একটি জরিপ করেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ)। জরিপে অংশগ্রহণকারী তরুণদের বয়স ছিল ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। ‘গ্লোবাল শেপারস অ্যানুয়াল সার্ভে-২০১৭’ শীর্ষক ওই জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, বিশ্বের ৫৫ দশমিক ৯ শতাংশ তরুণ মনে করে, কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের মতামত নেওয়া হয় না গ্লোবাল শেপারস অ্যানুয়াল সার্ভে হলো এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে আজকের বিশ্ব নিয়ে তরুণেরা তাদের উদ্বেগের কথা প্রকাশ করতে পারে। নানা পদক্ষেপ গ্রহণে বিশ্বে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। এটি তরুণদের ওপর করা বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ জরিপ। কী ভাবে তরুণেরা বিশ্বকে ও বিশ্বের নানা চ্যালেঞ্জ পর্যবেক্ষণ করে, সেই সম্পর্কে মতামত নেওয়া হয় এ জরিপে। এবারের জরিপটিতে পাঁচটি উল্লেখযোগ্য বিষয় উঠে এসেছে, যা তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে নতুন তথ্য দেয়।
১. কী নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভাবছে তরুণেরা…
বিশ্বকে নাড়িয়ে দিচ্ছে এমন বিষয়ের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সবচেয়ে উদ্বিগ্ন তরুণেরা। তারা সবচেয়ে প্রধান্য দিচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও পরিবেশ ধ্বংস নিয়ে। পরপর তিন বছর জরিপে তরুণদের মূল ভাবনা উঠে এসেছে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে। তরুণেরা মনে করে না, প্যারিস চুক্তি দিয়ে এই সমস্যার মোকাবিলা করা সম্ভব। প্যারিস চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৮৭টি দেশ মিলে অঙ্গীকার করেছিল, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মাত্রা তারা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম রাখবে। এমনকি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি নামিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে এমন অঙ্গীকারও করে দেশগুলো। জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়া বৈশ্বিক অস্থিতিশীলতা, যুদ্ধ, বৈষম্য নিয়ে চিন্তিত তরুণেরা। এ ছাড়া দারিদ্র্য, ধর্মযুদ্ধ এবং সরকারের দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতার বিষয়গুলোও তাদের উদ্বিগ্ন করে। জরিপে তরুণদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কোন বিষয়টি বর্তমান বিশ্বকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করছে। জবাবে ৪৮ দশমিক ৮ শতাংশ তরুণ জানিয়েছে, বিশ্বের ওপর জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ ধ্বংসের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে। ৩৮ দশমিক ৯ শতাংশ তরুণ দায়ী করেছে বড় দন্ড ও যুদ্ধকে এবং ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ তরুণ মনে করে, বিশ্বজুড়ে যে আয় বৈষম্য চলছে, তা নিয়ে এখনই ভাববার সময় এসেছে। জরিপে অংশ নেওয়া তরুণদের প্রশ্ন করা হয়েছিল, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য মানুষ দায়ী এর বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি আছে কি? এই প্রশ্নের সঙ্গে দৃঢ় সহমত পোষণ করে ৬৯ দশমিক ৬ শতাংশ তরুণ, আর সহমত পোষণ করে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ। তবে এ বিষয়ে ৬ দশমিক ১ শতাংশ তরুণ কোনো মতামত দেয়নি।
২. গণমাধ্যম, বড় ব্যবসা ও সরকারের প্রতি কি তরুণদের অবিশ্বাস?
সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার কারণে গণমাধ্যমের প্রতি তরুণদের আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে বলে জরিপের ফলাফলে তথ্য উঠে এসেছে। গত বছর মার্কিন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গণমাধ্যমের ভুয়া সংবাদসহ নানা কারণে গণমাধ্যমের ওপর থেকে আস্থা হারিয়েছে তরুণেরা। মাত্র ৩০ শতাংশ তরুণ গণমাধ্যমের ওপর আস্থা রাখে আর গণমাধ্যমকে বিশ্বাস করে না প্রায় ৪৬ শতাংশ তরুণ। একই অবস্থা সরকার, বড় ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও। অর্থাৎ তরুণদের মাথাব্যথার বড় কারণ দুর্নীতি। দুর্নীতির কারণেই সরকার, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা হারাচ্ছে তরুণেরা। গণমাধ্যম, সরকার, বড় ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর যখন তরুণদের আস্থা কম, তখন তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কোন সংস্থাগুলোকে বিশ্বাস করে তারা? উত্তরে জরিপে অংশগ্রহণকারী তরুণেরা জানায়, স্কুল, আন্তর্জাতিক সংস্থা, কর্মজীবী মানুষ ও শ্রম আইনের প্রতি তাদের আস্থা রয়েছে।
৩. অলসতা নয়, আছে কাজে প্রীতি
একটা ভুল ধারণা আছে যে তরুণ সমাজ কর্মবিমুখ। অথচ জরিপের তথ্য বলছে, তরুণ সমাজ খুবই ক্যারিয়ার সচেতন। মাত্র ১৬ শতাংশ তরুণ জীবন উপভোগের জন্য ক্যারিয়ার বিসর্জন দিতে পারে। তাই বলা যেতে পারে, মোটেও আলসে নয় তরুণেরা। ৮১ দশমিক ১ শতাংশ তরুণ উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য বিদেশে পাড়ি দিতে ইচ্ছুক। কাজের সুযোগের জন্য তাদের প্রথম পছন্দ যুক্তরাষ্ট্র। এরপরেই আছে কানাডা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়া।
৪. প্রযুক্তি নিয়ে আশাবাদী
গত কয়েক দশকে প্রযুক্তির উন্নয়ন এখন এমন প্রশ্ন তুলছে যে মানুষের চেয়ে যন্ত্র দিয়ে কাজ করালে তাতে অনেক বেশি এগিয়ে যাওয়া যাবে। তবে প্রযুক্তির এই উন্নয়নকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে না তরুণ সমাজ। তরুণেরা বিশ্বাস করে, প্রযুক্তি নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করে, কোনোভাবেই উপায় কমিয়ে দেয় না। আর প্রযুক্তিতে অভ্যস্ত হতে সবচেয়ে উপযোগী বিষয় হলো শিক্ষা। মাত্র ৩ দশমিক ১ শতাংশ তরুণ মনে করে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে রোবটের সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২৮ শতাংশ তরুণ মনে করে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভবিষ্যতে অনেক বড় প্রভাব ফেলবে।
৫. তারা অন্যদের বিষয়ে ভাবে
জরিপে তথ্য বলছে, এখনকার তরুণ সমাজ একটি সহানুভূতিশীল প্রজন্ম। ৭৩ দশমিক ৬ শতাংশ তরুণ তাদের নিজের দেশে শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে প্রস্তুত। আর এটিই এই জরিপের সবচেয়ে সংবেদনশীল একটি অংশ। দেখা গেছে, অন্যদের বিষয়ে খুবই সহানুভূতিশীল তরুণ সমাজ। তরুণদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কী ভাবে সরকার বিশ্বব্যাপী উদ্বান্ত সংকটের প্রতি সাড়া দিতে পারে? জবাবে ৫৫ দশমিক ৪ শতাংশ তরুণ বলেছে, শরণার্থীদের জাতীয় কর্মীর সংখ্যায় যুক্ত করা উচিত। মাত্র সাড়ে ৩ শতাংশ মনে করে, শরণার্থীদের নিজ দেশে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। বর্তমান বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা ও আন্দোলনে সাড়ে ৮৬ শতাংশ তরুণ নিজেদের কেবল ‘মানুষ’ বলে মনে করে।

Advertisement
Advertisement

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here