‘আরো বিনিয়োগ বান্ধব হবে সোনালী ব্যাংক’ …….ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ, এমডি, সোনালী ব্যাংক লিঃ

0
1860

অপরাধ বিচিত্রাঃ ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ। কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে গত ২৪ আগস্ট প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে যোগ দিয়েছেন সোনালী ব্যাংকে। সম্প্রতি অপরাধ বিচিত্রা সঙ্গে কথা বলেছেন দেশের ব্যাংকিং খাতসহ সোনালী ব্যাংকের নানা বিষয় নিয়ে।
অপরাধ বিচিত্রা ঃ ব্যাংকিং খাতে সোনালী ব্যাংকের অবস্থানকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ ঃ ব্যাংকিং খাতের বিভিন্ন সূচকে এখনো শীর্ষে অবস্থান করছে সোনালী ব্যাংক। আমানত সংগ্রহ, শাখা বিস্তার, বিনিয়োগ, ঋণ প্রদানসহ নানা সূচকে উন্নয়নের ধারা বজায় রেখে তা আরো উন্নত করাই আমার প্রধান লক্ষ্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, গত এপ্রিলে ব্যাংকিং খাতে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ১৮ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা। এর ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ আমানত রয়েছে সোনালী ব্যাংকে। আগস্টের শেষ নাগাদ আমাদের আমানত ছাড়িয়েছে ৯৭ হাজার কোটি টাকা। সারা দেশে বিভিন্ন ব্যাংকের নয় হাজারের মতো শাখা আছে, যার মধ্যে সোনালী ব্যাংকের শাখাই ১ হাজার ২০৮টি। আমাদের বিনিয়োগ আছে ৯৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ হিসেবে ও ৫৮ হাজার কোটি টাকা সরাসরি বিনিয়োগ। নানা খাতে এ বিনিয়োগ আরো বাড়াতে হবে। কেননা অর্থনীতি শক্তিশালী করতে এখন বিনিয়োগের বিকল্প নেই। সোনালী ব্যাংককে বিনিয়োগবান্ধব করার মাধ্যমে অর্থনীতির ভিত মজবুত করতে চাই। বড় ব্যাংকের কাছে মানুষের প্রত্যাশা থাকে বেশি।
অপরাধ বিচিত্রা ঃ প্রত্যাশার এ চাপ কীভাবে সামলাবেন?
ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ ঃ বড় ব্যাংক হওয়ার সুবিধা যেমন আছে, তেমনি অসুবিধাও আছে। এটা সত্যি যে, বড় ব্যাংক ঘিরে সব ধরনের মানুষের প্রত্যাশা থাকে সবচেয়ে বেশি। তবে সেটিকে আমি ইতিবাচকভাবেই নিতে চাই। এ ধরনের প্রত্যাশা আমার কাজকে আরো বেগবান করবে। এজন্য প্রথমে আমি ব্যাংকের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে জেনে একটি মূল্যায়ন ও পরিকল্পনা করব। কেননা এ ব্যাংকের ছায়াতলে ভালো, মন্দ, সুবিধাবাদী ও শুভাকাঙ্ক্ষী সব ধরনের মানুষই রয়েছে। ব্যাংকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া হবে আমার  নৈতিক দায়িত্ব। তবে সিইও ও এমডি বলেই যে ব্যাংকের গতিপ্রকৃতি পরিবর্তন করে উন্নতি করতে পারব, বিষয়টি এমন নয়। এটা যেহেতু একটি বড় প্রতিষ্ঠান, তাই অত্যন্ত সুচিন্তিভাবে ও ধীর পদক্ষেপে এগোতে হবে। যেখানে স্বল্প সময়ে গতি বাড়ানো প্রয়োজন, সেখানে দ্রুত সময়ে কাজ করতে চাই। কাজটি করতে আমার জনবলকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে চাই। দক্ষ ও প্রশিক্ষিত বিশাল কর্মীবাহিনী সোনালী ব্যাংকের জন্য বাড়তি সুবিধা। এখন খেলাপি ঋণ কমিয়ে যত দ্রুত সম্ভব ব্যাংকটিকে বিনিয়োগবান্ধব করাই আমার প্রধান কাজ।
অপরাধ বিচিত্রা ঃ দুর্বলতাগুলো কীভাবে কাটিয়ে উঠবেন?
ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ ঃ কয়েক বছর ধরেই হল-মার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপের সমস্যাগুলো পর্যবেক্ষণ করেছি। এ থেকে উত্তরণের একটি স্বচ্ছ ধারণাও আমার হয়েছে। এজন্য ব্যাংকে যোগদানের পর পরই সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। ব্যাংকটিতে কী ধরনের দুর্বলতা রয়েছে, সেগুলো বাছাই করা হয়েছে। শুধু দুর্বলতাই নয়, আমাদের অনেক সক্ষমতা ও সম্ভাবনাও রয়েছে।  সেগুলো বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হবে। এ দুটি ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের সহযোগিতা প্রয়োজন। খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে অসতর্কভাবে শুধু সংখ্যাটা উল্লেখ করলেও সঠিক মাত্রায় পরিমাপ করা যায় না। সব খোলপি ঋণ একজাতীয় নয়। খেলাপি ঋণকে  শ্রেণীবিন্যাস করতে হবে এবং নির্ধারণ করতে হবে, কী কারণে ঋণগুলো খেলাপি হয়েছে। যেমন কোনো ঋণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ব্যবসায়িক শত্রুতা কিংবা ব্যবসায়িক ক্ষতি ইত্যাদির কারণে খেলাপি হয়। আমার কাছে খেলাপি ঋণের রিপোর্ট আছে এবং এগুলো শ্রেণীবিন্যাস ও পুনর্বিন্যাস করে খেলাপি কমানো হবে।
অপরাধ বিচিত্রা ঃ অভ্যন্তরীণ সম্পদ ব্যবস্থাপনায় কী পদক্ষেপ   নেবেন?
ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ ঃ সোনালী ব্যাংকে এখনো বেশকিছু অর্থ রয়েছে, যা বিনিয়োগ করা সম্ভব। অর্থ যত বিনিয়োগ করা হবে, ব্যাংকের সক্ষমতা ও স্বচ্ছতাও তত বাড়বে। এজন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সব শাখা ব্যবস্থাপকদের এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ পাঠানো হবে। কেননা সোনালী ব্যাংকের ৫-১০ শতাংশ শাখার মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে  মোট ঋণের ৮০ শতাংশ। বাকি শাখাগুলোর মাধ্যমে বিতরণ হচ্ছে মোট ঋণের মাত্র ২০ শতাংশ। হল-মার্ক দুর্ঘটনার সব দায় সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ওপর চাপানো হয়েছে। বিষয়টি মোটেও এ রকম নয়। এ ধরনের দুর্ঘটনা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা মতামত দিলে তা ব্যাংকের জন্য ভালো হতো। ঋণের একটি প্রক্রিয়া আছে। ঋণ মঞ্জুরের জন্য একটি সিলেকশন বোর্ডও আছে। আমি সিলেকশন বোর্ডের মতামত অনুযায়ী ঋণ প্রদান করতে চাই। প্রথমে শক্তি, সুযোগ, দুর্বলতা ও হুমকি বিবেচনায় নিয়ে এবং সার্বিক বিষয় বিশ্লেষন করে লক্ষ্য ও  কৌশল নির্ধারণ করতে চাই।
অপরাধ বিচিত্রা ঃ কৃষিঋণ বিতরণ ও রেমিট্যান্স আহরণে ব্যাংকের পরিকল্পনা কী?
ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ ঃ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার দ্বিতীয় বৃহত্তম উত্স প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ১ হাজার ৮৯৮ কোটি ডলার। রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষ ১০ ব্যাংকের মধ্যে প্রথম কাতারে রয়েছে সোনালী ব্যাংক। ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংকটিতে রেমিট্যান্স এসেছে ১৭৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার, যা মোট রেমিট্যান্সের প্রায় ১০ শতাংশ। ফলে প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ দেশে থাকা স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে  সোনালী ব্যাংক আস্থার সঙ্গে কাজ করবে। অন্যদিকে গত বছরে ১৭ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করেছে দেশের সমগ্র ব্যাংকিং খাত। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংক বিতরণ করেছে ১ হাজার ১৩০ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ৭ শতাংশ। এটিকে আমরা আরো বাড়ানোর চেষ্টা করছি। কেননা কৃষির উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নির্ভর করছে। কৃষিঋণ বহুমুখী করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে।
অপরাধ বিচিত্রা ঃ ব্যাংকের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা কীভাবে উন্নত করবেন?
ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ ঃ কর্মীদের মধ্যে সমন্বয় ও তাদের উদ্দীপনা ধরে রাখা ছাড়া  কোনোভাবেই ব্যাংককে এগিয়ে নেয়া সম্ভব না। দেশের সর্ববৃহত্ ব্যাংক হিসেবে প্রায় ২৩ হাজার প্রশিক্ষিত ও দক্ষ কর্মকর্তা রয়েছেন সোনালী ব্যাংকে। আমার অন্যতম প্রধান কাজ হবে প্রত্যক কর্মীর কাছ থেকে সেরাটা বের করে আনা। এজন্য আমি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন বিষয়ে অনুপ্রাণিত করার পদক্ষেপ  নেব। ‘এ  দেশ  যেমন আমার, ব্যাংকটিও আমার কর্মীরা এটা অনুধাবন করলে লক্ষ্য অর্জন সহজ হবে। এজন্য প্রত্যেকের কাজের মূল্যায়ন করে পদোন্নতি ও পুরস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অন্যদিকে কেউ অসদুপায় অবলম্বন কিংবা সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ না করলে তাদের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অপরাধ বিচিত্রা ঃ আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ ঃ আপনাকেও ধন্যবাদ।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

sixteen − two =