ওরা কোথায় যাবে?

0
577
বিভাজিত হয়ে পড়েছে চলচ্চিত্রপাড়া। রাজনীতির ময়দানের মতো এফডসিতিও এখন চলছে দলাদলি। এই দলাদলির বাইরে থেকেই অনেক শিল্পী নিয়মিত শুটিং করে যাচ্ছেন। পরিবার বা ফোরাম কোথাও ভিড়ছেন না তারা। গ্রুপের বাইরে থাকা সেসব নিরপেক্ষ শিল্পী কী ভাবছেন এই গ্রুপিং নিয়ে? কিংবা মানসিকভাবে তারা আসলে কোন নৌকায় পা রাখছেন? এসব বিষয়ই তুলে ধরা হয়েছে এ প্রতিবেদনে। বিস্তারিত লিখেছেন অনিন্দ্য মামুন

ঢাকাই ছবির সূতিকাগার এফডিসি। এই এফডিসিতে বিভিন্ন সময় নিজেদের মধ্যে মনোমালিন্য থাকলেও কখনও ছিল না দলাদলি। কেনই বা থাকবে? শিল্পীরা সব শ্রেণীর, মানুষের শিল্পী। মানুষকে বিনোদিত করাই তাদের কাজ। দলাদলির বিষয়টি কয়েক বছর আগেও শিল্পীদের বেলায় দেখা যায়নি; যা দেখা যাচ্ছে বিগত কয়েক বছর ধরে। বিশেষ করে ২০১৭ সালে এসে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সিনেমার কলাকুশলী নিয়ে এফডিসিতে রয়েছে একাধিক সংগঠন। এ সংগঠনের অধীনেই শিল্পীদের নিষেধাজ্ঞা, বয়কট সংস্কৃতি এখন এফডিসিতে বিদ্যমান। বিশেষ করে শিল্পী সমিতি ও পরিচালক সমিতির ক্ষেত্রেই এটি চোখে পড়ছে বেশি। এর মধ্যে এফডিসির সব সংগঠন মিলে গঠিত হয়েছে ‘চলচ্চিত্র পরিবার’। বলা হয়ে থাকে চলচ্চিত্রের উন্নয়নেই এ পরিবার গঠিত। যদিও বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আন্দোলন আর মিটিং ছাড়া চলচ্চিত্রের উন্নয়নে অদৌ কূটনৈতিক কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি তাদের। পরিবার গঠনের আগে বা পরে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ঠেকানোর কথা বলে চলচ্চিত্রের বিশেষ কিছু মানুষের পেছনে নিষেধাজ্ঞা ও বয়কট করার কারণেই পরিবার থেকে আলাদা হয়ে পড়েন একদল শিল্পী। দলাদলিটা এরপর থেকেই চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে। শাকিব খানকে বয়কট, পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন কর্তৃক নায়করাজ রাজ্জাককে নিয়ে মানহানি কথা বলার প্রতিবাদ করায় পরিচালক গাজী মাহবুবকে বহিষ্কার, শাকিব খানের সঙ্গে কাজ করার কারণে নির্মাতা শামিম আহমেদ রনিকে বহিষ্কার ও একই কারণে মৌসুমী, ওমর সানিসহ বেশ কয়েকজন শিল্পীকে শিল্পী সমিতি কর্তৃক শোকজ দেয়া, চলচ্চিত্র পরিবারের আন্দোলনের সময় প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার নওশা দের ওপর হামলাসহ বিভিন্ন কারণে বেশকিছু শিল্পী, নির্মাতা, প্রযোজক ও কলাকুশলী নিয়ে ঢাকাই চলচ্চিত্রের উন্নয়নই মূলমন্ত্র- স্লোগানকে লক্ষ্য বানিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে নতুন সংগঠন ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ফোরাম’। যদিও বলা হচ্ছে এটি আসলে চলচ্চিত্রের সার্বজনীন সংগঠন; কিন্তু না। এটি যে চলচ্চিত্র পরিবারের বাইরের সদস্যদের নিয়ে গঠিত এটার আন্দাজ করতে খুব বেশি পাণ্ডিত্যের প্রয়োজন পড়ে না। এখন কথা হচ্ছে, পরিবার কিংবা ফোরামের প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা ছাড়াও অনেক শিল্পী-কলাকুশলী রয়েছেন যারা মূলত দুটির কোনোটিতেই নেই। এসবের বাইরে থাকা সেসব শিল্পীর চিন্তাভাবনা কী? সংগঠন নিয়েই বা কী ভাবছেন তারা? কাজের ক্ষেত্রেই তারা কতটা সমর্থন পাবেন দুই দলের? কিংবা সগঠনগুলোকে কীভাবে নিচ্ছেন তারা? এমন প্রশ্ন রাখা হয়েছিল প্রবীণ অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের কাছে। তিনি বলেন, ‘আমি এখন সবার মুরব্বি। সবার সঙ্গেই আছি। আবার কারও সঙ্গে নেই। ক’দিন আগে চলচ্চিত্র ফোরামের আত্মপ্রকাশের দিন আমাকে দাওয়াত করা হয়েছে। তারা আমাকে মুরব্বি হিসেবে নিয়ে আসছে। আমি আসছি। এরপর এফডিসিতে শুটিং করতে এলে শিল্পী সমিতির সেক্রেটারি জায়েদ খান আমাকে ধরে সমিতির অফিসে নিয়ে এসেছে। আমি আসছি। এখনও জানি না পরিবার কিংবা ফোরাম চলচ্চিত্রের উন্নয়নে কী কাজ করবে। আমাদের দলাদলির কী দরকার? শিল্পীদের দরকার শিল্প বিকাশ করা, দল নয়। এখন আমাদের প্রযোজক মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে সেদিকে কেউ খবর নিচ্ছে না। চলচ্চিত্রের নায়ক-নায়িকার বাইরেও পর্দার পেছনের কত মানুষ বেকার পড়ে আছে সে খবর কে রাখে। সারা বছর আমি এটিএমের খবরও তো কেউ রাখে না। তাই বলি এত পরিবার নয় কাজ করুন সবাই।’ ফোরাম এবং চলচ্চিত্র পরিবারের কোথাও দেখা যায়নি অভিনেতা আনিসুর রহমান মিলনকে। সাম্প্রতিক সংগঠন নিয়ে এ অভিনেতা বলেন, ‘ঢাকাই চলচ্চিত্রের উন্নয়নে যা কিছু হবে তার সঙ্গেই আমি আছি। যতদূর জানি ফোরাম এবং পরিবার দুটিই চলচ্চিত্রের উন্নয়নে কাজ করতে চায়। এটা তো আমাদের জন্য ভালো খবর। দুই গ্রুপই প্রতিযোগিতা করে কাজ করবে। বাংলা চলচ্চিত্রের আরও উন্নয়ন হবে।’ বিষয়টিকে এক ধরনের গোঁজামিলই লাগছে চিত্রনায়িকা আইরিনের কাছে। তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন শিল্পী। বিভাজন নয়, সবার সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে চাই। এখন দেখা গেল ফোরামের সদস্যদের সঙ্গে মিশলে পরিবারের সদস্যরা মাইন্ড করবেন, আবার পরিবারের সঙ্গে মিশলে ফোরামের লোকেরা দূরের লোক ভাববেন। একজন নতুন শিল্পী হিসেবে এ পরিস্থিতি নিয়ে বেশ চিন্তায় রয়েছি। জানি না কী হবে!’

চিত্রনায়ক নিরবকেও দেখা যায়নি কোনো সংগঠনেই। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সবার সঙ্গেই আছি। কারণ দুটি সংগঠনের নেতৃত্বে থাকা সবাই আমার কাছের বড় ভাই। তারা চাইছেন চলচ্চিত্রের উন্নয়ন। তাদের সবার সঙ্গেই একাত্মতা আমার। উভয় সংগঠনের পক্ষ থেকেই যদি ডাক আসে তা হলে শুটিংয়ের ব্যস্ততা না থাকলে যাওয়ার চেষ্টা থাকে।’ চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিও নেই কোনো সংগঠনে। তবে তিনিও জানিয়েছেন, দুই দলই তার। নিজের জায়গায় থেকে চলচ্চিত্রের উন্নয়নে বিশ্বাসী এ তারকা। দর্শকদের সিনেমার প্রতি আকৃষ্ট করাই তার লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন মাহি।

দুটি দল নিয়েই একই রকম মন্তব্য করেছেন চিত্রনায়ক বাপ্পি চৌধুরী, চিত্রনায়িকা পরীমনি, বিপাশা কবির, জলি, মিষ্টি জান্নাতসহ এসব দলের বাইরে থাকা আরও বেশ কয়েকজন শিল্পী ও কলাকুশলী। সবারই মন্তব্য, যারাই চলচ্চিত্রের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন তাদের সঙ্গেই নতুনদের সমর্থন থাকবে।

ফোরাম বা পরিবার গঠিত হওয়ার মধ্য দিয়ে রাজনীতির ময়দানের মতো চলচ্চিত্রপাড়াও শক্তিশালী দুটি দল গঠিত হয়েছে। চলচ্চিত্রের উন্নয়ন নাকি একে অপরের দিকে কাদা ছোড়াছুড়ি বা আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ করার জন্যই এ বিভক্তি? পরিণাম দেখতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

3 × five =